নয়া দিগন্ত ডেস্ক

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক খাগাড়াছড়ি জেলার দুই উপজেলা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে ফের অবৈধভাবে ৫০ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে পুশইনের ঘটনা ঘটেছে।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ও পানছড়ি সংবাদদাতা জানান, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ফের ২৬ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল সোমবার (২৬ মে) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং ডিপিপাড়া সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে (৭ জন পুরুষ,৭ জন নারী ও ৫টি শিশু) এবং পানছড়ির সীমান্ত ডাইন চন্দ্রপাড়া/ সীমানাপাড়া দিয়ে আরো ৭ জনকে পুশইন করা হয়।

পরে বিজিবি সদস্যরা তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় পুশইন হওয়া ১৯ জনকে বর্তমানে বিজিবির কৃষ্ণ দয়াল বিওপির আওতাধীন আচালং ডিপিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। আর পানছড়ি উপজেলার ৭ জন থানা পুলিশের কাছে আছে।

এসব ব্যক্তি নিজেদের বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা হিসেবে দাবি করেছেন। কাজের সন্ধানে ভারতের হরিয়ানা গিয়েছিলেন।

তারা জানান, ২০১২ সালে কাজের সন্ধানে ভারতের হরিয়ানা রাজ্য যান। সেখান থেকে তাদের আটক করে চোখ-হাত বেঁধে বিমানে ত্রিপুরায় নিয়ে আসে। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ১০৮ বিএসএফ কর্তৃক পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়ন সীমান্ত ডানচন্দ্রবাড়ি এলাকা দিয়ে ৭ জনকে ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং ডিপিপাড়া এলাকার সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে পুশইন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মঞ্জুরুল আলম ও পানছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জসিম উদ্দিন পুশইনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যাদের জোর করে পুশইন করা হয়েছে তারা বর্তমানে বিজিবি ও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ইউএনও মঞ্জুুরুল আলম জানান, আটক ব্যক্তিরা দাবি করেছেন তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পরিচয় নিশ্চিত হলে তাদের নিজ নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। অন্যথায় অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে চলতি মাসে দুই দফায় ৮৬ জনকে অনুপ্রবেশ করে বিএসএফ।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ১৯ জনকে পুশইন করেছে। তাদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। গতকাল দুপুরে কালেঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার জাকারিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গভীর রাতে কাঁটাতারের গেট খুলে বিএসএফ এই ১৯ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে। খবর পেয়ে ৫৫ বিজিবির সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান চুনারুঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম সেখানে উপস্থিত হন। এসব ব্যক্তি নিজেদের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন। তারা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ভারতের হরিয়ানাতে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে তাদের আটক করে বিমান ও ট্রেনে করে ত্রিপুরায় নিয়ে আসা হয়। পরে বিএসএফ মুখ বেঁধে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ ছাড়া, বিএসএফের এ ধরনের পুশইন কার্যক্রম আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন বলে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ৫৫ বিজিবির সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ১৯ জনকে জিডিমূলে চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ৫ বাংলাদেশী নারী-পুরুষকে পুশইন করেছে বিএসএফ। রোবববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় নিমতলা সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে পুশইন করা হয়। পরে দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রাম থেকে তাদেরকে আটক করে বিজিবি দর্শনা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

আটকরা হলেন- কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার সোনাইর খামার গ্রামে মৃত আবদুল্লাহ শেখের ছেলে হাসেন আলী (৫৭), হাসেন আলীর স্ত্রী হাছনা বেগম (৪৩), হাসেন আলীর ছেলে হান্নান মিয়া (১৬), মধ্য কুমরপুর গ্রামের দুলাল মিয়ার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪৬) ও রাঙা-কাজীপাড়া ভোগডাঙ্গা গ্রামের মৃত মাহাবুবুর রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান (৫১)।

৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় জানা গেছে, তারা সবাই দীর্ঘদিন আগে ভারতে গিয়েছিলেন। দেশে ফেরার পর বিজিবির হাতে আটক হন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews