আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম মাধ্যম ‘পোস্টার’-এর ব্যবহার আর থাকছে না। পোস্টারের পরিবর্তে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপদেষ্টাদেরকেও যোগ করা হয়েছে। তারা কোনো নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবেন না। প্রার্থীরা ডাকবাংলো, রেস্টহাউজ, সার্কিট হাউজ ব্যবহার করতে পারবেন না।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ। এ সময় ইসি সচিব মো: আখতার আহমেদ ও এনআইডি ডিজি এস এম হুমায়ুন কবীর উপস্থিত ছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যান্য কমিশনার, ইসি সিনিয়র সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি আবুল ফজল বলেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ এর খসড়া অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও সংশোধনসাপেক্ষে হবে এটি। সংসদ নির্বাচনের প্রচারে পোস্টার থাকছে না। বিলবোর্ড, ব্যানার, হ্যান্ডবিল ও অনলাইনে প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। বিদেশী অর্থায়নে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচারণা করা যাবে না। তিনি বলেন, বিধিমালায় অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা সদস্য হয়ে থাকলে, প্রার্থী হলে পদত্যাগ করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা একটি কমন প্ল্যাটফর্ম করবেন, যেখানে ওই আসনের প্রার্থীরা তাদের ইশতেহার জনগণের সামনে তুলে ধরবেন।
মো: সানাউল্লাহ বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রে আরপিওর ৯১/ঙ আচরণবিধিতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওর ধারা ৯১-তে যেটা আছে প্রার্থিতা বাতিল করার এখতিয়ার, এটি ইতোপূর্বে আচরণবিধিতে ছিল না, এটিকে সন্নিবেশ করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে- বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না এটি চালু করা হচ্ছে। পোস্টার ব্যবহার বাদ করার ব্যাপারে যেটা সংস্কার কমিশনেরও একটি প্রস্তাব ছিল। আমরাও একমত হয়েছি। তিনি বলেন, এ ছাড়া দলীয় অঙ্গীকারনামা, এক প্ল্যাটফর্মে সব প্রার্থীর ইশতেহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কড়াকড়ি এবং জরিমানা তিন গুণ বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকার বিধান রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে জানিয়ে কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলো, রেস্ট হাউজ ব্যবহারের ওপরে কিছু বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রার্থীরা এখন এসব সুযোগ-সুবিধা অবাধে গ্রহণ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, খসড়া আচরণবিধিতে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে মাইকের শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবলের মধ্যে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ভোটার স্লিপ প্রণয়নের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে যে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল, সেটার ব্যাপারে একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে। আর্মসের সংজ্ঞার মধ্যে দেশীয় অস্ত্রও যুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপরে বিশদভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ডিফাইন করা হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় তিন সপ্তাহই থাকবে উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আচরণবিধিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে কোনো ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগ ‘না’ করা হয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের সংলাপে অংশগ্রহণ এবং আয়োজনে সম্মতি দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, খসড়ায় আচরণবিধি ভঙ্গ করলে আগের তুলনায় জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিধিমালা লঙ্ঘনে ছয় মাস কারাদণ্ড এবং জরিমানা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা করা হয়েছে। এটি সংস্কার কমিশনের একটা প্রস্তাব ছিল। আর প্রার্থী ও দলের জন্য অঙ্গীকারনামা নতুনভাবে সংযোজিত করা হয়েছে এই বিধিমালা মেনে চলার ব্যাপারে।
তিনি বলেন, খসড়া আচরণবিধিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তদারকিসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব রয়েছে। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকায় ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছে ইসি। এ খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হয়।
সীমানাসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে নির্বাচর কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, সময়ের অভাবে এবং আমাদের জিআইএসের (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেনশন সিস্টেম) কিছু উপাত্ত এখনো বাকি আছে বিধায় সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণীবিষয়ক আলোচনাটা আজকে আর আমরা এগিয়ে নেই। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের এটা সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১২ মে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। এখন পর্যন্ত সংসদের ৭৫টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ৬০৭টি আবেদন পেয়েছে ইসি।