গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সাবেক সাংবাদিক ডং ইউইউকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বেইজিংয়ের একটি আদালত এই রায় ঘোষণা করে। তার পরিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ডং ইউইউ (৬২) ২০২২ সাল থেকে আটক রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে একাডেমিক এবং সাংবাদিকতার জগতে সক্রিয় থাকা ডং বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেইজিংয়ে এক জাপানি কূটনীতিকের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের সময় তাকে আটক করে পুলিশ।
ডং তখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি পত্রিকার একটি গুয়াংমিং ডেইলি-তে সিনিয়র স্টাফ সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আটকের সময় ডং একটি রেস্তোরাঁয় জাপানি কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন। সেই কূটনীতিককেও কয়েক ঘণ্টা আটক রাখা হয়, পরে জাপানি সরকারের প্রতিবাদের পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ডং-এর পরিবার জানিয়েছে, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, তিনি জাপানি দূতাবাসের দুই কূটনীতিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যাদের ‘গুপ্তচর সংস্থার এজেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তার পরিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ একটি বিদেশি দূতাবাসকে গুপ্তচর সংস্থা হিসেবে অভিহিত করায় আমরা বিস্মিত।
তারা আরও বলেছে, আজকের রায় শুধু ডং ইউইউ এবং তার পরিবারের জন্য নয়, বরং প্রতিটি মুক্তমনা চীনা সাংবাদিক এবং বিশ্ববাসীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী সাধারণ চীনা নাগরিকদের প্রতি এক গুরুতর অন্যায়।
বেইজিং আদালতে ডং-এর রায় ঘোষণার সময় কড়া নিরাপত্তা দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয় এবং কূটনীতিকদের শুনানিতে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
১৯৮৭ সালে পেকিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষে ডং গুয়াংমিং ডেইলি-তে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কয়ারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে শ্রমশিবিরে পাঠানো হয়েছিল। তবে তিনি তার চাকরি ধরে রাখতে সক্ষম হন।
পরবর্তীতে তিনি সম্পাদকীয় বিভাগের উপ-প্রধান হন এবং পত্রিকাটিতে সংস্কারপন্থি কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ডং ২০০৭ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির নিয়েমান ফেলো ছিলেন এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছিলেন। এছাড়া, তিনি জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো এবং অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডং-এর দণ্ডাদেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিকদের পক্ষে কাজ করা সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।