লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং বা ‘লাইডার’ প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই নিখুঁতভাবে ছোটখাটো দূরত্ব মাপা যায়। লাইডার সেন্সর অদৃশ্য আলোর রশ্মি ছুড়ে দিয়ে সেটি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসতে কতটা সময় লাগছে—সেটাই পরিমাপ করে সেন্সর থেকে কতটুকু দূরে প্রতিফলনটি হয়েছে, সেটা মাপতে পারে। এভাবে অসংখ্য পরিমাপ করার মাধ্যমে সেন্সরের সামনে থাকা স্থানের দূরত্ব ও গভীরতার ম্যাপ তৈরি করা যায়, যেটাকে বলা হয় ডেপথ ম্যাপ।
সাধারণত ভূ-প্রকৃতি বা সমুদ্রের তলদেশের ম্যাপ তৈরির জন্য প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হলেও বেশ কিছু অ্যাপল ডিভাইসেও সেন্সরটি যুক্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে আছে আইফোন ১২ প্রো, এটির পরবর্তী প্রো সিরিজের আইফোন ও আইপ্যাড প্রো ২০২০ এবং এর পরবর্তী সিরিজের আইপ্যাড প্রো। যেসব ব্যবহারকারী এসব ডিভাইস ব্যবহার করছে, তারা লাইডার সেন্সরের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কাজে লাগাতে পারে বেশ কিছু অ্যাপ।
শুরুতেই লাইডার সেন্সরের সবচেয়ে বড় ব্যবহার, মেসার অ্যাপ। যেকোনো জিনিসের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা মাপার পাশাপাশি দূরত্ব মাপার জন্য অ্যাপটি অত্যন্ত কাজের। অ্যাপটি চালু করে ক্যামেরাটি যা মাপা প্রয়োজন, তার দিকে তাক করলেই চলবে। এ ছাড়া স্ক্রিনে দুটি পয়েন্ট বাছাই করে তার মধ্যকার দূরত্বও পরিমাপ করা যাবে। অ্যাপটির সবচেয়ে বড় ফিচার, চাইলেই ক্যামেরার মাধ্যমে মেজারমেন্টসহ ছবি তুলে সেটা করা যাবে শেয়ার।
লাইডার সেন্সর ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করা সম্ভব সেটি হচ্ছে অগমেন্টেড রিয়ালিটি বা এআর। এআর নিয়ে প্রচুর প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও স্ন্যাপচ্যাটের চেয়ে জনপ্রিয় আর কোনোটি নয়। লাইডার ব্যবহার করে তারা বেশ কিছু ফিল্টার ও লেন্স তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে বাস্তবতার সঙ্গে সিজিআই যুক্ত করে তৈরি করা যাবে মজার সব ছবি ও ভিডিও। সেলফিতে পুরোদস্তুর সুপারহিরো কস্টিউম থেকে শুরু করে ভিডিওতে হাত থেকে লেজার মারার মতো সব লেন্স এর মধ্যেই অ্যাপটিতে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মাইক্রোসফট অবশ্য লাইডার সেন্সর কাজে লাগিয়েছে অন্যভাবে। সিইং এআই নামের অ্যাপটি লাইডারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর চারপাশে কী আছে, সেটা শনাক্ত করে ব্যবহারকারীকে বর্ণনা করে শোনাতে সক্ষম। লাইডার ছাড়া সেটি কাজ করে না বিষয়টি তা নয়, বরং লাইডার থাকলে বেশি কার্যকর। অ্যাপটি যারা পুরোপুরি দৃষ্টি না হারালেও চারপাশে দেখতে কষ্ট হয় তাদের জন্য তৈরি।
সব শেষে যেটির কথা না বললেই নয়, সেটি স্ক্যানিভার্স।
লাইডারের সেন্সর কাজে লাগিয়ে যেকোনো বস্তুর থ্রিডি মডেল তৈরি করা যায় অ্যাপটির মাধ্যমে। সেগুলো পরে থ্রিডি গ্রাফিকসের কাজেও লাগানো সম্ভব বা কিছুটা সম্পাদনা করে নতুন ডিজাইনের বস্তু তৈরি করে সেটা থ্রিডি প্রিন্টও করা যায়। তবে এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার গেমের জন্য মডেল তৈরির রেফারেন্স অবজেক্ট তৈরির জন্য।
লাইডারের প্রসার এখনো ঘটেনি। অগমেন্টেড রিয়ালিটি বা এআর কনটেন্ট তৈরি ছাড়া লাইডারের তেমন ব্যবহার এখনো নেই।
বাস্তব দুনিয়ায় ভার্চুয়াল অবজেক্ট বসিয়ে তৈরি গেম বা ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি দালান আর রাস্তার ওপরেই ম্যাপের তথ্য দেখানো, এমন সব ব্যবহারের জন্যই লাইডার নিয়ে স্মার্টফোন নির্মাতারা কাজ করছে। তবে আইফোনের বাইরেও লাইডার প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ডিভাইস বাজারে না আসা পর্যন্ত এআরের প্রসার ঘটবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।