ইয়াল জামিরকে ইসরায়েলের নতুন চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সেনাপ্রধান) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি দেশটির কৌশলগত অগ্রাধিকার এবং সামরিক কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিয়োগ অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে ইসরায়েলকে ঠেলে দিতে পারে। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ খবর জানিয়েছে।

জামির ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল। তিনি হার্জি হালেভির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে সংঘটিত অভিযানে সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছিলেন।

সাধারণ পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের নিয়োগ হয়তো এতটা রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করত না। কিন্তু ইসরায়েলে এই ধরনের নিয়োগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হয়। এর কারণ কেবল সামরিক বাহিনীর রাজনীতির সঙ্গে গভীর জড়িত থাকাই নয়, বরং অনেক সাবেক সেনাপ্রধান, যেমন এহুদ বারাক, বেনি গান্তজ এবং গাদি আইজেনকোট দায়িত্ব পালন শেষে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে জামিরের নিয়োগকে ইসরায়েলের ৭ অক্টোবরের ব্যর্থতাকে আড়াল করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে আরও আক্রমণাত্মক ও প্রচলিত সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গাজায় যুদ্ধের সময় জামির ইসরায়েলের সামরিক সংঘাতের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনি বিমান হামলার বদলে দীর্ঘস্থায়ী স্থল অভিযানের পক্ষে জোর দিয়েছিলেন।

২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কমান্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জামির গাজায় তীব্র সামরিক হামলা তদারকি করেছেন। এসবের মধ্যে বিমান হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের সীমান্ত প্রতিবাদে সহিংস দমন-পীড়নও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ইসরায়েলের যুদ্ধযন্ত্রকে শক্তিশালী করেছেন, অস্ত্র চুক্তি নিশ্চিত করেছেন এবং স্থানীয় অস্ত্র উৎপাদন সম্প্রসারিত করেছেন।

জামিরের নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসেছে। কেবল গাজায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যেই নয়, বরং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই নিয়োগ দেওয়া হলো।  ইসরায়েল প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে নতুন দাবি উত্থাপন করে যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টাকে পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করার পাশাপাশি জেনিন, নাবলুস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি শহরে প্রাণঘাতী অভিযান তীব্র করেছে, যাতে বহু লোক নিহত হয়েছে।

জামিরের পরিবার ১৯২০-এর দশকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সময় ইয়েমেন থেকে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করে। তার দাদা, আহারন, ইরগুনের সদস্য ছিলেন। ইরগুন একটি জায়নবাদী সংগঠন যা ব্রিটিশ বাহিনী এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী ছিল।  এই গোষ্ঠীটিই পরে লিকুদ পার্টিতে পরিণত হয়। যে দলের পক্ষ থেকে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

২০১৮ ও ২০২২ সালে চিফ অব জেনারেল স্টাফের পদে তার বারবার মনোনয়ন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নেতানিয়াহুর লোক হিসেবে পরিচিতি তাকে ইসরায়েলের সামরিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অজনপ্রিয় করে তুলেছিল।

তবে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বাইরে, জামিরের নিয়োগ আরেকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ: তার সামরিক পটভূমি ইসরায়েলের কৌশলগত অগ্রাধিকারে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে একজন বাদে সব ইসরায়েলি চিফ অব জেনারেল স্টাফ হয় প্যারাট্রুপার্স বা বিশেষ বাহিনী থেকে নেওয়া হয়েছে। জামির সাঁজোয়া বাহিনী থেকে এসেছেন।  

জামিরের মতবাদ ইসরায়েলের সামরিক কৌশলে একটি মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। সাঁজোয়া ডিভিশনের ওপর তার গুরুত্বারোপ এবং বিমান বাহিনীর শক্তির ওপর নির্ভরতা হ্রাস কেবল একটি কৌশলগত সমন্বয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে না, বরং একটি কৌশলগত পুনর্বিন্যাস হিসেবেও দেখা হচ্ছে। যা সেনাবাহিনীকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে।

২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধের অপমানজনক ব্যর্থতার পর শীর্ষ স্তরের পুনরায় প্রশিক্ষণ কোর্সের কমান্ডারদের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। ওই সময় স্থলযুদ্ধে ইসরায়েলের দুর্বলতা প্রকাশ হয়েছিল। সেই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তার সামরিক প্রস্তুতির দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করেছে।

নিয়োগের পর তার প্রথম বক্তৃতায় জামির ২০২৫ সালকে ‘যুদ্ধের বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তার এমন বিবৃতি কেবল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয় না, বরং ইসরায়েলের বৃহত্তর আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিতও দেয়। সামরিক স্বনির্ভরতার ওপর তার জোর দেওয়া গাজার বাইরে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। যা সম্ভবত লেবানন, সিরিয়া বা এমনকি ইরান পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।  

যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলের বাইরে, জামির ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত শাস্তির একজন কণ্ঠস্বর সমর্থক। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং সাবেক জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের মতো  তিনি প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের অপরিহার্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার পক্ষে সমর্থন করেছেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews