বাংলাদেশে জনমিতিক বিভাজন তুলনামূলকভাবে কম। জনগণ একে অপরের খুব কাছাকাছি বসবাস করেন। এই সামাজিক ও ভৌগোলিক ঐক্য বাংলাদেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতির (পিআর) সফল বাস্তবায়নে শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। জুলাই বিপ্লবের পর দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে এবং এটি ভবিষ্যতে নতুন ধারার, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করছে। যারা এই বিপ্লবের চালিকাশক্তি ছিল, তারা কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি; বরং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য, যেখানে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।

মিশ্র-সদস্য আনুপাতিক (MMP) প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বাস্তবায়ন :

অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরন বিশ্বজুড়ে প্রচলিত। প্রধান পাঁচটি ধরন হলো : ১. পার্টি-লিস্ট পিআর (ক্লোজড ও ওপেন তালিকা); ২. মিশ্র-সদস্য অনুপাতিক ব্যবস্থা (Mixed-Member Proportional-MMP); ৩. সিঙ্গেল ট্রান্সফারেবল ভোট (STV); ৪. প্যারালাল বা সেমি পিআর এবং ৫. জাতীয় বা অঞ্চলভিত্তিক পিআর। বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে গণতন্ত্রে ভারসাম্য, ন্যায্যতা ও সব শ্রেণীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে। এই লক্ষ্যে অন্যতম কার্যকর ব্যবস্থা হলো- মিশ্র-সদস্য অনুপাতিক (MMP) নির্বাচন ব্যবস্থা। এটি সরাসরি এলাকার প্রতিনিধিত্ব (বর্তমান FPTP-এর মতো) এবং জাতীয়ভিত্তিক ন্যায়সঙ্গত আসন বণ্টনের সমন্বয় ঘটায়।

মিশ্র-সদস্য অনুপাতিক (MMP) শুধু একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের একদলীয় কর্তৃত্ববাদ, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও গণতন্ত্রহীনতার দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কট থেকে উত্তরণের একটি কাঠামোগত গণতান্ত্রিক সংস্কার। ৩০০ আসনের কাঠামোতে ক্লোজড-লিস্ট পদ্ধতি MMP চালু করা হলে প্রতিটি ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে, একদলীয় শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ হবে, নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং রাজনৈতিক বৈচিত্র্য ও অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত হবে। এই সময়ে এমন একটি সংস্কার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও জরুরি, যা বাংলাদেশকে ন্যায়, স্থিতিশীলতা, দায়বদ্ধতা ও অন্তর্ভুক্তির ভারসাম্য রক্ষা করে টেকসই গণতন্ত্রের পথে এগোতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশে ৩০০ আসনের নির্ধারিত সংসদে কিভাবে এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা যায় তা উপস্থাপন করা হলো।

মোট আসন : ৩০০ (নির্ধারিত)

১৫০টি আসন FPTP পদ্ধতিতে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে। ১৫০টি আসন পিআর (ক্লোজড-লিস্ট) পদ্ধতিতে পার্টি ভোটের ভিত্তিতে বণ্টন হবে। দেশের আটটি বিভাগ এবং ৬৪টি জেলার জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে ১৫০টি FPTP আসন অঞ্চলভিত্তিক হারে ভাগ করা হবে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশন গঠন করবে। কমিশন জনসংখ্যার ভারসাম্য, ভৌগোলিক সংযুক্তি ও প্রশাসনিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে সীমানা নির্ধারণ করবে। সীমানা নির্ধারণ পক্ষপাতহীন করতে স্বচ্ছতা ও গণশুনানির ব্যবস্থা থাকবে।

পিআর পদ্ধতি বিতর্কে আলোচিত প্রশ্ন ও জবাব

১. দুর্বল ও অস্থিতিশীল সরকার : পিআর পদ্ধতিতে একক দল সহজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না, ফলে জোট সরকার গঠন করতে হয়। কোনো রাজনৈতিক দল আশঙ্কা করতেই পারে, বারবার জোট ভাঙাগড়ার কারণে সরকার অস্থিতিশীল, নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ও জটিলতা, নীতিগত প্রশ্নে বিতর্কে সংসদ স্থবির হতে পারে। এই পদ্ধতিতে অল্প আসনপ্রাপ্ত ছোট দলগুলোর অতিরিক্ত গুরুত্বের কারণে তারা বড় দলের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে রাজনৈতিক দরকষাকষি শুরু হয়। অর্থনীতি ও প্রশাসনের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে।

অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পিআর ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি

জোট সরকারকে দুর্বল না বলে সহনশীল ও আলোচনাভিত্তিক সরকার বলা অধিক যুক্তিযুক্ত। পিআর ব্যবস্থায় একক আধিপত্য হ্রাস পায় এবং সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মত ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হয়, যা গণতন্ত্রের গভীরতা বৃদ্ধি করে। নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া একক ইচ্ছার ওপর নির্ভর না করে বিভিন্ন দলের আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, যা অধিক টেকসই হয়। বিশ্বের অনেক দেশ যেমন জার্মানি, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস পিআর পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এবং তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ছোট দলগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারে ঠিকই, তবে তা শুধু তখনই ঘটে যখন তারা নীতিগত অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়। এটি সরকারকে স্বচ্ছ ও গণমুখী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। এ ছাড়া, একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে যে একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ও সাংবিধানিক অপব্যবহার সম্ভব, পিআর পদ্ধতিতে তা রোধ হয়। গণতন্ত্রে নানা মতের সহাবস্থান ও মতপার্থক্যের মধ্য দিয়ে সমঝোতা তৈরির পথ সুগম হয়।

২. ভোটার ও এমপির মধ্যে সরাসরি সম্পর্কের অভাব :

FPTP-তে ভোটাররা সরাসরি একজন প্রার্থীকে ভোট দেয়, যিনি তাদের এলাকার প্রতিনিধি হন। কিন্তু পিআরে দলীয় তালিকা থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় ভোটার ও প্রতিনিধির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক থাকে না। কেউ বলতে পারেন, এতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য স্থানীয় সমস্যা ও দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যান, কারণ তার সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে না। ফলে এলাকার উন্নয়ন, সেবাপ্রাপ্তি বা দায়বদ্ধতা কমে। এতে গণতন্ত্রের স্থানীয়করণ দুর্বল হয়, জনগণের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়।

অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পিআর ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি :

পিআর ব্যবস্থায় ভোটার ও সংসদ সদস্যের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। তবে মিশ্র-সদস্য অনুপাতিক (MMP) এই সমস্যা দূর করার ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান। MMP পদ্ধতিতে ভোটাররা দু’টি ভোট দেন একটি নিজ এলাকার প্রার্থীকে (FPTP ভিত্তিক) এবং একটি রাজনৈতিক দলকে (পিআরভিত্তিক)। এই ব্যবস্থায় ভোটার তার এলাকার প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন, যার মাধ্যমে স্থানীয় সম্পর্ক, দায়বদ্ধতা ও সেবার প্রতিশ্রুতি বজায় থাকে, আবার দলীয় ভোটের ভিত্তিতে সংসদে ন্যায্য ও অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত হয়। বিশ্বে জার্মানি ও নিউজিল্যান্ড সফলভাবে MMP পদ্ধতি ব্যবহার করছে।

৩. দলীয় নেতৃত্বের কেন্দ্রীকরণ :

পিআর ব্যবস্থায় সংসদ সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হয়ে দলীয় তালিকা থেকে নির্বাচিত হন। এই তালিকা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্ধারণ করে। কেউ মনে করতে পারেন যে, এতে দলীয় গণতন্ত্র ব্যাহত হয়, তৃণমূল নেতাকর্মীরা অবহেলিত হন এবং ব্যক্তিগত আনুগত্যের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হয়। এতে দলীয় গোষ্ঠীবাদ, স্বজনপ্রীতি ও নেতৃত্বের একচেটিয়া দখল বাড়ে, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে ব্যক্তিনির্ভরতা বৃদ্ধি পায়, দলীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত পছন্দে তালিকা তৈরি করতে পারে, যা দলে বিভাজন ও অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পিআর ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি :

