চীনের সামরিক প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল দেশটির সর্বশেষ স্টেলথ চালকবিহীন আকাশযান সিএইচ-৭ (CH-7)। দীর্ঘ সময় আকাশে থাকার সক্ষমতা, রাডারে কম ধরা পড়ার প্রযুক্তি এবং উচ্চগতির উড়ান—সব মিলিয়ে এই ড্রোনের সফল প্রথম ফ্লাইট চীনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রভাণ্ডারকে আরও শক্তিশালী করেছে বলে দাবি করছে বেইজিং।

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি (CCTV) সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জানায়, নতুন প্রজন্মের উচ্চ-উচ্চতা, উচ্চ-গতি ও দীর্ঘ-সহনশীলতা সম্পন্ন স্টেলথ ড্রোন সিএইচ-৭ সম্প্রতি তার প্রথম পরীক্ষামূলক ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে স্থল পর্যবেক্ষণ, তথ্য সহায়তা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই এই ড্রোনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রথম ফ্লাইট শেষ হলেও সিএইচ-৭-এর পরীক্ষা এখানেই থেমে থাকছে না। সিসিটিভির তথ্য অনুযায়ী, সামনে ড্রোনটির উড়ান কর্মক্ষমতার সীমা যাচাই এবং বহনযোগ্য যন্ত্রাংশ বা সেন্সরগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য একাধিক ধাপে পরীক্ষা চালানো হবে। এর মাধ্যমে বাস্তব অভিযানে ব্যবহারের জন্য ড্রোনটির নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা হবে।

সিএইচ-৭ তৈরি করেছে চায়না একাডেমি অব অ্যারোস্পেস অ্যারোডাইনামিক্স, যা চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সংস্থা চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্পোরেশন (CASC)-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থার তৈরি সিএইচ সিরিজের ড্রোনগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ড্রোনগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত।

সিএইচ-৭ প্রথমবার জনসমক্ষে আসে ২০১৮ সালের ঝুহাই এয়ার শো-তে, যেখানে এর পূর্ণ আকারের একটি মডেল প্রদর্শন করা হয়। সে সময় এটি দূরপাল্লার গোয়েন্দা ও আঘাত হানার সক্ষম ড্রোন হিসেবে আলোচনায় আসে। তবে সর্বশেষ সরকারি প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে, বর্তমান সংস্করণের সিএইচ-৭ কেবল গোয়েন্দা ও নজরদারি মিশনের জন্যই ব্যবহৃত হবে।

ড্রোনটির অন্যতম নকশাকার ( ডিজাইনার) ফাং শুয়াই সিসিটিভিকে জানান, সিএইচ-৭-এর বর্তমান সংস্করণটি একটি উচ্চগতির গোয়েন্দা বিমান। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো ফ্লাইং-উইং নকশা, যেখানে ডানা ও মূল দেহ একীভূত। এতে বায়ুগতীয় দক্ষতা বজায় থাকে এবং একই সঙ্গে সর্বোচ্চ স্টেলথ ক্ষমতা নিশ্চিত হয়। ইঞ্জিনের বাতাস নেওয়ার মুখ দেহের উপরের দিকে বসানো এবং ইঞ্জিনের নির্গমন নল আধা-গোপনভাবে নকশা করার ফলে রাডার ও তাপ চিহ্ন কমে যায়।

ফাং শুয়াইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, সিএইচ-৭ দ্রুত লক্ষ্য এলাকায় প্রবেশ করে গোপনে নজরদারি চালাতে সক্ষম। সংগৃহীত তথ্য এটি যুদ্ধক্ষেত্রের সামনের সারি থেকে মানবচালিত যুদ্ধবিমান ও দূরপাল্লার আঘাত হানার প্ল্যাটফর্মে পাঠাতে পারে, যা লক্ষ্য নির্ধারণ ও সামরিক অভিযানের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক।

প্রাথমিকভাবে ২০১৯ সালে প্রথম ফ্লাইটের পরিকল্পনা থাকলেও, নকশাগত পরিবর্তনের কারণে তা বিলম্বিত হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই উচ্চ-উচ্চতার দীর্ঘস্থায়ী ড্রোনটির ডানার বিস্তার ২২ মিটার থেকে বেড়ে ২৭.৩ মিটার করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ উড়ান ওজন ১৩ টন থেকে কমিয়ে ৮ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে এর ক্রুজিং গতি ম্যাক ০.৫, কার্যক্ষম উচ্চতা প্রায় ১৬,০০০ মিটার, এবং একটানা উড়ান সক্ষমতা ১৬ ঘণ্টা।

বিশ্লেষকদের ধারণা, এর নজরদারি পরিসর ২,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি। গত বছর এক ডিজাইনার জানান, গোপন অভিযানের সুবিধার জন্য অস্ত্র বহনের অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে, ডানার বিস্তার বাড়ানো হয়েছে এবং ওজন কমানো হয়েছে। তাঁর মতে, সিএইচ-৭-এর স্টেলথ ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আরকিউ-১৮০ স্টেলথ গোয়েন্দা ড্রোনের সমতুল্য।

সিএইচ-৭ শুধু একটি ড্রোন নয়, এটি চীনের দ্রুত সম্প্রসারিত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রভাণ্ডারের অংশ। সম্প্রতি বড় আকারের জিউ তিয়ান ড্রোন প্ল্যাটফর্মও প্রথম ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে, যাকে “আকাশে উড়ন্ত বিমানবাহী রণতরী” বলা হচ্ছে। পাশাপাশি বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে লয়াল উইংম্যান ও সহযোগী যুদ্ধ ড্রোনসহ একাধিক নতুন মডেল প্রদর্শিত হয়েছে। তথ্যসূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews