চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ডলু খালের ইজারা নেয়ার আড়ালে চলছে ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞ। ইজারার শর্ত ভেঙে খালের পাড় কেটেই দিন-রাত তোলা হচ্ছে বালু। এতে পুটিবিলা ইউনিয়নের বুড়া মেম্বার পাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে খালের গর্ভে বিলীন হতে পারে বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা।

প্রভাবশালী বালুখেকোদের ভয়ে অসহায় এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

রোববার (২৯ জুন) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় এক ভয়াবহ চিত্র। বুড়া মেম্বার পাড়া এলাকায় ডলু খালের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বসানো হয়েছে ছয়টি শক্তিশালী শ্যালো মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে খালের তলদেশ থেকে নয়, সরাসরি পাড় ভেঙে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে খালের তীরবর্তী মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। বালু পরিবহনের কারণে এলাকার রাস্তাঘাটও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রামপুলিশ কবির আহমদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘খাল থেকে আমার বাড়ি মাত্র ২০ ফুট দূরে। প্রশাসন যদি এখনই কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যে আমার পরিবারসহ বাড়িটি খালের গভীরে চলে যাবে। এই ঘরবাড়ি ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। এটা হারালে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব।’

এলাকাবাসী জানায়, পানত্রীশার শহির, গরু ভেট্টার ছেলে বজল, শুক্কুর, শফিক এবং পুটিবিলার শাহাবুদ্দীন, নুরুল আলম ও আরাফাতসহ ৭-৮ জনের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এই ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। কিছুদিন আগে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিলেও মাত্র দুই দিনের মাথায় তারা আবারো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার বালু মহাল ইজারা দিয়েছে, কিন্তু মানুষের খতিয়ানভুক্ত জায়গা বা খালের পাড় কাটার অধিকার তো দেয়নি। তাদের দৌরাত্ম্যে আমাদের চলাচলের রাস্তাও শেষ।’

পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘আমরা উপজেলা পর্যায়ে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু বালু উত্তোলনকারীরা এতটাই প্রভাবশালী যে তারা কারো কথাই শোনে না। আগে দুটি মেশিন চালালেও এখন ছয়টি চালাচ্ছে। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইজারাদারদের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের মধ্যে জহির কোম্পানি নামের একজনকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা কারো জায়গায় বালু উত্তোলন করছি না। খালে বালুর যে ঢল নামে সেগুলো তুলছি।’

ইজারার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের ইজারা পাইনি, কিন্তু বালু উত্তোলনের পরে ইজারা নিব।’

এলাকাবাসীর আশঙ্কা, অতিসত্বর প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে স্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে ডলু খালের ভাঙনে নিঃস্ব হবে বহু পরিবার। তাদের একটাই দাবি, বৈধ ইজারার আড়ালে এই অবৈধ ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করে তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি রক্ষা করা হোক।

যোগাযোগ করা হলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সেখানে কিছুদিন আগে একবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছিল কিন্তু স্পটে কাউকে পাওয়া যায়নি ফলে প্যানেল চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছি মামলা দেয়ার জন্য। এবং তারা যে এখনো বালু উত্তোলন করছে সেটার অভিযোগ পাইনি, আপনার মাধ্যমে জেনেছি। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews