বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিন। এ অভ্যুত্থানে দেশের সব শ্রেণীর মানুষ অংশ গ্রহণ করেছিল। এমনকি দেশের বাইরে অবস্থানরত অনেকেই যার যার সাধ্য অনুযায়ী আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। আমরা তাদের সবাইকে মোবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি নিহতদের রূহের মাগফেরাত এবং শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করেন।
তিনি গত মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে যুক্তরাজ্যে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রবাসীরা রেমিটেন্সের মাধ্যমে জন্মভূমি বাংলাদেশকে বিপুল সহায়তা করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, মনিটারি রেমিটেন্সের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ইন্টেলিজেন্স রেমিটেন্স পাঠানোর জন্যেও আমি প্রবাসীদের কাছে আবেদন রাখছি। ইন্টেলিজেন্স রেমিটেন্স বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বিরাটভাবে সহায়ক হবে। এভাবেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে প্রবাসীরা অপরিসীম অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
বিগত সরকারের লাগামহীন দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে ডা: শফিক বলেন, যে পরিমাণ উন্নয়ন করা সম্ভব হতো, সেটা আসলে হয়নি। বাংলাদেশে একটি উন্নয়ন প্রকল্পে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে, আমাদের অঞ্চলের অন্যান্য দেশে সে ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প তার তিন ভাগের এক ভাগ ব্যয় করেই সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের দেশে সময়মতো কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়নি, একের পর এক সময় বাড়ানো হয়েছে আর সেই সাথে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে প্রকল্পের ব্যয়। এভাবেই দেশটাকে লুটেপুটে নিঃস্ব করা হয়েছে।
একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একাত্তরে আমরা কোনো ভুল করে থাকলে এবং তা যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, আমি জাতির কাছে ক্ষমা চাইব। ব্রিটেনের কোর্টে চৌধুরী মাইনুদ্দিনের বিষয়ে বিচারের রায়ে আমাদের দেশে ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের নামে যে বিচার হয়েছে তার অবজারভেশনে এখানকার বিচারপতিরা সে রায়কে ‘জেনোসাইড অব জাস্টিস’ বলেছে। ১৫টি বছর আমাদেরকে আমাদের অফিসে বসতে দেয়া হয়নি, কথা বলতে দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো র্যালি পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতির কাছেও যেতে পারিনি।
ডা: শফিক আরো বলেন, জাতিগতভাবে অনৈক্য এবং দুর্নীতির কারণে আমরা জাতি হিসেবে আগাতে পারিনি। দুর্নীতি আমাদের জন্য একটি জাতীয় লজ্জার বিষয়। যুক্তরাজ্য নিজেদেরকে দুর্নীতি থেকে অনেকটা মুক্ত রাখতে পারার কারণে সারা বিশ্বে নিজেদেরকে একটা মর্যাদাপূর্ণ স্থানে নিয়ে যেতে পেরেছে। কিন্তু আমরা পারিনি। যারা সমাজ পরিচালনা করবেন, তারা পরিচ্ছন্ন না হলে সমাজ পরিচ্ছন্ন হবে না।
‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা।
আলী আহসান মুজাহিদ আপসহীন নেতা ছিলেন : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের অবদানের কথা স্মরণ করে দলটির আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ইসলামী আন্দোলনের এক আপসহীন নেতা ছিলেন। দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ভোটাধিকার এবং ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, তা তাকে যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় করে রাখবে। ২০০১-০৬ মেয়াদে তিনি চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী থাকাকালে তিনি সততা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে নজির স্থাপন করেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। দলীয় লোকদের দ্বারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। যে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়, তিনি নিজেই দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। যিনি নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত, তার বিচারও ন্যায়ভ্রষ্ট। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মুজাহিদসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের রক্তের বিনিময়ে এক দিন এ দেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশা আল্লাহ। জাতি গভীরভাবে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের শূন্যতা উপলব্ধি করছে। মুজাহিদ মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের শাহাদত কবুল করে তাকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। তার অসমাপ্ত কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য তিনি জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানান ও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।