পুরান ঢাকার বংশাল মোড়ের যানজট পেরিয়ে খানিকটা এগোলেই ভিক্টোরিয়া পার্ক। পার্কের পুব দিকের রাস্তা ধরে কিছুটা সামনে শ্রীশদাস লেন। লেনের এক নম্বার বাড়িটিই বিউটি বোর্ডিং।

পুরান ঢাকার কথা মাথায় এলেই প্রথম যে কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের কথা মাথায় আসবে, তাদের মধ্যে অন্যতম এবং ঐতিহাসিক স্থান হলো বিউটি বোর্ডিং। ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পী, সাহিত্যিকদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বহু সুনাম রয়েছে এটির। স্থানটি যাদের পদচারনায় মুখরিত হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শামসুর রহমান, জিয়া আনসারী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, দেবদাস চক্রবতী, নিতুন কুণ্ডু, সমুদ্র গুপ্ত, সন্তোস গুপ্ত, ফজল শাহাবুদ্দিন, কবি ইমরুল চৌধুরী, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, শফিক রেহমান, ফয়েজ আহমদ প্রমুখ। টিভি ব্যক্তিত্ব ফজলে লোহানী, শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, যাদু শিল্পী জুয়েল আইচেরও দেখা মিলত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডায়। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আড্ডা দিতে আসতেন গাজীউল হক, কমরেড আ. মতিন, অলি আহাদ, সাইফুদ্দীন মানিক প্রমুখ। চলচ্চিত্র শিল্পের কিংবদন্তি আব্দুল জব্বার এখানে বসেই লেখেন বাংলার প্রথম সবাক ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’-এর চিত্রনাট্য।
তারা একেকজন যেমন বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ঠিক তেমনি বিউটি বোর্ডিং বাংলার ইতিহাসের সাথে শত বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে।

বিউটি বোর্ডংয়ের সাইনবোর্ড দেখে ভেতরে ঢুকতেই সামনে পরবে এক টুকরো বাগান তাতে ফুটেছে নানা রঙের ফুল। বাগান থেকে চোখ ফেরাতেই দেখা মিলবে বিরাট এক হলুদ বাড়ি। অনেকটা ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির। নিরেট আড্ডার উপযোগী স্থান। পাশে খাবার ঘর, শোবার ঘর, পেছনে সিঁড়িঘর সবই পুরনো রূপকথার গল্পের মতো সাজানো। ভবনের নিচ তলার একটি অংশে খাবার ঘর। সেখানে ছোট টেবিল আর চেয়ার পাতা। একসময় এখানে পিঁড়িতে বসে মেঝেতে থালা রেখে খাওয়ানোর রেওয়াজ ছিল।এখানে দেখা মিলবে স্টিলের থালা, গ্লাস, জগ, বাটিসহ সব বাসন।

খানার মধ্যে সবজি হয় নানা পদের। বেগুনভাজি, করলা ভাজি, কচুশাক, লালশাক, কলাভর্তা, শিমভর্তা আর ধনেপাতার ভর্তা প্রতিদিনের খাবার মেনু। সকালে একসময় আটার রুটির প্রচলন ছিল। এখন সকালের রুটির স্থলে ভাত, আলুভর্তা, ডিমভাজি আর ডাল। রাতের রান্না সীমিত আকারের। একপদ মাছ, সবজি আর ডাল। তবে দধি এখানে তিন বেলাই পাওয়া যায়, দধির খুব চাহিদা।

বিউটি বোর্ডিংয়ে বসে ইলিশের স্বাদ নিতে চাইলে খরচ করতে হবে ১৮০ টাকা। মুরগি ও খাসির মাংস ১০০, খিঁচুড়ি প্রতি প্লেট ৪০, পোলাও ৫০, সবজি ৩০, বড়া ১০, একবাটি মুড়িঘণ্ট মিলবে মাত্র ৭০ টাকায়, ভাজি ২০, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা পাওয়া যায় এখানে দাম পরবে ১৫-২০ টাকার মধ্যে।

বিউটি বোর্ডিংয়ের বর্তমান দুজন মালিকের মধ্যে একজন তারক সাহা। তিনি বলেন, তার বাবা প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও চাচা নলিনী কান্ত সাহা বাড়ীটি নির্মাণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আরো কয়েকজনের সাথে 'শহীদ' হন তার বাবা। এ স্থানটি ছিল বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির গুণী মানুষদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র। সমমনা মানুষদের নির্জলা আড্ডা চলতো দিনরাত। পঞ্চাশ, ষাট আর সত্তরের দশক ছিল বিউটি বোর্ডিংয়ের যৌবনকাল। এ সময় আড্ডা দিতে আসতেন ওই সময়ের প্রথিতযশা সাহিত্যিকেরা।

বোর্ডিংয়ে রয়েছে সব মিলিয়ে ২৭টি থাকার ঘর। এর মধ্যে ১৭টি সিঙ্গেল বেড ও ১০টি ডাবল বেড। সিঙ্গেল বেডের ভাড়া ২০০ টাকা আর ডাবল বেড ৪০০ টাকা।

এখন অবশ্য সেই আড্ডা আর বসে না বিউটি বোর্ডিংয়ে। হলেও খুব কম। দেখলে অনেকে হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবে না এখান থেকেই মোড় ঘুরে গিয়েছিলো একটি দেশের সাহিত্য-সংষ্কৃতির। সৃষ্টি হয়েছিল অন্য এক জাতিসত্ত্বার, যার মূলে ছিলো আড্ডাবাজ একদল মানুষ।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার বাইরে থেকে আসলে বাস, ট্রেন, লঞ্চ যেকোনভাবে আসা যাবে। মহাখালী থেকে আজমেরী, স্কাই লাইন বাস আসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। যেখান থেকে হেঁটে বা রিক্সা করে যাওয়া যায়। গাবতলী থেকে সাভার পরিবহন বাস আসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেখান থেকে রিক্সা করে যাওয়া যায়। সায়েদাবাদ থেকে রিক্সা বা উবার করে যাওয়া যায়। ট্রেনে এলে কমলাপুর নামতে হবে। সেখান থেকে উবার বা রিক্সা করে যাওয়া যায়। লঞ্চে সদরঘাট টার্মিনালে নেমে হেঁটে যাওয়া যায়, ৫ মিনিটের পথ।

থাকবেন যেখানে
চাইলে বিউটি বোর্ডংয়ে থাকতে পারবেন খরচ পড়বে সিঙ্গেল রুমের জন্য ২০০ টাকা আর ডাবল রুম ৪০০ টাকা। এছাড়াও পুরান ঢাকার বিভিন্ন মানের অসংখ্য হোটেল রয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews