সীমান্তে উত্তেজনা

আলোচনাই নিরসনের পথ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও স্থাপনা নির্মাণকে কেন্দ্র করিয়া বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের মধ্যে যেই উত্তেজনা সৃষ্টি হইয়াছে উহা অনাকাঙ্ক্ষিত হইলেও অসম্ভব নহে। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত, কারণ দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ বাংলাদেশ-ভারত কাহারও জন্যই মঙ্গলজনক হইতে পারে না। উপরন্তু, যেইখানে সর্বশেষ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও দুই দেশ আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়া সকল সমস্যার সমাধান করিতে সম্মত, সেইখানে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির পশ্চাতে ইতিবাচক কোনো উদ্দেশ্য থাকিতে পারে না। তবে চৌকা সীমান্তে ভারত যেইভাবে সীমানা আইন লঙ্ঘন করিয়া বাহুবল প্রদর্শনপূর্বক কাঁটাতার স্থাপনে চেষ্টিত; আলোচ্য উত্তেজনা ছিল মূলত উহারই ফল। তাই তাহা অপ্রত্যাশিতও ছিল না। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে একটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখার অন্তত ১৫০ গজের মধ্যে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ বারিত হইলেও সম্প্রতি ভারত চৌকা সীমান্তের ১০০ গজের মধ্যে একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণ করিয়াছে; গত ৫ জানুয়ারি যেখানে তাহারা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা চালায়। শুধু উহা নহে, বিজিবির বাধা এবং দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠক হইলেও বিএসএফ স্থানীয় ভারতীয়দের সহায়তায় উক্ত অবৈধ নির্মাণকার্য অব্যাহত রাখে। এমনকি সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে। এই অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিকরাও সীমান্তে জড়ো হন। বিজিবিও অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়াছে। অবশ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। প্রতিবেদনমতে, বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নে সীমান্তে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, অতিরিক্ত জওয়ান দুই দেশই প্রত্যাহার করিয়াছে। উভয় দেশের সীমান্তেই হামলার আশঙ্কায় সৃষ্ট বাংকারগুলি রহিয়া গেলেও, বিএসএফ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখিয়াছে। নির্মাণসামগ্রীর কিছু অংশও সরাইয়া লওয়া হইয়াছে। 

শুধু চৌকা সীমান্তের নহে; বিএসএফ সীমানা আইন অমান্য করিয়া মঙ্গলবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ধবলসূতী সীমান্তেও শূন্যরেখা বরাবর লাইটপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা চালায়। ইহার পূর্বে গত ১ জানুয়ারি একই উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া সীমান্তেও তাহারা শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া ও লাইটপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করিয়াছে। তাহাদের অনুরূপ চেষ্টা দেখা যায় নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বস্তাবর সীমান্তের ঐপারেও। অবশ্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজিবি সদস্যদের প্রতিবাদে পিছু হটেন বিএসএফ সদস্যরা। ইহাও বলা প্রয়োজন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করিবার বিষয়ে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি প্রদানের পরও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনকারী ওই হত্যা বন্ধ হয় নাই। দুই দেশের মধ্য দিয়া প্রবাহিত নদ-নদীর পানির সুষম বণ্টনসহ অন্য অনেক বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ আমলে লইবার ক্ষেত্রেও ভারতীয় শাসকদের অনীহা সকলের জানা। এই সকল বিষয়ও যে আলোচ্য সীমান্ত উত্তেজনার পশ্চাতে ভূমিকা রাখিতেছে, ইহাও বলা বাহুল্য।

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননাকর বিএসএফের সীমানা আইন লঙ্ঘনকারী তৎপরতা প্রতিরোধে বিজিবি যেই ভূমিকা রাখিয়াছে, উহা অসংগত নহে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমির সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের অংশরূপে সীমান্তে বিজিবির নজরদারি অব্যাহত থাকিবে। একই সঙ্গে ভারতকে আলোচনার টেবিলে আনয়ন প্রচেষ্টায়ও বিজিবি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ঔদাসীন্য প্রদর্শন করিবে না। কারণ, বাংলাদেশ সকল প্রতিবেশীর সহিত বৈরিতা নহে বন্ধুত্ব চাহে– উহা ঐ সকল তৎপরতার মধ্যেই প্রতিফলিত। তবে ভারত সরকারকেও উপলব্ধি করিতে হইবে, দুই দেশের মধ্যকার দৃঢ় বন্ধুত্ব যদ্রূপ উভয়েরই বিকাশ ও সমৃদ্ধির স্বার্থে জরুরি, তদ্রূপ পরস্পরের প্রতি সমমর্যাদা প্রদর্শন না করিলে সেই বন্ধুত্ব গড়িয়া উঠে না। সর্বোপরি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও এহেন সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews