হত্যা মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি উপাধ্যক্ষ ড. আবদুস শহীদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আজমপুরে রাইদা পরিবহনের বাসচালক আলমগীর হোসেনকে (৩৪) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক চার মন্ত্রীসহ আটজনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই আবদুল হালিম ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে তাঁর আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলাসূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট আজমপুরে বাসচালক আলমগীর হোসেন গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় তাঁর মা আলেয়া বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় ৬ অক্টোবর হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৮ জনকে আসামি করা হয়। মঙ্গলবার আবদুস শহীদের উত্তরার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় বাসা থেকে ৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আহম্মদ আলী জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তরায় ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে। একটি মামলা থানা পুলিশ তদন্ত করছে। বাকি দুটি মামলা তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা, স্বর্ণালংকার ও বিদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে। জব্দ টাকার পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি। তবে গণনা শেষে পুরো হিসাবটা জানা যাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে বিজয়ী হওয়ার পর কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা ছয়বারসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ড. আবদুস শহীদ। এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক চার মন্ত্রীসহ আটজনের মোট ৪১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরীফুর রহমান ও মো. ইমরান আহম্মেদের পৃথক দুটি আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে যাওয়া আসামির মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, সাবেক এমপি হাজি মো. সেলিম ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত রয়েছেন। আদালতসূত্রে জানা গেছে, এদিন তাঁদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর শুনানি শেষে দুই মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর মধ্যে হাই কোর্টের জাল ভোটের ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় পাঁচ দিন ও বাড্ডা থানার হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ ৪৯ জন আরও ১৪৪ মামলায় গ্রেপ্তার : আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ ৪৯ আসামিকে রাজধানীর বিভিন্ন থানার ১৪৪টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকে কেন্দ্র করে এসব মামলা হয়। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ ও শরীফুর রহমানের আদালতে তাদের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গ্রেপ্তার দেখানো আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক এমপি কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুস সোবহান গোলাপ, সাদেক খান, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, হাজি সেলিম, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার সাবেক পরিচালক কমোডর মনিরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফী, বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সাবেক কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক, বাড্ডা থানা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার পিন্টু ও পুলিশের সাবেক ডিসি মশিউর রহমান। এর মধ্যে আতিকুলকে ১৩ মামলায়, মামুনকে ১৬ মামলায়, কামাল আহমেদকে ১২ মামলায়, পলককে ১০ মামলায়, আনিসুলকে ৯ মামলায়, শাজাহান খানকে ৬ মামলায়, সালমান এফ রহমানকে চার মামলায়, দীপু মনিকে পাঁচ মামলায়, মেনন ও রাজ্জাককে তিন মামলায়, ব্যারিস্টার সুমন, সাদেক, হাজি সেলিম এবং জিয়াউলের দুটি করে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।