বাংলাদেশের কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমইএস) সহযোগিতা প্রদানে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ভিসা। এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে g½jevi ( ১০ ডিসেম্বর) ৩ বছর মেয়াদী এই অংশীদারিত্বের ঘোষণা দেয়া হয়।
অংশীদারিত্বের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সহযোগিতা করবে ভিসা ও এসএমই ফাউন্ডেশন। এক্ষেত্রে ভিসা’র আর্থিক ও ব্যবসায়িক দক্ষতা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ সামগ্রী ও উপকরণ ব্যবহার করা হবে। এসবের মধ্যে রয়েছে- আঞ্চলিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সেরা অনুশীলন ও উপকরণ বিনিময়, ই-কমার্স ও বৃহৎ বাজারে প্রবেশের সুযোগ, নিরাপদ অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম এবং ভিসা কমার্শিয়াল বা এসএমই পণ্য ও সমাধান নিশ্চিত করার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তার সুযোগ তৈরি।
একইসাথে, সরকারি প্রণোদনা বিতরণ, কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো ও সমন্বয় প্রচেষ্টা জোরদার করতে পাইলট প্রোগ্রাম ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করবে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ভিসা। নীতিনির্ধারণে সহায়তা করতে পেমেন্টস ইন্টেলিজেন্স সরবরাহ করবে ভিসা। এক্ষেত্রে, ভিসা গভর্নমেন্ট ইনসাইটস হাবের মতো টুলস ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি, এসএমই-সম্পর্কিত নানারকম সেবা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে এমএমই প্রোফাইল ডেটা কাজে লাগানো হবে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ভিসা বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ, ভিসা ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ এশিয়ার কমার্শিয়াল অ্যান্ড মানি মুভমেন্ট সল্যুশনের হেড শ্রুতি গুপ্ত, এসএমই ফাউন্ডেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জেনারেল ম্যানেজার ফারজানা খান সহ এসএমই ফাউন্ডেশন ও ভিসা’র অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে ভিসার সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। আধুনিক ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি প্রয়োগ করার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো, পরিচালনা খরচ কমানো ও এসএমইগুলোর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। পেমেন্ট ছাড়াও, ডিজিটাল যুগে প্রতিযোগিতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এসএমইগুলোর জন্য ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা (বিজনেস ইন্টেলিজেন্স), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ও শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করবো আমরা। এসএমই-এর উন্নয়নে আমাদের প্রতিশ্রুতি ও ভিসা’র বিশেষ দক্ষতার মাধ্যমে একটি স্মার্ট, নিরাপদ ও টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি আমরা; যেখানে আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোকে ক্রমশ পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারের উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”
ভিসা বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ বলেন, “দেশের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে অংশীদারিত্ব করতে পেরে আমরা আনন্দিত। বিগত কয়েক দশক ধরে ডিজিটাল রূপান্তরে সক্ষমতা দেখাচ্ছে ভিসা। এখন আমাদের বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞদের, উদ্যমী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পেরে আনন্দিত আমরা। আমাদের আর্থিক ও ডিজিটাল দক্ষতার প্রোগ্রামগুলো উদ্যোক্তাদের দ্রুত প্রযুক্তি গ্রহণ, বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে সক্ষম হবে।”
উল্লেখ্য, এসএমই খাত বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৩২ শতাংশ অবদান রাখছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক জরিপ অনুযায়ী, দেশে ৭৮ লাখেরও বেশি কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ রয়েছে, যা মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশেরও বেশি। শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশই এসএমই খাতে; এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং বিপুল জনগোষ্ঠী ও সীমিত সম্পদের এই দেশে কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এসএমই খাত। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ প্রধানত অধিক শ্রম ও কম পুঁজি-নির্ভর খাত। সংক্ষিপ্ত উৎপাদন সময়ের কারণে এই খাত জাতীয় আয় ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা উপকৃত হয়েছেন।