পিআর ব্যবস্থায় নেতৃত্বের কেন্দ্রীকরণ অবশ্যম্ভাবী নয়; বরং দলীয় অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, স্বচ্ছ প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত এবং সংমিশ্রিত নির্বাচনী মডেলের মাধ্যমে তৃণমূলের অংশগ্রহণ, প্রতিযোগিতা ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব। এই ব্যবস্থায় দলীয় তালিকার মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও, এটি গণতন্ত্রবিরোধী নয়; বরং উপযুক্ত নীতিমালার মাধ্যমে আরো অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ করার সুযোগ থাকে। অনেক দেশ তালিকা তৈরির জন্য অভ্যন্তরীণ প্রাইমারি, ভোট, সদস্যভিত্তিক নাম চূড়ান্তকরণ এবং জেন্ডার বা অঞ্চল কোটা প্রবর্তন করেছে, যাতে নেতৃত্বের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভেঙে যায়। যেমন- সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও জার্মানি তালিকা তৈরির আগে দলের ভেতরে পার্টি কনভেনশন, উপ-কমিটি, বা কর্মীদের ভোটে প্রার্থী নির্বাচন করে। এর ফলে প্রার্থীরা দলের কাছে নয়; বরং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। এ ছাড়া, মিশ্র-সদস্য অনুপাতিক পদ্ধতিতে দলীয় তালিকা এবং সরাসরি নির্বাচনের সংমিশ্রণে উভয় ধরনের প্রতিনিধিত্ব বজায় থাকে। যারা দলীয় তালিকায় থাকেন, তাদের পাশাপাশি তৃণমূল থেকে আসা ব্যক্তিরাও সরাসরি নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে আসেন, ফলে নেতৃত্বের ভারসাম্য রক্ষা পায়।

৪. চরমপন্থী ও বিভাজনকারী দলগুলোর প্রবেশাধিকার :

পিআর পদ্ধতিতে যেকোনো দল যারা ন্যূনতম ভোট পায়, তারাও সংসদে আসন পেতে পারে। আশঙ্কা করাই যায়, এতে ধর্মীয় উগ্রপন্থী দল, জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বা মৌলবাদী সংগঠন স্বল্প ভোট পেয়েও সংসদে আসন পাওয়ায় রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন করতে পারে। এসব দল সংসদে প্রবেশ করে জাতীয় নিরাপত্তা, সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় ঐক্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এ ছাড়া এটি রাজনীতির মূলধারায় দায়িত্বশীল আচরণের পরিবর্তে প্রচারণাধর্মী ও ঘৃণাবাক্যভিত্তিক অবস্থান উৎসাহিত করতে পারে।

অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পিআর ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি :

চরমপন্থা মোকাবেলায় গণতন্ত্রে বিচ্ছিন্নকরণ নয়; বরং তাদেরকে অন্তর্ভুক্তি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রধান ধারায় আনা অধিক কার্যকর। পিআর পদ্ধতির সাথে উপযুক্ত নীতিমালা, ভোট-সংখ্যার ন্যূনতম সীমা এবং সাংবিধানিক শর্ত সংযুক্ত করলে দায়িত্বশীল, বৈচিত্র্যময় ও নিরাপদ সংসদ গঠন সম্ভব। চরমপন্থী বা বিভাজনকারী দলের সংসদে প্রবেশের আশঙ্কা রোধের কার্যকর ব্যবস্থা এই পদ্ধতিতেই রয়েছে, যেমন- ন্যূনতম ভোট-সংখ্যার সীমা (threshold) নির্ধারণ। অধিকাংশ দেশে ২ থেকে ৫ শতাংশ ভোট না পেলে কোনো দল সংসদে আসন পায় না। যেমন- জার্মানিতে ৫ শতাংশ সর্বনিম্ন সীমা, যা রাজনৈতিক বিভাজন রোধে কার্যকর। চরমপন্থী দলগুলোকে মূলধারার বাইরে রাখলেই বরং তারা ষড়যন্ত্র, সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে। কিন্তু সংসদে এলে তারা নীতিগত বিতর্কে বাধ্য হয় এবং জবাবদিহির আওতায় আসে, যা তাদের দায়িত্ববান করে তোলে।

