কর্নিয়া চোখে দেখার সর্ববৃহৎ অংশ। ঘড়ির কাচের মতোই কর্নিয়া স্বচ্ছ। কোনো কারণে তা অস্বচ্ছ হলে মানুষ দেখতে পায় না বা ঝাপসা দেখে।
কর্নিয়ায় ঘায়ের কারণ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক চোখের অন্ধত্বের ৫৫ শতাংশই কর্নিয়াজনিত কারণে হয়। কৃষকের মধ্যে কৃষিপণ্যের আঘাতেই বেশি ঘা হয়। চোখে যে কোনো ধরনের আঘাত পেলে হয়। চোখ রক্ষা গ্লাস না পরে লেদ মেশিনে কর্মরতদের কর্নিয়ায় লোহা ঢুকে থাকা।
হারপিস ভাইরাসের কারণে।
কর্নিয়ায় পানি জমা বা বুলাস কেরাটোপ্যাথি।
থাইরয়েড বা টিউমারজনিত কারণে চোখ বন্ধ না হওয়া।
কর্নিয়ায় স্পর্শ চেতনার অভাব। ব্যাকটেরিয়াজনিত চোখ ওঠা ও আঘাত।
নেত্রনালির রোগ থাকা ও সামান্য আঘাত। ফাঙ্গাসজনিত ধানের পাতার বা ওই জাতীয় কিছুর আঘাতে হয়।
লক্ষণগুলো
চোখ লাল হওয়া, পানি পড়া, আলোভীতি, চোখ খুলতে ব্যথা হওয়া, চোখে ময়লা জমা, চোখের ভেতরে পুঁজ হওয়া, ঝাপসা দেখা, সকালে চোখের ময়লায় চোখ আটকে থাকা, কখনও চোখে আলো ছাড়া কিছুই না দেখা।
প্রতিরোধ
সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে, যেন চোখে কোনো আঘাত না লাগে। বাচ্চাদের খেলনা যেন কোনোরূপ ধারালো, চোখা বা লোহার তৈরি না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা। পেনসিল-কলম ব্যবহারে বাচ্চাদের সতর্ক রাখা, ধুলাবালি চোখে গেলে নিজেরা বের করার চেষ্টা না করা। ওয়েল্ডিং ও লেদ মেশিনে কর্মরত বা ব্যবহারকারীদের চোখ রক্ষার গগলস বা রোদচশমা ব্যবহার করা। নারীদের ধান মাড়াই ও ঝাড়ার সময় যেন ধানের শীষ চোখে না যায়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা। ছোঁয়াচে চোখ ওঠা রোগীর ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার না করা। নেত্রনালি বন্ধ থাকলে অতিসত্বর চিকিৎসা করা। কোনোরূপ আঘাত পেলে অনতিবিলম্বে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া ও চিকিৎসা গ্রহণ করা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
সিট ল্যাম্পের সাহায্যে চোখ ভালো করে পরীক্ষা করা।
কনজাংটিভাল সোয়াব পরীক্ষা করা। ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস বা ভাইরাস নিরূপণ করা।
চিকিৎসা
চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো প্রকারভেদে চোখের ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক, মিডিয়াটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল বা অ্যান্টিভাইরাল ব্যবহার করতে হয়। ড্রপ ছাড়াও চোখে ইনজেকশন দিতে হয়। ভালো না হলে চোখ বন্ধ করার অস্ত্রোপচার করা। কখনও চোখ ভালো হলেও কর্নিয়ায় সাদা দাগ পড়ে যায়, তাতে দেখতে অসুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে মণি বদল বা কর্নিয়া সংযোজন করে চোখ ভালো করা যায়।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক