নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না এক্সিবিশন সেন্টারের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে জমেছে বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর। প্রতিবছরই মেলায় কোনও না কোনও পণ্যের নতুন আকর্ষণ রাখা হয়। গত আসরে শীর্ষে ছিল ‘পরি খাট’। তবে এবারের আসরে নতুন আকর্ষণ হিসেবে রাখা হয়েছে স্টিলের রেডি বাড়ি।
মেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন রঙের বাল্ব, গেট ও স্টিলের আসবাবপত্র দিয়ে তৈরি করা রেডি বাড়িতে দর্শনার্থীদের ভিড়। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন বাড়িটি আবার কেউ মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে তুলছেন ছবি। স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি এসব বাড়িতে প্রতি স্কয়ার ফিট ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা খরচ গুনতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে বাড়ি দেখতে আসা জুয়েল হোসেন বলেন, ‘বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি বাণিজ্য মেলায় স্টিল, বাল্ব ও গেট দিয়ে তৈরি করা রেডি বাড়ি বিক্রি করা হচ্ছে। দেখে ভালোই লাগলো। ইচ্ছা আছে একটা বাড়ি বানাবো।’
রাজধানীর উত্তরা এলাকার কাওসার মিয়া বলেন, ‘রেডি বাড়ি দেখলাম। কয়েকটা ছবি তুলেছি। ভিন্নতা রয়েছে বাড়িটিতে। দেখে ইচ্ছে জাগলো, বাজেট মিললে একটা বানাবো।’
বাড্ডা এলাকার সাজিদুল বলেন, ‘পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। এবারের মেলা ভিন্নরকমভাবে সাজানো হয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে রেডিমেড বাড়ির এখানে এসে বাড়িগুলো দেখলাম, খুব ভালো লাগলো। একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি বানাবো। কথা বললাম ম্যানেজারের সঙ্গে। ১৫ থেকে ২০ লাখের মতো খরচ যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।’
কেওয়াই টু টোনের সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল খায়ের রুবেল বলেন, ‘রাজধানীতে মেলার আসর চলাকালীন সময়ে স্টল নিয়েছিলাম। পূর্বাচলের মেলায় আমরা প্রথমবারের মতো এসেছি। আমাদের চিন্তা এখানে মার্কেটিং করা। তবে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। বাজেটের বিষয় রয়েছে তাই অনেকেই দেখে-জেনে যাচ্ছেন। সাধারণ বাড়ি বানালে ২০০০ টাকা প্রতি স্কয়ার ফিটে খরচ। তা ছাড়া কেউ ডুপ্লেক্স বাড়ি বানালে ২০০০ থেকে ২৭০০ টাকার মতো খরচ পড়বে। সব ধরনের বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। কেউ যদি অর্ডার কনফার্ম করে তবে আমরা তাদের লোকেশনে গিয়ে বাড়ি তৈরি করে দিয়ে আসবো। আশা করছি ভালো কিছু হবে।’
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে মেলা তত জমে উঠছে। প্রতিবার মেলায় নতুন কিছু আসে। এবারের মেলায় রেডি বাড়ি বেশ সাড়া ফেলেছে। সুন্দর বাড়িগুলো শৌখিন মানুষের চাহিদা পূরণ করবে কিছুটা হলেও।’
প্রসঙ্গত, এবারের মেলার আসরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্তোরাঁ আছে। দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশীয় বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, কার্পেট, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, আসবাব, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিশিয়াল চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলার সামগ্রী, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামিন, পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, গৃহসজ্জার উপকরণ ইত্যাদি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে।
ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করায় আগে থেকেই ঘরে বসে টিকিট কেটে সহজেই মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে। আবার কেউ কাটতে না পারলে মেলা প্রাঙ্গণে এলে টিকিট বুথ থেকে কেটে নেওয়া যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার জন্য সময়ক্ষেপণ কিংবা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।