জীবন সত্যিই সুন্দর। বেঁচে থাকার মতো সুন্দর, শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত বিষয় পৃথিবীতে আর নেই। এ কথা কেন বললাম? আমি একজন অশীতিপর ভিক্ষুককে চিনি। তিনি কর্মে অক্ষম, বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়েও কোনো রকমে প্রতিদিন হেঁটে একটি অফিসের গেটে বসেন। সারাদিন দু'চার টাকা যা হয়, তাই দিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন। এই পৃথিবীতে তাঁর আপন বলে কেউ নেই। প্রতিদিনের সকাল শুরু হয় দু'মুঠো আহারের জন্য যুদ্ধ করে। নিঃসঙ্গ, নিঃস্ব এই মানুষটি জীবনসায়াহ্নে এসেও এক অপূর্ব সৌন্দর্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাঁর বসবাসের জীর্ণ ঘরটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ল সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি। পরিপাটি তাঁর শোবার বিছানা। জীর্ণ ঘরের বেড়ায় লাগানো জীবনকাল ধরে ধরে যৌবন, দাম্পত্য- নানা বয়সের কয়েকটি বাঁধাই করা ছবি। যৌবনে জীবিকা নির্বাহের জন্য যে পেশা বেছে নিয়েছিলেন, সে পেশায় ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি একটি কাঠের বাক্সে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন। তিনি প্রতিদিন খুব ভোরে আরাধনা শেষে ক্ষীণ দেহে, ঝাপসা চোখে অপেক্ষা করেন ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায়। শরীর একটু ভালো থাকলে হাঁটাহাঁটি করে সকালের দাওয়া নেন। হয়তো এমন ভোর চুরি করে অপার আনন্দে তাঁর প্রাণ আত্মহারা হয়ে উচ্ছ্বসিত হয় জগৎময়। অপার মুগ্ধতায় ঁতাঁর এই বেঁচে থাকা। তাঁর বেঁচে থাকার সংগ্রামে আমি জীবনের সৌন্দর্য দেখতে পাই। দেখতে পাই- কী নিপুণ কারুকার্যে প্রতিদিন তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করছেন পরম আনন্দে!

গত ৩ আগস্ট একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে 'মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা :উদ্বেগ বাড়ছে' শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজে পড়া শিক্ষার্থীর প্রায় ২৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী শিক্ষাজীবনের কোনো না কোনো সময়ে আত্মহত্যার কথা ভাবেন। খোদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি গবেষণা থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, আত্মহত্যাকারী ৬১ শতাংশের বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৭৯। দেখা যাচ্ছে, এক বছরেই প্রায় এমন মৃত্যু ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা প্রবল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮০ বা ৯০-এর দশকে এ দেশের কিশোর-তরুণদের বেড়ে ওঠা, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক-পারিবারিক আচার-আচরণের যে বিন্যাস ছিল; একবিংশ শতকের গত দুই দশকে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব; সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ নানা ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবে অতি দ্রুততায় সেই প্রচলিত বিন্যাসের সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক তথা দেশীয় ও বৈশ্বিক নাগরিক। এই নব্য আইডেন্টিটি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অন্ত ও আন্তঃযোগাযোগের যেসব পরিসর ছিল, সেসব ক্ষেত্র ভেঙে এক নতুন যাপন-প্রণালি বিনির্মাণ করেছে, যা আমাদের কাছে অনেকটা অচেনা। পরিবারের সদস্য, অভিভাবক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক- এক কথায় সব পক্ষের কাছে নিজেদের সঠিক ভূমিকা নিরূপণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে কে না চায়- সত্য, সুন্দর ও পুণ্যের পথে থাকতে! এই পৃথিবীর জোছনার রাত, পাহাড়ের বিশালতা, সমুদ্রের ঊর্মিমালা, প্রকৃতির নিপুণ সৌন্দর্য আপনাকে-আমাকে কতই না মুগ্ধ করে! কিন্তু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিস্ময়কর সৌন্দর্য এই মানবজনম পেয়ে আমরা বুঝতে পারি না। বৃথা চলে যায় প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি দিন। যাপিত জীবনের এই ভাঙাগড়ার 'ক্লান্তির খেলা'র মধ্যে আমরা যদি আমাদের মানুষ, জগতের সব জীব তথা প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধনে যুক্ত করতে পারি; একই স্পন্দনে নিজেদের নিঃশ্বাস ফেলতে পারি; তখনই আর লিখতে হবে না এমন ধরনের সুইসাইড নোট- 'জীবনের কাছে হেরে গেলাম'। তাই আসুন, আত্মহত্যা রোধে সচেতন হই। আত্মহত্যাকে 'না' বলি। পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকসহ সমাজে বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ নানামুখী মানুষের সঙ্গে যূথবদ্ধ পরিসর সৃষ্টি করি।

জিয়াউল হক সরকার: সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ ও প্রকাশনা), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
ziamcj@gmail.com



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews