জুলাই–আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে অধ্যাপক ও চিন্তক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই ভালো ছিলেন না, সেটা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু জেন-জি শেখ হাসিনার চেয়ে ভালো কি না, সেটা এখন পরীক্ষা দিতে হবে।’

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে ‘মনোজগতের উপনিবেশায়ন ও ভাষার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনায় সলিমুল্লাহ খান এ কথা বলেন।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানের মানেটা বুঝতে হবে। এই অভ্যুত্থান ইতিমধ্যে পরাজিত হয়েছে। এটা হচ্ছে আমাদের ট্র্যাজেডি। অনেকে মনে করতে পারেন, আমরা এই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্র্যাজেডি কাকে বলে? আপনি যদি ডান দিকের গাড়িকে বাঁচাতে চান, তবে বাঁ দিকের মানুষজনকে চাপা দিতে হবে। আবার বাঁ দিকে বাঁচাতে গেলে ডান দিকে চাপাতে হবে। যখন মানুষ এই দ্বিধার মধ্যে পড়ে, এটা অনেক প্রাচীন ধ্রুপদি সংজ্ঞা ট্র্যাজেডির—যখন দুই পরিণতির যেটাই বেছে নেন না কেন, আপনাকে দুঃখ করতে হবে।’

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও ইংরেজিকে গ্রহণ করব, নাকি বাংলা বাদ দিয়ে শুধু ইংরেজি ভাষাকে গ্রহণ করব—এই প্রশ্নের কোনো বাস্তব মীমাংসা হয়নি উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘অনেক দেশে—জাপান, চীন—এমনকি ভিয়েতনামের মতো দেশেও মাতৃভাষায় প্রাথমিক ও বনিয়াদি শিক্ষা বাধ্যতামূলক। তারা আধুনিক সাহিত্য বিজ্ঞান থেকে জ্ঞানের নানা শাখার সব বই তাদের ভাষায় অনুবাদ করেছে। একাধিক ভাষা শিখতে বাধা নেই, শিখতে হবেও। কিন্তু মাতৃভাষা ভালো করে না শিখলে ভালো অনুবাদও করা যায় না। আমাদের এখানে সে কারণে ভালো অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে না।’

সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, ‘ভাষার মধ্যে রাজনীতি আছে। ইংরেজরা তাদের বিভক্তির রাজনীতির মাধ্যমে উপমহাদেশে কেবল হিন্দু–মুসলিমের বিভেদের জন্ম দেয়নি, “বড়লোক” আর “ছোটলোক” হিসেবেও বিভক্তির সৃষ্টি করে গেছে। ইংরেজি হয়েছে আভিজাত্যের পরিচায়ক। ইংরেজরা প্রভু, স্থানীয়রা দাস। কাজেই প্রভুর ভাষা শিখলে অভিজাত, না শিখলে হীন শ্রেণি। সেই হীনম্মন্যতা এখনো আমাদের মনোজগতে রয়ে গেছে। উপনিবেশিকতার থেকে মুক্ত হতে হলে আগে আমাদের মনোজগতের এই উপনিবেশিকতা থেকে নিজেদের মুক্ত হতে হবে।’

এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির লিটারেচার ক্লাব ও ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) যৌথভাবে ২ নভেম্বর থেকে আয়োজন করেছিল বই ও সাহিত্য উৎসবের। এতে ছিল ইউপিএল থেকে প্রকাশিত বইয়ের প্রদর্শনী, কবিতা, ছোটগল্প, বই সমালোচনা লেখা ও কুইজ প্রতিযোগিতা। বুধবার উৎসবের সমাপনী দিনে ছিল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী এবং ইউপিএল থেকে প্রকাশিত ‘মনোজগতের বিউপনিবেশায়ন’ বইটি নিয়ে আলোচনা। আলোচনা পর্বের সঞ্চালনা করেন এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফরোজা আজিজ।

সূচনা বক্তব্যে ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানচর্চায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য ইউপিএল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বই প্রদশর্নীর আয়োজন করে আসছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বল্প মূল্যে বই বিক্রি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন করা হয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews