গত নভেম্বরে সামরা লোকমান রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, যদি গাজায় যুদ্ধবিরতির ১ শতাংশ সুযোগ থাকে, তাহলে সেটা ট্রাম্পের চাপেই হতে পারে। তিনিই ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো পছন্দ। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প জিতেছেন এবং আগামী সোমবার তিনি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আবার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। তাঁর এ অভিষেক দিনকে সামনে রেখে হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে।
আরব মার্কিনি লোকমান বলেন, তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর ক্ষুব্ধ। চুক্তিটি তিনি আরও কয়েক মাস আগে করতে পারতেন। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ট্রাম্পের ভূমিকার কারণে বাইডেনের ওপর তাঁর ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ট্রাম্প তো এখনও হোয়াইট হাউসেও প্রবেশ করেননি। তার পরও তাঁর চেষ্টায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তি অনেক আগেই হতে পারত। এতে অনেকে প্রাণ বেঁচে যেত। তিনি বলেন, গাজায় যা হয়েছে এবং যে পর্যায়ে চুক্তিটি হয়েছে, তাতে বাইডেনকে বলতে হবে ‘জেনোসাইড জো’।
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরব মার্কিনিরা একচেটিয়াভাবে বাইডেন ও তাঁর দল ডেমোক্র্যাট পার্টিকে সমর্থন করেন। কিন্তু গত নভেম্বরের নির্বাচনে তারা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ান। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে তারা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ট্রাম্পকে ভোট দেন। এবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে ট্রাম্প এটাই প্রমাণ করলেন, ভোটাররা সঠিক ছিলেন।
আরব ভোটারদের মত পরিবর্তনের বিষয়টি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগানের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। আরব অধ্যুষিত ডেট্রয়েটের উপকণ্ঠ ডিয়ারবর্নে কমলা পেয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ ভোট। অধিকাংশ ভোটারই হয় ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, নয়তো গ্রিন পার্টির জিল স্টেইনকে। নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান ইয়েমেন বংশোদ্ভূত মার্কিনি মিশিগানের হ্যামট্রামকে মেয়র আমের গালিব। তখন তিনি বলেছিলেন, তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন, কারণ গাজায় যুদ্ধবিরতি তাদের কাছে অগ্রাধিকার।
অবশেষে গত বুধবার রাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়। ট্রাম্প এ চুক্তির সম্পূর্ণ কৃতিত্বই দাবি করেছেন। অন্যদিকে জো বাইডেন বলছেন, এ চুক্তি তাঁর কূটনৈতিক সফলতার অংশ। এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি ও তাঁর আসন্ন প্রশাসন চাপ সৃষ্টি না করলে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি কখনও হতো না। আগামী রোববার থেকে এ চুক্তি কার্যকর হবে।
ট্রাম্প জানান, তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভেন উইটকফ চাপ প্রয়োগ ও আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এ চুক্তির সঙ্গে জড়িত না থাকতাম, তাহলে চুক্তি কখনোই হতো না। আমরা চুক্তির গতিপথ পরিবর্তন করেছি এবং দ্রুতই করেছি। সত্যি বলতে, দায়িত্ব নেওয়ার আগে এটা একটা ভালো কাজ।’ যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব নিজের করে নিতে চাওয়ার জন্য তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিন্দা জানান ও তাঁকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে বর্ণনা করেন।
চুক্তি হলেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে আগামী রোববার থেকে। কিন্তু অন্তর্বর্তী এ সময়ে গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে দুই দিনে ১১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আরও ২৬৪ জন। নিহতদের মধ্যে ২৮ শিশু ও ৩১ নারী রয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। চুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নেতানিয়াহু তাঁর সরকারের কট্টরপন্থিদের বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন গাভির বলেছেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিলে তাঁর দল সরকার থেকে পদত্যাগ করবে। এ অবস্থায় শুক্রবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটি হয়।
সূত্র জানায়, গাভিরের দল বিরোধিতা করলেও অধিকাংশ দলই যুদ্ধবিরতি চায়।