ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন বাংলাদেশ ফুটবলে দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত কাজী সালাউদ্দিন ও ফ্যাসিস্টদের দোসর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা মাহফুজা আক্তার কিরন। 

বিগত ১৬ বছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যের মহোৎসবে লিপ্ত ছিলেন সালাউদ্দিন-কিরনরা। বাফুফের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন ও বর্তমান মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজাসহ গুটিকয়েক কর্মকর্তার কারণে দেশের ফুটবল সুনাম হারিয়েছিল। 

সালাউদ্দিনের দেড় দশকের দুঃশাসনে দেশের ফুটবল হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। আর্থিক অনিয়মের কারণে বাফুফের বেতনভোগী সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে চার বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। সাবেক এমপি ও বাফুফের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীকে প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল ফিফা।

সালাউদ্দিন, কিরন ও সোহাগদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল। তদন্তের একপর্যায়ে শেখ রেহানার ছেলে ববি সিদ্দিকীর সরাসরি হস্তক্ষেপে দুদক সালাউদ্দিনকে তদন্ত থেকে অব্যাহতি দেয়। ববি সিদ্দিকীর সঙ্গে সালাউদ্দিনের মেয়ে কাজী সারাজিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। 

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গেও ছিল সালাউদ্দিন-সারাজিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সিভিল এভিয়েশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সফটওয়্যার সরবরাহ করতেন সারাজিন। এসএস সলিউশন নামে সারাজিনের একটি কোম্পানি রয়েছে। 

প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সফটওয়্যার সরবরাহের কাজ বাগিয়ে নিতেন সারাজিনরা। অনেক প্রতিষ্ঠানে পুরো কাজ শেষ না করেই বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে। আর এই কাজে সারাজিন তারেক সিদ্দিকী ও ববি সিদ্দিকীকে ব্যবহার করতেন।

সিভিল এভিয়েশনে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে কাজ না পেলে সালাউদ্দিন-সারাজিনরা বিভিন্ন কোম্পানিকে হয়রানি ও হেনস্তা করতেন। দুদককে কাজে লাগিয়ে শায়েস্তা করারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

বাফুফের সিলেট একাডেমির টাকা হাপিস করে দেওয়াসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে সালাউদ্দিন-কিরনের বিরুদ্ধে। কিরনের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মডুলাস কমিউনিকেশন্স নামে বাফুফের যাবতীয় কাজ করা হতো। এসব কাজে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারা করতেন তারা। ফিফা কর্তৃক বহিষ্কৃত বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ছিলেন দুর্নীতিবাজদের প্রধান দোসর।

২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা বাফুফের ব্যাপক দুর্নীতি ও নেতৃত্বের ব্যর্থতাসংবলিত প্রতিবেদন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছিল। ববি সিদ্দিকী ওই প্রতিবেদন আটকে দেন। সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি।

সাবেক এক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সেই গোপন প্রতিবেদন যুগান্তরের হস্তগত হয়েছিল। সালাউদ্দিনের চারিত্রিক দুর্বলতা ও দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নাম ভাঙিয়ে সরকারি ও বেসরকারি টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়া, বাফুফে সভাপতি ও মাহফুজা আক্তার কিরনের যৌথ দুর্নীতি, বাফুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলনে অনিয়ম, সিলেট বিকেএসপি ক্যাম্পাসে ফুটবল একাডেমির নামে দুর্নীতি, ফিফার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক আস্ফালন সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য চেয়ে সালাউদ্দিনকে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সালাউদ্দিন, কিরণ ও সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সেই রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি।

ফুটবল উন্নয়নের নামে রাশিয়ার সঙ্গেও লোকদেখানো চুক্তি করেছিলেন সালাউদ্দিন। পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করেছিলেন সালাউদ্দিনের মেয়ে সারাজিন ও জামাতা এলেক্স। সারাজিনের ভিয়েতনামি কোম্পানি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে সফটওয়্যার সরবরাহ কাজ বাগিয়ে নিয়েছিল। সফটওয়্যার সরবরাহ না করেই প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে সারাজিন।

দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানিকে পিজি হাসপাতাল সংলগ্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা কমিশন নিয়েছিল সালাউদ্দিন গংরা। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন এএফসির পালটা ফুটবল জোটে যোগ দিয়ে পাঁচ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ।

৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকেন সালাউদ্দিন-কিরনরা। তারপর সেই তথৈবচ অবস্থা। বিএনপি নামধারীদের সহযোগিতায় সালাউদ্দিন-কিরনরা আবার ফুটবলাঙ্গনে সক্রিয়। কয়েক দফা শ্রীলংকা ও মালয়েশিয়া ঘুরে এসেছেন দুজন। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই তারা যাতায়াত করছেন।

যদিও মতিঝিল থানায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। মেয়েদের ফুটবলে অস্থিরতা তৈরি করে কিরন-সালাউদ্দিনরা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ফিফা-এএফসির কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করার তৎপরতা রয়েছে এ দুজনের।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews