যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রশাসন রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল ফিরে পেতে ইউক্রেনকে সক্ষম করার পরিবর্তে সেখানে শান্তি অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করবে। একটি সাক্ষাতকারে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রায়ান লানজা এই কথা বলেছেন। শনিবার (৯ নভেম্বর)এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই খবর জানিয়েছে।
ব্রায়ান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে তার ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি’র সংস্করণের জন্য অনুরোধ জানাবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যদি আলোচনার টেবিলে আসেন এবং বলেন, ক্রিমিয়া আমাদের থাকলেই কেবল আমরা শান্তি আলোচনায় থাকতে পারি, তবে তিনি আমাদের এটিই বোঝাবেন যে, তিনি আসলে আগ্রহী নন।’
ব্রায়ান বলেন, ‘ক্রিমিয়া ইতোমধ্যেই হাতছাড়া হয়ে গেছে।’
২০১৫ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে অধিভুক্ত করেছে রাশিয়া। এর আট বছর পর দেশটি ইউক্রেনের ওপর একটি সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করে এবং কিয়েভের পূর্বাঞ্চল দখল করে।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্রমাগত বলেছেন, যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তার নাম করে সম্পদের খোয়ানো বন্ধ করা তার অগ্রাধিকার।
সাবেক প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক উপদেষ্টা লানজা বলেন, ট্রাম্প ২০১৬ সালে তার নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর পর থেকেই পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোর কথা উল্লেখ করেননি। তবে ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করা অবাস্তব এবং এটি ‘যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়।’
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের উইকএন্ড প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘জেলেনস্কি যখন বলেন, আমরা এই যুদ্ধ শুধু তখনই বন্ধ করব, ক্রিমিয়া ফিরে পেলেই শান্তি আসবে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আমরা বলতে চাই: ক্রিমিয়া দখলে হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ক্রিমিয়াকে ফিরিয়ে আনাই আপনার অগ্রাধিকার হয় এবং আপনি চান আমেরিকান সেনারা ক্রিমিয়া ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করুক, তবে আপনার পথ আপনি দেখুন।’
যুক্তরাষ্ট্র কখনই ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য আমেরিকান সেনা মোতায়েন করেনি। না কিয়েভও তাদের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য আমেরিকান সেনা পাঠানোর অনুরোধ করেছে। ইউক্রেন শুধু তার সেনাদের সশস্ত্র করার জন্য আমেরিকান সামরিক সহায়তার অনুরোধ করেছে।
লানজা বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনের জনগণের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তবে মার্কিন অগ্রাধিকার ‘শান্তি ও হত্যা বন্ধ করা’ ছিল বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে যা বলতে যাচ্ছি তা হলো, আপনার কি জানেন আপনারা কী দেখতে পাচ্ছেন? শান্তির জন্য বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে আপনারা ঠিক কী দেখছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি একটি জয়ের জন্য নয়, এটি শান্তির জন্য। আসুন আসল কথোপকথন শুরু করি।’
নির্বাচন জয়ের পর ট্রাম্প জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই ফোনালাপে ধনকুবের ইলন মাস্কও অংশ নিয়েছিলেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে ‘দীর্ঘ কথোপকথন’ হয়েছে যা ‘প্রায় আধা ঘণ্টা’ স্থায়ী হয়েছিল।