পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের প্রভাব পড়ল ক্রিকেটে ওপরও। ভারতের ড্রোন হামলার প্রেক্ষিতে সরিয়ে নেওয়া হলো পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের বাকি অংশ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পিএসএলের ফাইনালসহ বাকি থাকা আটটি ম্যাচের চূড়ান্ত সূচি যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে।
গতপরশু রাতে রাওয়ালপিন্ডিতে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল করাচি কিংস ও পেশোয়ার জালমির। তবে স্টেডিয়ামের কাছে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিকালে ম্যাচটি স্থগিত করা হয়। এরপর ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে জরুরি সভায় বসেন পিসিবির চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। কয়েক দফা বৈঠকের পর মধ্যরাতে আসে পিএসএল পাকিস্তান থেকে আরব আমিরাতে স্থানান্তরের ঘোষণা।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের কাছে একটি ড্রোনসহ মোট ২৮টি ভারতীয় ড্রোন ‘নিষ্ক্রিয়’ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তিনি এই ড্রোন হামলাকে ‘দেশি ও বিদেশি ক্রিকেটারদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিযোগ তুলেছেন। চলতি পিএসএলে আছেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের মোট ৩৭ জন বিদেশি খেলোয়াড়। সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানে থাকতে অনিচ্ছুক তারা।
এদিকে, আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে, ধাক্কা খেতে হয় তাদের- কারণ দুবাইয়ের ভেন্যুটি এরমধ্যেই বুক করে রেখেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। আর প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থেই আইপিএল আয়োজনে অপারগতা জানিয়েছে আমিরাত ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। সংবাদে তারা জানায়, আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডকে আইপিএল ২০২৫-এর বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল ভারত। তবে দুবাইয়ে আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে ইসিবি, কারণ তারা ইতিমধ্যেই পিসিবির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত চুক্তিতে আবদ্ধ রয়েছে। গত ৮ মে রাতে এই চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি ঘোষণা করা হয়।
আরব আমিরাতের প্রত্যাখ্যানে আইপিএল আয়োজনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আপাতত এক সপ্তাহের মতো এই আসর স্থগিত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। লিগ পর্বের ১২টিসহ এবারের আইপিএলে মোট ১৬টি ম্যাচ বাকি আছে। পূর্বের সূচি অনুযায়ী, প্রথম পর্বে আহমেদাবাদে তিনটি, লক্ষেèৗ ও ব্যাঙ্গালুরুতে দুটি করে এবং হায়দরাবাদ, দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বাই ও জয়পুরে একটি করে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্লে-অফ পর্বের ম্যাচগুলো গড়ানোর কথা ছিল হায়দরাবাদ ও কলকাতার মাঠে। এখন সেপ্টেম্বর মাসে আইপিএলের বাকি ম্যাচ আয়োজনের সম্ভাব্য সময় জানিয়ে বিকল্প চিন্তা করছে বিসিসিআই। তবে, এই সময়সূচি এশিয়া কাপ ২০২৫-এর সঙ্গে সংঘর্ষে আসতে পারে, যার ফলে উভয় টুর্নামেন্টের লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় জটিলতা তৈরি হতে পারে।
বিসিসিআই আপাতত এক সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যম। শেষ পর্যন্ত দেশের বাইরে এই আসর আয়োজন সম্ভব না হলে ভারতের দক্ষিণে চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালুরুতে বাকি ম্যাচগুলো হতে পারে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে এই ভেন্যু দুটির দূরত্ব অনেক দূরে।
গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালায় ভারত। এরপর থেকে সীমান্তে গুলি বিনিময়সহ পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তানও ইতোমধ্যে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ভারতে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৮ জন নিহত হয়েছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশির মধ্যে গত কয়েক দশকের ভেতরে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।