কিছু স্তন্যপায়ী কেন অতিবেগুনী আলোয় জ্বলে ওঠে?

কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী অতিবেগুনী বা ইউভি আলোতে জ্বলে ওঠে। কিন্তু কেন এমনটি ঘটে? এর উত্তর উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

অস্ট্রেলিয়ান কোনো কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী কেন অতিবেগুনি আলোতে জ্বলে ওঠে তার কারণ খতিয়ে দেখেছেন ‘জেমস কুক ইউনিভার্সিটি’ বা জেসিইউ-এর গবেষকরা।

গবেষক লিন্ডা রেইনহোল্ডের নেতৃত্বে এ অদ্ভুত ঘটনার পেছনের রসায়নকে বোঝার চেষ্টা করেছে গবেষক দলটি। এ ঘটনাটি ‘ফটোলুমিনেসেন্স’ নামে পরিচিত।

গবেষণায় ইঁদুর, ব্যান্ডিকুট, পসাম, বাদুড় ও গাছ-কাঙ্গারুর মতো অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে রহস্যময় এই জ্বলে ওঠার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন গবেষকরা।

ফটোলুমিনেসেন্স ঘটে যখন প্রাণীর লোমে থাকা কিছু বিশেষ অণু ইউভি আলো শোষণ করে ও সেটা দৃশ্যমান আলো হিসেবে আবার ছড়িয়ে দেয়। ফলে একটা জ্বলে ওঠার মতো দৃশ্য তৈরি হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

রেইনহোল্ড বলেছেন, এ জ্বলে ওঠার জন্য দায়ী নির্দিষ্ট কিছু অণু শনাক্ত করতে চেয়েছে গবেষণা দলটি, যাকে লুমিনোফোরস বলা হয়। কিছু প্রাণীর শরীরে দেখা যাওয়া উজ্জ্বল গোলাপি রঙের কারণটা জানতেই এ গবেষণা করেছে তারা।

গবেষণার জন্য রাস্তায় দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া প্রাণীদের লোম সংগ্রহ ও ইচ্চ কর্মক্ষমতার তরল ক্রোমাটোগ্রাফি নামের এক কৌশল ব্যবহার করে সেগুলো পরীক্ষা করেছে গবেষণা দলটি।

এ কৌশলটি লোমের রসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করতে ও ফটোলুমিনেসেন্স-এ জড়িত নির্দিষ্ট কিছু অণু চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে গবেষকদের।

গবেষণায় দুটি প্রজাতির ব্যান্ডিকুটের ওপর নজর দিয়েছেন তারা। একটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের লম্বা নাকওয়ালা ব্যান্ডিকুট ও আরেকটি বাদামী রঙের ব্যান্ডিকুট। এরা উভয়ই ইউভি আলোতে স্পষ্টভাবে জ্বলে ওঠে।

গবেষকরা এ দুই প্রজাতির ব্যান্ডিকুটের সঙ্গে তুলনা করেছেন অন্যান্য ফটোলুমিনেসেন্ট স্তন্যপায়ী প্রাণীর। যার মধ্যে রয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের কোয়েল, কপারী ব্রাশটেল পসাম, গাছ-কাঙ্গারু, ইঁদুর ও প্ল্যাটিপাস।

গবেষণা দলটি বলছে, ব্যান্ডিকুট, কোয়েল ও পসামের লোমে যে উজ্জ্বল গোলাপি আভা দেখা যায় তা ‘পোরফিরিন’ নামের রাসায়নিক যৌগ তৈরির কারণে ঘটে। পোরফিরিন এক ধরনের প্রাকৃতিক অণু, যা মানব রক্তেও পাওয়া যায় এবং ইউভি আলোতে জ্বলে ওঠতে পারে।

এ ছাড়াও, ‘ট্রিপটোফ্যান’ নামের এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডের বিপাকও চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা, যা মানুষের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার জন্য পরিচিত ও এই জ্বলে ওঠার পেছনেও কাজ করে এটি।

রেইনহোল্ড বলেছেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ান স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোমের ফটোলুমিনেসেন্ট রসায়ন নিয়ে করা এটিই প্রথম গবেষণা। গবেষণাটি কেবল দীর্ঘদিনের এক রহস্যই সমাধান করেনি, বরং প্রাণীদের লোমের রসায়নিক গঠন ও এর বিবর্তনী উদ্দেশ্য নিয়ে আরও গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘পিএলওএস ওয়ান’-এ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews