যাক, মোহাম্মদপুর থেকে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি নিরাপদেই ফিরে এসেছে, মানে তাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী উদ্ধার করেছে। আজকের দিনে এর চেয়ে স্বস্তিদায়ক খবর আর কী হতে পারে।
কিন্তু যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষ তাকে নিরাপদে ফেরত পেতে উদ্গ্রীব ছিল, সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই অনেক মানুষের আচরণ দেখে যে কারও মনে হতে পারে, মেয়েটিকে নিরাপদে বা জীবিত ফিরে এসেই বরং ‘অন্যায়’ করেছে। কারণ মেয়েটি আসলে হারিয়ে যায়নি বরং পালিয়েছিল এক ছেলেবন্ধুর সঙ্গে, যাকে তার কথিত প্রেমিক বলে এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারছি।
ব্যাস, এ বিষয়টি জানার পর গোটা দৃশ্যপটই বদলে গেল। এই বয়সে একটা মেয়ে কীভাবে প্রেম করতে পারে, আবার প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে? কী যুগ আসল রে বাবা! বাসায় ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের কথা একটুও ভাবল না? আমাদের কালে আমরা এই এই এই করতাম আর এখনকার বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে প্রেম করে পালিয়ে যায়—এমন হাজারো প্রশ্নে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জর্জরিত হচ্ছে মেয়েটি। রীতিমতো তাকে অপরাধের কাঠগড়ায় তুলে ফেলা হয়েছে।
এখানে আসলে মেয়েটির দোষ কোথায়? ১১ বছরের একটি মেয়ে, বাচ্চা মেয়েই তো। প্রেম বা নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে কতটুকুই বা বোঝাপড়া থাকার কথা তার? আর কৈশোর বা বয়ঃসন্ধির এই সময় যে কোনো বাচ্চার জন্য জটিল। এই বয়সেই তো বাচ্চারা ভুল করে। হাসতে খেলতে বা অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে তার বিপদ সম্পর্কেও বুঝে উঠতে পারে না। মেয়েটির ক্ষেত্রেও সেটি ঘটেছে বলতেই হয়।
আর এক দিকে মায়ের দুরারোগ্য, পরিবারের ওপর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এমন বাচ্চার প্রতি খেয়াল রাখার সুযোগই বা কোথায়! তখন তো এমন অঘটন ঘটা একেবারেই অস্বাভাবিক না। মেয়েটি নিরাপদে ফিরে এসেছে, এটিই তো বড় আনন্দের বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, অনেক মানুষ এতে আনন্দিত হতে পারছে না। তার বিরুদ্ধে এমন সোশ্যাল ট্রায়াল বসিয়ে ফেলেছে, পারলে সেখানেই তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করবে! শুধু তাই নয়, খুবই নোংরা ও কুশ্রী ভাষায় তাকে আক্রমণও করা হচ্ছে।