৫. রাজনৈতিক দরকষাকষি ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঝুঁকি :

জোট সরকারের ক্ষেত্রে ছোট ছোট দল সরকার গঠনে ‘কিং-মেকার’ হয়ে ওঠে। আশঙ্কা থাকতে পারে, এ পরিস্থিতিতে এসব দল সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজস্ব স্বার্থ পূরণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিল বা নীতিমালা পাস করাতে গেলে ছোট দলের সম্মতি লাগে, তাই অতিরিক্ত ছাড় দিতে হয়। এই রাজনীতি স্বচ্ছতা, স্থায়িত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন করতে পারে। ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয়। সরকার গঠনে এমন দরকষাকষি দীর্ঘস্থায়ী প্রশাসনিক অচলাবস্থা ও অনৈতিক সমঝোতার পথ তৈরি করে।

অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পিআর ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি :

দরকষাকষি মানেই দুর্বলতা নয়; বরং এটি নীতিগত সংলাপ ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অবাধ একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার পথ। উপযুক্ত আইন, চুক্তি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি থাকলে, জোট সরকার সুশাসনের রোল মডেল হতে পারে। ছোট দলগুলো জোট সরকারে ‘কিং-মেকার’ হয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে তবে বাস্তবে, রাজনৈতিক দরকষাকষি গণতন্ত্রের অংশ এবং এটি স্বচ্ছ নীতিগত কাঠামোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অনেক সফল পিআর ব্যবহারকারী দেশ (যেমন- জার্মানি, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস) নিয়মিত জোট সরকার পরিচালনা করেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।

৬. পিআর ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনো সুযোগ নেই :

পিআর ব্যবস্থায় অনেকেই মনে করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবতা আসলে কী?

মিশ্র-সদস্য অনুপাতিক পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বহুমুখী সুযোগ তৈরি হয়। প্রথমত, তারা সরাসরি FPTP আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেন এবং জনগণের আস্থা অর্জন করলে দল ছাড়াই সংসদে পৌঁছতে পারেন। দ্বিতীয়ত, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটি নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম বা জোট গঠন করলে তা নিবন্ধিত হয়ে পিআর ভোটে অংশ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হতে পারে, যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পান, তাদের মধ্য থেকে সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশ বর্তমানে এক গভীর গণতান্ত্রিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দলীয় ব্যবহার এবং একক দলীয় শাসনের পর আওয়ামী লীগ বিতাড়িত হওয়ায় একটি ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ন্যায়ভিত্তিক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। এ পরিস্থিতিতে মিশ্র-সদস্য অনুপাতিক (MMP) নির্বাচন ব্যবস্থা সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হতে পারে। বাস্তবায়নের জন্য দু’টি পথ সামনে আছে : প্রথমত, জুলাই সংস্কার সনদের মাধ্যমে সংসদে দ্বি-কক্ষীয় কাঠামো প্রবর্তন করা যেখানে উভয় কক্ষেই (MMP) নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এ জন্য রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বা বিচার বিভাগের বিদ্যমান আইনগত প্রক্রিয়া ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় বৈধতা দেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলো আইনগত সমাধানে একমত না হলে স্বাধীন ও স্বচ্ছ গণভোট আয়োজন করে জনগণের ম্যান্ডেট নেয়া যেতে পারে। যদি এ সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হয়, তবে দেশ আবারো অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হবে যা কোনো রাজনৈতিক দলেরই কাম্য নয়। তাই ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, জবাবদিহি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন নিশ্চিত করতে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগেই MMP নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সানওয়ে ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews