সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েল প্রতিবেশী দেশটির ভূখণ্ডে আগ্রাসন বাড়িয়েছে। রবিবার আল-আসাদ রাশিয়ায় পালানোর পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ার ওপর চার শতাধিক হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে দেশটি ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে গঠিত বাফার জোনে সামরিক অভিযানও শুরু করেছে।

সিরিয়ায় ৫৩ বছরের বংশানুক্রমিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে নতুন শাসন ব্যবস্থায় যাওয়ার চেষ্টার মধ্যেই ইসরায়েলের এই হামলা চলছে। এর আগেও ইসরায়েল লেবাননের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং গাজার মানুষের ওপর যে যুদ্ধ চলছে, তা অনেকেই গণহত্যা হিসেবে নিন্দা করেছেন।

কিন্তু সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলার পেছনে কী কারণ রয়েছে? কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ইসরায়েল কেন সিরিয়াকে আক্রমণ করছে?

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, তারা সিরিয়ায় ইরানি সামরিক অবস্থানগুলোকে ধ্বংস করছে। তবে ইরান জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের কোনও বাহিনী সিরিয়ায় অবস্থান করছে না।

এখন ইসরায়েল বলছে, তারা সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের দাবি, অস্ত্র যাতে তথাকথিত ‘উগ্রপন্থি’ গোষ্ঠীগুলোর হাতে না যায়, তা নিশ্চিত করাই তাদের উদ্দেশ্য। ইসরায়েলের এই ‘উগ্রপন্থি’ সংজ্ঞা পরিবর্তিত হতে থাকে। বর্তমানে এটি প্রধানত সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই গোষ্ঠী আসাদের পতনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।

কী কী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে?

ইসরায়েলের দাবি, তারা অস্ত্রগুদাম, গোলাবারুদ মজুদকেন্দ্র, বিমানবন্দর, নৌঘাঁটি এবং গবেষণা কেন্দ্রের মতো সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এছাড়া সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যকার গোলান মালভূমির বাফার জোনেও সামরিক ইউনিট মোতায়েন করেছে।

গোলান মালভূমির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এখন ইসরায়েলের দখলে। বাকি অংশে জাতিসংঘ পরিচালিত বাফার জোন রয়েছে। তবে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, ইসরায়েলি ট্যাংক কাতানায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছে। ইসরায়েলি সামরিক সূত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সাম্প্রতিক হামলার লক্ষ্য ও যৌক্তিকতা কী?

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গোলান মালভূমি চিরদিনের জন্য ইসরায়েলের অংশ হয়ে থাকবে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা'আর জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য ছিল সন্দেহভাজন রাসায়নিক অস্ত্রের কেন্দ্র ও দূরপাল্লার রকেট লক্ষ্যবস্তু করা।

একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সম্মেলনে সা'আর বলেন, আমরা কৌশলগত অস্ত্র ধ্বংস করেছি যাতে সেগুলো উগ্রপন্থিদের হাতে না যায়। আমাদের সব কাজ ছিল প্রতিরক্ষামূলক।

ইসরায়েলের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?

সরকারি বিবৃতিতে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত তাদের কোনও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা জানায়নি। তবে নেতানিয়াহুর বিরোধী দলীয় নেতা বেনি গান্তজ একে ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, ইসরায়েল দ্রুজ, কুর্দি এবং অন্যান্য সিরীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে পারে।

গান্তজের মন্তব্যের পর ইসরায়েলের একটি গবেষণা সংস্থা সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরেকটি ধারণা দিয়েছে। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল আনান ওহাবি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। সিরিয়াকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে সেগুলোকে স্বাধীনভাবে বাইরের রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews