সুখ কী? বহু মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন সারাজীবন। কেউ সুখ খুঁজে পান অর্থে, কেউ সম্পর্কের গভীরতায়, আবার কেউ বা নিরিবিলি প্রকৃতির কোলে। কিন্তু গবেষণাগুলো বলছে, সুখ কোনো বড় কিছুর মধ্যে লুকিয়ে নেই এটি প্রতিদিনের ছোট ছোট কিছু অভ্যাসের ফলাফল।

যেসব মানুষ প্রতিদিন কিছু নির্দিষ্ট ইতিবাচক অভ্যাস চর্চা করেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, জীবনের প্রতি আশাবাদ বাড়ে এবং সামগ্রিকভাবে তারা নিজেদের সুখী বলে অনুভব করেন। এমনই ১০টি অভ্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে এই বিশেষ প্রতিবেদন, যা আপনি ঘরে বসেই শুরু করতে পারেন—আজ থেকেই।

দিনটা শুরু হোক কৃতজ্ঞতায়
প্রতিটি দিনই জীবনের নতুন সুযোগ। আর এই উপলব্ধির চর্চা হয় কৃতজ্ঞতা থেকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার ভেবে দেখুন, আপনি কী কী কারণে কৃতজ্ঞ। হতে পারে সেটা আপনার সুস্থ শরীর, প্রিয়জনের ভালোবাসা, বা নিছক এক কাপ গরম চায়ের স্বাদ। বিজ্ঞান বলছে, নিয়মিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং হতাশা কমে যায়।

শরীরকে নড়াতে শিখুন
শরীর যখন সচল থাকে, মনও তখন চনমনে হয়। প্রতিদিন ২০–৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম আপনার মস্তিষ্কে এমন কিছু হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় যা আপনাকে সুখী ও প্রাণবন্ত করে তোলে। গবেষকরা বলছেন, শরীরচর্চা ডিপ্রেশনের প্রকোপও কমাতে সাহায্য করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটান নিয়ন্ত্রণে রেখে
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স এসব আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করে যাওয়া, অন্যের জীবন দেখে নিজেকে তুচ্ছ ভাবা এসবই কিন্তু মানসিক চাপ বাড়ায়। তাই একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন: আপনি আসলেই সুখী হতে চাচ্ছেন, না কি শুধু ‘ডিজিটাল’ দুনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছেন? প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে এসব অ্যাপ থেকে দূরে থাকাই মঙ্গল।

হাসুন, মনের অবস্থা যেমনই হোক
হাসি শুধু আবেগ নয়, এক ধরনের ওষুধও বটে। মন খারাপ থাকলেও মুখে এক চিলতে হাসি এনে দিন। এই ছোট্ট চেষ্টাটাই আপনার মেজাজ পাল্টে দিতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘ফেইক’ হাসিও কখনো কখনো সত্যিকারের অনুভূতির জন্ম দিতে পারে।

সাহায্য করুন, বিনিময়ের চিন্তা না করে
অন্যের জন্য কিছু করাটা কেবল তার উপকারে আসে না, আপনার মনেও এক ধরনের তৃপ্তি নিয়ে আসে। হতে পারে সেটা রাস্তায় একজন বয়স্ককে রাস্তা পার করে দেওয়া, অথবা সহকর্মীর কাজে একটু সহায়তা। সাহায্য করার এই অভ্যাস আত্মতৃপ্তি আর সহমর্মিতা তৈরি করে, যা সরাসরি সুখের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত।

ঘরের ছোট একটি এলাকা গুছিয়ে ফেলুন
বিশৃঙ্খল পরিবেশ মনকেও এলোমেলো করে তোলে। কিন্তু আপনার টেবিলের ওপরের জিনিসপত্রগুলো একটু গুছিয়ে ফেললেই দেখতে পাবেন, মনের ভেতরেও হালকা হাওয়ার মতো স্বস্তি খেলে যাচ্ছে। এটি এক ধরনের মানসিক ডিটক্স।

ঘুম হোক গভীর এবং নিয়মিত
সুখী থাকতে চাইলে ঘুমকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুমাতে যাওয়াটা কেবল বিশ্রামের জন্য নয়, মানসিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যও জরুরি। ঘুমের ঘাটতি হলে মন বিষণ্ন হয়ে পড়ে, মনোযোগ কমে যায়, এবং দৈনন্দিন কাজে অস্থিরতা তৈরি হয়।

প্রকৃতির মাঝে কাটান কিছু সময়
সবুজ গাছ, খোলা আকাশ, নদীর ধারা প্রকৃতি আমাদের মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। আধুনিক শহরজীবনে কিছুটা সময় যদি প্রকৃতির মাঝে কাটানো যায়, তাহলে ক্লান্ত মস্তিষ্কও নতুন করে জেগে ওঠে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুক্ষণ সময় কাটালেই কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন কমে যায়।

হাসুন আরও বেশি
হাসির মধ্যে এক ধরণের আত্মিক মুক্তি আছে। প্রতিদিন অন্তত একবার প্রাণ খুলে হাসুন। বন্ধুদের সঙ্গে মজার গল্প, প্রিয় কোনো কৌতুক নাটক বা সিনেমা হাসির চর্চা মনকে আলোকিত করে তোলে।

যা গ্রহণ করা যায় না, তা ছেড়ে দিন
সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জীবনের অনেক কিছুই আমাদের ইচ্ছার বাইরে ঘটে, যা বদলানো সম্ভব নয়। মেনে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন। ক্ষমা করতে শিখুন। পুরোনো ক্ষোভ ও দুঃখ যদি পেছনে ফেলে দেওয়া যায়, তাহলে মনও হালকা হয়, নতুন কিছু গ্রহণের জায়গা তৈরি হয়।


সুখ কোনো দূরের গন্তব্য নয়, বরং প্রতিদিনের অভ্যাসে লুকিয়ে থাকা এক অনন্য অনুভূতি। আপনি যদি সত্যিই সুখী হতে চান, তাহলে আজ থেকেই চেষ্টা করুন এই অভ্যাসগুলো গড়ে তোলার। কারণ জীবন বদলায় ধাপে ধাপে একটা ভালো অভ্যাস, একটা ইতিবাচক চিন্তা, আর একটা হেসে ওঠা থেকেই শুরু হতে পারে আপনার জীবনের নতুন গল্প।

সূত্র:https://tinyurl.com/mrxzvu5h



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews