পৃথিবীতে দাবানল, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতা, নদীভাঙন, বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগব্যাধির উত্পাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের যেন অন্ত নাই। গত মাসে পৃথিবীর অর্ধেকেরও অধিক দেশে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করিতেছিল। স্পেন ও পর্তুগালে সৃষ্ট দাবানলে এক সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারান। বর্তমানে এই খরা পরিস্থিতি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলিতে তীব্র আকার ধারণ করিতেছে। 

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী জার্মানির ভুবনখ্যাত রাইন নদীর নাব্য গত তিন-চার দিনের ব্যবধানে ১০ হইতে ১৫ সেন্টিমিটার কমিয়া গিয়াছে। ইহাতে কয়লা, পেট্রোল, গম ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যবাহী জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটিতেছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের অবস্থাও শোচনীয়। শুধু তাহাই নহে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাইবার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হুমকির মধ্যে পড়িয়াছে এই মহাদেশটিতে। বিশেষ করিয়া নদনদীর পানি শুকাইয়া যাইবার কারণে ইউরোপে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়া গিয়াছে ২০ শতাংশ। তাপমাত্রা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন হাইড্রা ও সোলার প্ল্যান্ট কম কাজ করিয়া থাকে। অথচ ইতালির জ্বালানির পাঁচ ভাগের এক ভাগ হাইড্রোপাওয়ার-নির্ভর। তাই দেশটিতে গত এক বত্সরে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়া গিয়াছে। বাংলাদেশে বৃষ্টিহীন বর্ষার কথা না-ই বা বলিলাম, সমগ্র বিশ্বে অনাবৃষ্টির কারণে আসলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে।

এই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত তাহা আজ কাহারো অজানা নহে। তবে আশার কথা হইল, ইংল্যান্ডে অবশেষে বৃষ্টিপাত হইয়াছে, যদিও সকল অঞ্চলে হয় নাই। ইহা ছাড়া আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে এই বৎসর ভয়াবহ খরা পরিস্থিতি লক্ষ করা যাইতেছে। সুদানে মাটি ফাটিয়া চৌচির হইয়া গিয়াছে। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষও খরার কবলে নিপতিত হইয়াছে। একে তো মানুষ করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রহিয়াছে। তদুপরি গোদের উপর বিষফোড়ার ন্যায় দেশে দেশে দেখা দিতেছে এই অসহনীয় খরা। এই জন্য উপর্যুপরি এই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ আজ অস্থির হইয়া পড়িয়াছে। ইহার উপর আছে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার খড়গ। ফলে আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে যে, অভাগা যেদিকে যায়, সেদিকেই শুকাইয়া যাইতেছে সাগর। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আমেরিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রতি যেন বিশ্বাস উঠিয়া গিয়াছিল। এখন বাইডেন প্রশাসনের আমলে জলবায়ুসংক্রান্ত নীতির প্রতি আবার গুরুত্বারোপ করা হইতেছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাইবার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা অভিঘাত বাড়িয়া চলিয়াছে বিশ্বে। অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধারা নূতন নহে। যুগে যুগে এই পরিবর্তনের কথা আমরা বিশ্ব ইতিহাসে দেখিতে পাই। হজরত নূহ নবির (আ.) সময় মহাপ্লাবনে সমগ্র বিশ্ব প্লাবিত হইয়া পড়িয়াছিল। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কিছুসংখ্যক বিশ্বাসী মানুষ পরিত্রাণ পাইয়াছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা এখনো না পড়িলেও জলবায়ুর অস্বাভাবিক আচরণের কারণে ক্রমেই বিশ্ব বসবাসের অনুপযোগী হইয়া পড়িতেছে।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই বিশ্বের জলাভূমির প্রায় ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যেই হইয়া পড়িয়াছে মরুকবলিত। ইহার পরিমাণ পৃথিবীর মোট ভূমির চার ভাগের এক ভাগ। সুতরাং খরা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য এক বিশাল হুমকি। ইহা পরিবেশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। এই জন্য খরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অধিক বৃক্ষ রোপণই হইতেছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইহা ছাড়া বিকল্প জ্বালানি সৃষ্টির উপর আমাদের নজর দিতে হইবে। উপর্যুক্ত পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জাতিসংঘ পরামর্শ দিয়াছে যে, কোভিডের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের মানাইয়া নিতে হইবে এবং ইহার ক্ষতি মোকাবিলায় গ্রহণ করিতে হইবে সমন্বিত ও টেকসই উদ্যোগ। আধুনিককালে কনজাম্পশন বা ভোগ-বিলাসিতা বাড়িয়া যাওয়া, গাছপালা কাটিয়া বন উজাড় করা, প্রকৃতি ধ্বংস করিয়া বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এমনকি মহাকাশেও বিভিন্ন গার্বেজ বা বর্জ্য সৃষ্টি করিবার কারণে প্রকৃতি যেন আমাদের ওপর প্রতিশোধ লইতেছে। এই জন্য কীভাবে গ্রিন হাউজ গ্যাসের মাত্রা কমানো যায় এবং ইহার সহিত মানানসই প্রযুক্তি ও জীবনব্যবস্থা গড়িয়া তোলা যায়, সেদিকেই আমাদের অধিক মনোযোগ দিতে হইবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews