ইউক্রেন। গম উৎপাদেনের আঁতুড়ঘর। ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’। পৃথিবীর খাদ্যশস্যের গুদাম বললেও খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয় না। তবে কৃষিজপণ্যের যে তেজস্বিনীর জৌলুশে ইউরোপের এ উর্বর ভূখণ্ডকে সবাই একনামে চেনে তা হলো সূর্যমুখী ফুল।





বিশ্ববাজারে প্রতাপশালী রাজার আসনে বসে আছে শুধু এই সূর্যরানির দাপটেই। সূর্যমুখী চাষে অপ্রতিদ্ব›দ্বী নায়ক। ফি বছর প্রায় এক কোটি ৪২ লাখ টন সূর্যমুখী ফুলের বীজ রপ্তানি করে ইউক্রেন। পরের সারিতেই থাকে রাশিয়া। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস-যে মাটিতে সূর্যসন্তান, সেই আকাশেই আজ আকালের মেঘ! দিনিপ্রোর কাখোভখা বাঁধ ধ্বংসের স্রোতে ভেসে গেছে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি।

কৃষিবিদরা বলছেন, আগামী কয়েক বছর আর আবাদের আশা নেই এই অঞ্চলের খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দিনিপ্রোতেতোভস্কোর চাষিজমিতে। দুর্ভাগ্যের এ সীমানা এক দশক বা তার বেশিও হতে পারে।

কাখোভকা বাঁধের নিচে বহমান দিনিপ্রোর দুকূলজুড়ে ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আখড়া। অসংখ্য দ্বীপ, উপসাগর, তৃণভূমি, জলাভূমিবেষ্টিত অপরূপ লীলাভূমি। ২০১৫ সালেই স্থাপিত হয়েছিল ন্যাশনাল ন্যাচার পার্ক। আরও রয়েছে ব্ল্যাক সি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, আইভরি কোস্ট সভিয়াটোস্লাভ ন্যাশনাল পার্ক, নিঝনেদনিপ্রোভস্কি ন্যাচার পার্ক। বাঁধ ধ্বংসের ফলে সবকিছুই এখন পানির নিচে। ‘ফেয়ারি টেল ফরেস্ট’ চিড়িয়াখানার ৩০০টিরও বেশি প্রাণী পালাতে না পেরে মারা গেছে। হারানো উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কিনা শঙ্কায় আছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষি জমিতেও দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। ইতোমধ্যেই খেরসনের বা পাশের অঞ্চল বা দিনিপ্রো নদীর বাম তীর ঘেঁষা জমিগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খেরসনের ৯৪%, জাপোরিঝঝিয়ার ৭৪% এবং ৩০% দিনিপ্রোতেতোভস্ক অঞ্চলের জমির সেচ কাখোভকার ওপর নির্ভরশীল। বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় সেচ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা আবাদি জমিগুলো অনুর্বর করে দেবে। আবাদ করতে না পারলে আগামী বছরগুলোতে মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে এসব অঞ্চল। এতে করে প্রায় ৫০০,০০০ হেক্টরের বেশি জমি কৃষি কাজের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে। বাঁধ ধ্বংসের ফলে এখন দিনিপ্রো নদীর মিঠা পানি কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করবে। মিঠা প্রাণীর ব্যাপক প্রবাহে কৃষ্ণসাগরের প্রাণীকুলসহ অন্যান্য জৈবিক সম্পদের জীবন এখন হুমকির মুখে। জৈবিক সম্পদসহ মৎস্য শিল্পে প্রায় ১৪.৫ বিলিয়ন রিভনিয়া (১ ডলার=৩৬.৯২ রিভনিয়া। ১ রিভনিয়া=২.৯৩ টাকা) ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসে অঞ্চলটির পাওয়ার গ্রিডে প্রাথমিকভাবে কোনো প্রভাব না ফেললেও দীর্ঘমেয়াদে সৃষ্টি করবে নানা সমস্যা। দেশটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভারসাম্য ধরে রাখতে জলবিদ্যুৎ বাঁধটি ব্যবহার করা হতো। ইউক্রেনের জলবিদ্যুৎ ক্ষমতার (৭,৫৩০ মেগাওয়াট) অর্থাৎ ৫% আসত এখান থেকে। সুতরাং পরবর্তীতে এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বিস্ফোরণ ক্রিমিয়ায় পানি সরবরাহকে প্রভাবিত করবে। বিস্ফোরণে আরও প্রভাবিত হতে পারে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সবজি সংরক্ষণাগার ‘টাইম এলএলসি’। এটি ৫০,০০০ টন সবজি সংরক্ষণ করতে পারে। দিনিপ্রো নদীতে আগামী কয়েক বছরে শিপিং অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে নিকোপোল, কামিয়ানকা-দিনিপ্রোভস্কা এবং এনেরহোদার বন্দরগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিষেবার বাইরে থাকবে। ক্রিমিয়ার সাথে জাপোরিঝঝিয়া সংযোগকারী রেলপথও ধ্বংস হয়ে যাবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews