মাত্র কিছুদিন হলো জাতি দেখেছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো ভয়াবহ বন্যা কীভাবে বাংলাদেশের পূর্ব-মধ্যাঞ্চলকে প্লাবিত করেছে। অতি বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবগুলো আর দূরবর্তী হুমকি নয়-এগুলো এখন কঠিন বাস্তবতা। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশ আবারও জলবায়ু সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশ পরিবেশগত সাসটেইনেবিলিটি, সব খাতে সবুজ অনুশীলনগুলোতে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পকে অবশ্যই এ রূপান্তরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

অর্থনৈতিক সাসটেইনেবিলিটি অভ্যন্তরীণভাবেই পরিবেশগত সাসটেইনেবিলিটি এর সঙ্গে যুক্ত। এ দুটি ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা থাকার অর্থ হলো আর্থিক এবং সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া। জলবায়ু প্রভাবিত ব্যাঘাতগুলো দেশকে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, সমাজের সামগ্রিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে। তাই নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণে পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এটি শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, বরং অর্থনীতির সুরক্ষা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকার নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ অর্জন তথা সাসটেইনেবিলিটি এর গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় লক্ষ্য হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, শান্তিতে নোবেলজয়ী, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ এবং সামাজিক ব্যবসা ধারণার প্রবর্তক, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসও তাঁর সাম্প্রতিক একটি বইতে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। টেকসই বাংলাদেশের জন্য ড. ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি সবুজ অর্থনীতির দিকে ক্রমেই ঝুঁকে পড়া বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতির মূলে সাসটেইনেবিলিটিকে একীভূত করার ওপর জোর দেয়।

পোশাক খাতের জন্য নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ অর্জন কোনোভাবেই আর বিকল্প নয়; এটি অব্যাহত প্রবৃদ্ধির অর্জনের জন্য একটি পূর্বশর্তও বটে। বিশ্বব্যাপী টেকসই এবং নৈতিকভাবে উৎপাদিত পোশাকের চাহিদা বাড়ছে এবং ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব বিষয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে সচেতন হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক আইন ও প্রবিধানগুলো, যেমন ইইউ গ্রিন ডিল, সাসটেইনেবিলিটি এর জন্য নতুন মান নির্ধারণ করছে, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ সব দেশকে প্রভাবিত করবে।

বাংলাদেশের পোশাক খাত ভবিষ্যতের পরিবেশগত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য অভিযোজন যোগ্যতা অর্জন এবং ক্রেতাদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যেই সাসটেইনেবিলিটির উদ্যোগে নিজেকে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত করেছে। জ্বালানি-দক্ষ প্রযুক্তি গ্রহণ থেকে শুরু করে পানির ব্যবহার কমানো এবং বর্জ্য কমানোর মাধ্যমে খাতটি সাসটেইনেবিলিটি এর দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বাংলাদেশ এখন একটি নতুন যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একটি জাতির বিস্ময়কর রূপান্তর, একটি জাতি অটল প্রত্যয়ী হয়ে, চিন্তা মননশীলতায় এগিয়ে ভবিষ্যতের পরিবর্তনগুলো আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে উন্মুখ হয়ে কীভাবে নিজেকে একটু একটু করে রূপান্তরিত করছে, বিশ্ববাসী তা আজ দেখছে। এ নতুন বাংলাদেশকে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে নয়, বরং একই সঙ্গে সাসটেইনেবিলিটি, অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক ন্যায্যতার প্রতি অঙ্গীকার দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আজ আমরা যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছি, সেগুলোই এ জাতির ভবিষ্যৎ রূপদান করবে, নির্ধারণ করে দেবে যে পরিবেশগত এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো দ্বারা ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবিত এ বিশ্বে আমরা নিজেদের অগ্রগতি কতখানি ধরে রাখতে সক্ষম হব।

এ রূপান্তরকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই করার জন্য এখন সময় এসেছে সব অংশীজন- সরকার, উদ্যোক্তা, সুশীল সমাজ এবং ব্যক্তি সবাই মিলে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একত্রিত হওয়ার।  এমন একটি বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে, যা শুধু বর্তমানের চাহিদাই পূরণ করবে না, একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভবিষ্যৎও সুরক্ষিত রাখবে।

এ নতুন বাংলাদেশের জন্ম আমাদের সাসটেইনেবিলিটি টেকসই করা,  অদম্য প্রত্যয় ধরে রাখা এবং সমৃদ্ধির উত্তরাধিকার তৈরি করার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। আসুন আমরা সবাই মিলে এ মাহেন্দ্রক্ষণকে কাজে লাগাই এবং রূপকল্পকে বাস্তবে রূপদান দেওয়ার জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেই।

লেখক : বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews