নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তার আগেই রাত থেকে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে শতাধিক ছাত্র ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতিরোধে রাতভর সেখানে অবস্থান করার কথা জানিয়েছেন তারা।
সরজমিনে রবিবার দিবাগত রাতে দেখা যায়, জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে মুর্হুমুহু স্লোগান অব্যাহত রেখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মাঝে মধ্যে বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট মোটরসাইকেল শো-ডাউন নিয়ে জিপিও মোড়ে আসছেন, আবার চলে যাচ্ছেন। উপস্থিত ছাত্ররা জানান, শহীদ নূর হোসেন দিবস ঘিরে আওয়ামী লীগ নতুন ষড়যন্ত্র করছে। তাদের অপতৎপরতা রুখতে রাত থেকেই অবস্থান নিয়েছেন তারা। সারারাত এখানে অবস্থান করবেন, এমনকি দিনেও এখানে অবস্থান করবেন তারা।
এসময় তাদের, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়, ফাঁসি দে রে, ফাঁসি দে/ হাসিনারে ফাঁসি দে/রশি লাগলে রশি নে, মুগ্ধ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, আবু সাঈদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, ওই হাসিনা দেখে যা/আইছেরে তোর বাপেরা, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা রাজপথে নামিস না/তড়িঘড়ি করি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না', ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ছাত্রঅধিকার পরিষদের সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার সভাপতি কাউসার আলি বলেন, 'শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারত থেকে যড়ষন্ত্র করছেন দেশ নিয়ে। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা ফ্যাসিবাদীদের আস্ফালন দেখছি। আমরা এখানে অবস্থান করছি, সারারাত অবস্থান করবো। গণহত্যাকারী কাউকে দেখলেই আগে গণধোলাই দেবো, তারপর আইনের হাতে সোপর্দ করবো।'
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক নাজিমউদ্দিন বলেন, 'শহীদ নূর হোসেন দিবসে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা জিরো পয়েন্টসহ সর্বত্র অবস্থান নিয়েছি। আজ রাত থেকে আগামীকাল পর্যন্ত তারা যদি কোথাও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে, দুঃসাহস দেখায়, আমরা সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধ করবো।'
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা বিএনপির নেতা জুয়েল বলেন, 'শেখ হাসিনা তার অপরাজনীতি অব্যাহত রেখেছেন। তারা নতুন ষড়যন্ত্র করছে। তাই আমরা এখানে সারারাত সতর্ক পাহারায় থাকবো, যেন তারা তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন না করতে পারে।'
জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা চৌধুরী বলেন, 'আমরা আন্দোলনে আছি, ছিলাম, থাকবো। যতদিন স্বৈরাচারী হাসিনার ষড়যন্ত্র শেষ না হবে, ততদিন আমরা রাজপথে থাকবো।'
এরআগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে করা পোস্টে রবিবার গণজমায়েতের ডাক দিয়ে লিখেছেন, ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত’।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির ভেন্যুও জিরো পয়েন্ট। সেখানে দুপুর ১২টাতেই ছাত্র-জনতা জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এই কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই গুলিস্তানে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
এরআগে, আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টার পোস্ট করা হয়। যাতে লেখা, ‘১০ নভেম্বর আসুন জিরো পয়েন্টে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’। পরে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে অপর এক পোস্টে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, গণতন্ত্র ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় দলে দলে ঢাকায় আসুন।’ পোস্টে বিকাল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানানো হয়।