রাজশাহীর বাগমারায় অব্যাহত চাঁদাবাজি, জমি-পুকুর দখল ও মাছ লুটের ঘটনায় জড়িত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার যাত্রাগাছি বাজারে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার কতিপয় বিএনপি নেতাকর্মী এসব অপকর্মে জড়িত বলে সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগ থেকে দাবি করা হয়েছে।
সাংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি দাবিকৃত ১৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের দুলালীপাড়া আন্ধিয়ার বাগানের ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরসহ ৪৫ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে কতিপয় বিএনপি নেতা। একই সঙ্গে দুই দফায় কয়েক লাখ টাকার মাছ লুটসহ পুকুরে বিষ দিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ নিধন করা হয়েছে। মাছ লুট ও নিধনের সঙ্গে কাউকে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন দখল হওয়া জমি ও পুকুরের ইজারাদার ও স্থানীয় জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা। তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুনসুর রহমান। এসব অপকর্মে তার মদদদাতা হিসেবে রয়েছেন বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব কামাল হোসেন। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে গত ৪ নভেম্বর আমাদের উপর হামলা করে পুকুর দখল করে নেয়। আর এ কাজে তারা ব্যবহার করে বিএনপি নেতা মুনসুরের বোন জামাই জালাল উদ্দিনের হেলমেট বাহিনী। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে তৈরি হওয়া এই হেলমেট বাহিনী গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিল হামলা করেছিল। হেলমেট বাহিনী এখন বিএনপির হয়ে মাঠে কাজ করছে।
সংবাদ সংম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এই হেলমেট বাহিনী দিয়ে বিএনপি নেতা মুনসুর রহমান গত ৭ ও ২১ আগস্ট দুই দফায় পুকুরের কয়েক লাখ টাকার মাছ লুট করে। এছাড়াও গত ১৫ নভেম্বর রাতে পুকুরে বিষ দিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা মাছ নিধন করে। এ সময় তারা পুকুরের কেয়ারটেকার রায়হানের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। গত ৪ নভেম্বরের ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হলেও বিএনপি নেতা কামাল হোসেনের চাপে পুকুরে বিষ দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ কোন মামলা নেয়নি। বর্তমানে তাদের হুমকি ধামকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। কেয়ারটার রায়হানের পরিবারও এলাকা ছাড়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জমির মালিক ও মারিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, রাজশাহী জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শাহজামাল, তারেক রহমান প্রজন্ম দলের মাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার সভপতি জিয়াউর রহমান এবং জমি-পুকুরের আরেক ইজারাদার ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান মিল্টন।
এদিকে চাঁদাবাজি, জমি-পুকুর দখল ও মাছ লুটের ঘটনায় জড়িত বিএনপি নেতাদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে জমির মালিক খলিলুর রহমান বলেন, এতো বড় অন্যায় মেনে নেওয়ার মতো নয়। বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। দলের পক্ষ থেকে এসব অপকর্মের হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে স্থানীয় মানুষ বিএনপি সম্পর্কে ভুল ধারণা পাবেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মুনসুর রহমান বলেন, ২০১৪ সালে এই জমি ও পুকুর আমি লিজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। গত ৫ আগস্টের পর একজন জমির মালিক আমাকে লিজ দিতে চেয়েছিলেন। তার কথামত আমি পুকুরে কিছু মাছ ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মালিক আর আসেননি এবং আমাকে ইজারার কাগজপত্র করে দেয়নি। তবে মাছ লুট ও বিষ দিয়ে মাছ নিধনের বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেন মুনসুর রহমান।
আওয়ামী লীগ আমলে তৈরি হওয়া হেলমেট বাহিনী দিয়ে চাঁদা দাবিসহ জমি-পুকুর দখল ও মাছ লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব কামাল হোসেন বলেন, আন্ধিয়ার বাগানের জমির মালিকরাও বিএনপি, যারা ইজারা নিয়েছে তারাও বিএনপি। আবার যারা দখল করছে তারাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমি চেষ্টা করছি। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের নিয়ে দুই দফায় বৈঠক করা হয়েছে।
কিন্তু কেই মানতে চাইছে না বলে দাবি করেন কামাল হোসেন।