করোনা মহামারিতে অনভ্যস্ততা এসেছিল পড়াশোনায়। ক্লাসে উপস্থিতির পরিবর্তে অনলাইনেই পাঠদান করায় লেখায় এসেছিল জড়তা। পরীক্ষা পিছিয়েছে বন্যায়। শিক্ষাজীবনের প্রথম বড় কোনো স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষার পূর্বে এমন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ফলে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নিয়ে বাড়তি উৎকণ্ঠা ছিল শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে। কিন্তু সব শঙ্কা পেছনে ফেলে বিগত বছরের চেয়ে এবার ভালো ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। এ কারণে রাজধানীর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো।





সোমবার ফল ঘোষণার আগেই স্কুলগুলোতে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। ওয়েবসাইট বা মোবাইল এসএমএসে ফল জানা গেলেও স্কুলের প্রিয় প্রাঙ্গণের টানে ছুটে গিয়েছিল তারা। জীবনের প্রথম বড় কোনো সার্টিফিকেট। তাই প্রত্যাশার চাপও ছিল বেশি। কিন্তু ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সব উৎকণ্ঠাকে কাটিয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। স্কুলের নোটিশ বোর্ডে ফল শিট দেখার জন্য ভিড় করেন অনেকে। বাঁধভাঙা উৎসবে যোগ দিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরাও। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকে। দলগতভাবে স্কুলের নামে স্লোগান, চিৎকার আর হৈ-হুল্লোড় করে স্কুল ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখে।

জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, করোনায় আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার। অনলাইনেই তারা দু’বছর কাটিয়েছে আমাদের সঙ্গে। আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী তাদেরকে রুটিন করে ক্লাস নিয়েছে।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী বলেন, মহামারিতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অনেকটা অনভ্যস্ত হয়ে যায়। অনলাইন ক্লাস করায় লেখায় কিছু পিছিয়ে পড়ে। সব বাধা অতিক্রম করেই তারা ভালো ফল করেছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল : এসএসসির ফল ঘোষণার পর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার এসএসসি পরীক্ষায় তাদের প্রতিষ্ঠানের ৯৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। দুপুরে বেইলী রোডে অবস্থিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে সরেজমিনে দেখা যায়, দলে দলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বোর্ডে ফল দেখছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বোর্ডে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত ফল দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

ভিকারুননিসার শিক্ষার্থী নাবিলা নুসরাত জাহান বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে ১০ বছরের পড়াশোনার ফল। আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি। ১০ বছরের কষ্টের ফল পেয়েছি আজ। এই ফলের জন্য মা-বাবা ও শিক্ষকরাও অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল কলেজ : রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৯৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে এ বছর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা-এ তিন বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫২০ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫১৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫৭ জন। অকৃতকার্য হয়েছে একজন।

হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় : হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ। বিজ্ঞান বিভাগে সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিন বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৫৪ জন। এর মধ্যে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২৯ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে এবার মানবিক বিভাগ থেকে ৩১ জন পরীক্ষার্থী ছিল। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পরীক্ষা অংশ নিয়েছিল ৬৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৫ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৫৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৬ জন।

উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় : এই প্রতিষ্ঠানটিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি থেকে মোট ২৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কৃতকার্য শিক্ষার্থীর হার শতভাগ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে ১৭৭ জন। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পেয়েছে ১৩ জন।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয় : এই বিদ্যালয় থেকে মোট ২৮৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কৃতকার্য শিক্ষার্থীর হার ৯৮.৯৫ ভাগ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০০ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে ১৮৮ জন আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পেয়েছে ১২ জন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল : মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী জানান, তাদের বিদ্যালয় থেকে দুই হাজার ১৮২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোট শিক্ষার্থী ছিল দুই হাজার ৬৭৮ জন। পরীক্ষা দিয়েছে দুই হাজার ৬৭১ জন। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮২ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী। অকৃতকার্য হয়েছে ১০ জন। ৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় : মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ২ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ বছর প্রতিষ্ঠানটিতে পরীক্ষার্থী ছিল ৩ হাজার ৫৭৫ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬১ জন। মোট উত্তীর্ণ ৩ হাজার ৫৪০ জন। অনুত্তীর্ণ ২১ জন। ১৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে মনিপুর স্কুল। ২০২১ সালেও সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ এ প্রতিষ্ঠানের দখলে ছিল।

মাইলস্টোন কলেজ : প্রতি বছরের মতো ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলে অসাধারণ সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছে রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজ। এই কলেজ থেকে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে মোট ১ হাজার ৬৭৯ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১ হাজার ৬৭৬ জন। পাশের হার ৯৯.৮২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৫০ জন। জিপিএ-৫ অর্জনের হার ৭৪.৫৮ শতাংশ।

পুরান ঢাকার চিত্র : এসএসসির ফল প্রকাশের পর আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে রাজধানীর পুরান ঢাকার শিক্ষার্থীরা। সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা গভ. মুসলিম হাই স্কুলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে শিক্ষার্থীরা।

ঈর্ষণীয় ফল করেছে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল। স্কুলটিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ৮৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫৮ জন। স্কুলটির মোট ৩১০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ৩০৯ জন এবং উত্তীর্ণের হার ৯৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

প্রতিবছরের মতো এবারও সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজরের অবস্থিত সেন্ট ফ্রান্সিন জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল। এ বছর ২৮০ জন ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ২১০ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫ এর হার ৭৫ শতাংশ এবং পাশের হার শতভাগ।

ঢাকা গভ. মুসলিম হাইস্কুলে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ মিলে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৪ জন। বিজ্ঞান বিভাগের ৫৫ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩ জন। বাণিজ্য বিভাগের ৯০ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ জন।

পুরান ঢাকা বাংলাবাজারে অবস্থিত কে. এল. জুবিলী স্কুলের মোট ৩৫০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৩৪৮ জন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩২১ জন এবং অনুত্তীর্ণ হয়েছে ২৯ জন। পাশের হার ৯২ দশমিক ২৪ শতাংশ।

বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১৪ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোট ২১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন বাদে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।

পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৭৮ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ২৭০ জন। পাশের হার ৯৭ দশমিক ১২ শতাংশ। মোট শিক্ষার্থী মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪১ জন।

মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় : এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার শাহীন জানান, তাদের বিদ্যালয় থেকে ২৯৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোট শিক্ষার্থী ছিল ৩৪৮জন। পরীক্ষা দিয়েছে ৩৪৮ জন। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন।

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় : মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান তাহেরা আক্তার জানান, তাদের বিদ্যালয়ের ২৭৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোট শিক্ষার্থী ছিল ৩৮২ জন। পরীক্ষা দিয়েছে ৩৮২ জন। পাশের হার ৯৮.৯৫ শতাংশ। অকৃতকার্য হয়েছে ০৪ জন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews