আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা প্রচলিত ধারণা বিদ্যমান আছে, শরীরে পানি জমা হওয়া মানে কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়া। কিডনির সমস্যার কারণে শরীরে পানি জমা হয়, মুখ-হাত-পা-সহ পেটে পানি জমা হয়ে থাকে, এ কথা সত্য বটে, তবে কিডনির অসুস্থতা অত্যাধিক জটিল না হলে শরীরে পানি জমা হওয়ার কোনো কারণ নাই বা অন্যভাবে বলতে গেলে কিডনির অসুস্থতা খুব বেশি জটিল আকার ধারণ না করলে শরীরে পানি জমা হতে দেখা যায় না। ছোটদের বেলায় শরীরে পানি জমা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ কিডনি ফেলুর বা কিডনি ঠিকমতো কাজ না করা। যদি বাচ্চাদের শরীর অত্যাধিক ফুলে যায় তবে তার কারণ হিসেবে কিডনি ফেলুরকে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী করা হয়ে থাকে। বাচ্চাদের বেলায় শরীরে পানি জমা হওয়ার অন্য কারণগুলো হলো হার্ট ফেলুর, থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা, রক্তশূন্যতা, অপুষ্টি, লিভারজনিত সমস্যা এবং রক্ত কণিকার ক্যান্সার ইত্যাদি।

মানুষের শরীরে কেন পানি জমা হয়? তার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞান বেশ কিছু শারীরিক অবস্থাকে দায়ী করেছে। আমরা জানি, সুস্থ মানুষের শরীরে শতকরা ৭০ ভাগ পানি বিদ্যমান থাকে। এই বিদ্যমান পানির একটা বড় অংশ স্থায়ীভাবে শরীরের বিভিন্ন কলা/সেলের ভিতরে গাঠনিক পানি যা সব সময় একই অবস্থায় থাকে, যার ফলে এই পানিকে স্থায়ী কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অন্যভাবে বলতে গেলে এই পানি কম-বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা প্রতিদিন প্রচুর পানি খাদ্য হিসেবে পান করে থাকি, এ পানি খাদ্যনালির মাধ্যমে শোষিত হয়ে রক্তে প্রবেশ করে। রক্তে প্রচুর জলীয় অংশ বিদ্যমান থাকায় খাদ্যনালি হতে শোষিত পানি রক্তের জলীয় অংশের সঙ্গে মিশে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। কিডনিতে রক্ত ছাকনির মাধ্যমে রক্তের জলীয় অংশ এবং শরীরের উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় ও বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ লবণ আলাদা হয়ে প্রশ্রাব তৈরি হয়। যা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এই পদ্ধতিকে রক্ত পরিশোধনও বলা হয়। ঘামের মাধ্যমেও অনুরূপ প্রক্রিয়ায় বর্জ্যপদাথ, লবণ ও পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিছু পানি জলীয়বাষ্প হিসেবে শ্বাসের মাধ্যমেও শরীর থেকে বের হয়ে যায়। খাদ্য হিসেবে পানি গ্রহণ এবং প্রশ্রাব ও ঘামের সঙ্গে পানি বর্জনের মাধ্যমে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে। যদি কোনো কারণে কিডনি অত্যাধিক অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে শরীর থেকে পানি বের হতে না পারায়, শরীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শরীরে পানি জমা হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে হার্ট ফেলুরকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, বিশেষ করে বয়স্কদের বেলায়। হার্ট ফেলুরের ফলশ্রুতিতে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় হার্ট শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত পাম্পের মাধ্যমে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। শরীরে কম পরিমাণ রক্ত সরবরাহ হওয়ার ফলশ্রুতিতে কিডনিতে রক্ত সরবাহের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। এ কারণে প্রশ্রাব তৈরির পরিমাণও কমে যায়, যার ফলে ধীরে ধীরে শরীরে পানি জমা হতে থাকে। কারও অত্যধিক রক্তশূন্যতা দেখা দিলে রক্তের পানি ধারণক্ষমতা কমে গিয়ে রক্ত থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন কলায় জমা হতে থাকে এবং রক্তশূন্যতার জন্য ব্যক্তির হার্ট ফেলুরও দেখা দিয়ে থাকে। বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় শরীরে পানি জমা হওয়ার অন্যতম কারণ হার্ট ফেলুর, পূর্বেই বলেছি হার্ট ফেলুরের ফলে কিডনি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রশ্রাব তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। শরীরে রক্ত চলাচলের গতি কমে যাওয়ার জন্য রক্ত থেকে লবণ ও পানি বেরিয়ে শরীরের বিভিন্ন কলায় জমা হতে থাকে। যেমন পেটে পানি জমা হয়ে পেট ফুলে যাওয়া, পা, হাত ও মুখে পানি জমা হয়ে ফুলে যাওয়া। তাই অবহেলা না করে এসব বিষয়ে সচেতন ও যত্নবান হোন।

লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews