বন্যা ও নদীভাঙন

অবহেলাই তিস্তাপারের নিয়তি!

অতিবর্ষণ ও উজান হইতে আসা ঢলের কারণে তিস্তা নদীর অববাহিকা বিশেষত রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হইবার সংবাদটি সোমবার সমকালসহ প্রায় সকল সংবাদমাধ্যমেই গুরুত্ব পাইয়াছে। সেই সকল প্রতিবেদনে ইহাও প্রকাশিত হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের গৃহত্যাগী মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসমেত উচ্চ স্থানে ও বাঁধে আশ্রয় লইয়াছেন। অঞ্চলসমূহে দেখা দিয়াছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। এই বিষয়ে মঙ্গলবারের খবর হইল, ইতোমধ্যে তিস্তা ও সংশ্লিষ্ট নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিম্নে আসিলেও এখনও নিমজ্জিত শত শত হেক্টর আমন ক্ষেত। উপরন্তু প্লাবিত জেলাগুলির অনেক জায়গা এখনও জলাবদ্ধ। মহাসড়কগুলিও অনেকাংশে জলমগ্ন। ফলে ব্যাহত হইতেছে বিশেষত সড়ক যোগাযোগ। শুধু উহাই নহে, পানি কমিলেও বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন দৃশ্যমান। বহু স্থানে দুর্গতদের মধ্যে প্রাদুর্ভাব ঘটিয়াছে ডায়রিয়াসহ নানা প্রকার পানিবাহিত রোগের। বলা যায়, বন্যার পানি নামিয়া গেলেও উক্ত অঞ্চলসমূহের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নাই। তবে অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক, এহেন দুর্ভোগেও বন্যার্তরা বেসরকারি উৎস দূরস্থান; প্রশাসনের নিকট হইতেও পর্যাপ্ত সহায়তা পায় নাই। 

উল্লেখ্য, তিস্তা নদীর দুই পার্শ্বের এতদঞ্চল এইবারসহ শুধু এক মৌসুমেই চারিবার বন্যাক্রান্ত হইল। কিছু দিন পূর্বে পূর্বাঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলায় যখন নজিরবিহীন বন্যা হয়, তখন উত্তরাঞ্চলের এই জেলাগুলিও তিস্তার অকস্মাৎ ফুলিয়া উঠা পানিতে ভাসিয়া গিয়াছিল। কিন্তু দুঃখজনক হইলেও সত্য, সেই সময় ফেনী ও কুমিল্লা সর্বমহলের যেই মনোযোগ পাইয়াছিল, উত্তরাঞ্চলের দুর্গতরা উহার কিঞ্চিৎও পায় নাই। যদি বলা হয়, সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় উত্তরবঙ্গ যদ্রূপ বঞ্চনার শিকার, আলোচ্য ঘটনা উহারই অংশ মাত্র– তাহা হইলে সম্ভবত অতিরঞ্জন হইবে না। অধিক অন্বেষণের আবশ্যকতা নাই, মঙ্গলবার সমকালের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে উদ্ধৃত কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্যই ইহা উপলব্ধির জন্য যথেষ্ট। আলোচ্য অঞ্চলসমূহে চলমান নদীভাঙন প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে প্রশ্ন করিলে তিনি জবাব দেন, বরাদ্দ না থাকায় শুধু সরকারি স্থাপনা ব্যতীত অন্য কোনো ভাঙনের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কিছু করণীয় নাই। নিঃসন্দেহে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা, বিশেষত তিস্তা অববাহিকার অঞ্চলসমূহে বন্যা নূতন কোনো দুর্যোগ নহে। অন্যভাবে বলা যায়, বন্যা ও নদীভাঙনের ন্যায় দুর্যোগের সহিত লড়াই করিয়া টিকিয়া থাকিবার অভিজ্ঞতা উক্ত অঞ্চলের মানুষদের অন্য যেই কোনো অঞ্চল অপেক্ষা অধিক। তাই এই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সহিত অন্তত একটা পর্যায় পর্যন্ত অভিযোজনের সামর্থ্য তিস্তাপারের মানুষ রাখেন। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের ন্যায় তাহারাও তো বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাহারা কেন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে রাষ্ট্রকে আপন করিয়া পাইবে না? অভিযোগ আছে, দেশে অদ্যাবধি যত সরকার আসিয়াছে, সকলেই তৈলাক্ত মস্তকে তৈল সিঞ্চন করিতে পছন্দ করিত; দরিদ্র মানুষদের সমস্যা উহাদের তেমন বিচলিত করিতে পারে নাই। অন্তত তিস্তাপারের দারিদ্র্যক্লিষ্ট দুর্গতদের প্রতি তাহাদের প্রায়নির্লিপ্ততা দেখিয়া মনে হইতেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও পূর্বসূরিদের সেই দুর্ভাগ্যজনক ঐতিহ্যেরই অনুসারী।

তবে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল বর্তমান সরকার এই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করিবে বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি। তাহারা দ্রুত আলোচ্য বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনকার্য শুরু করিবে, ইহাই প্রত্যাশা আমাদের। মনে রাখিতে হইবে, বন্যা ও নদীভাঙন যখন কোনো অঞ্চলের এক প্রকার সাংবৎসরিক সমস্যায় পরিণত হয়, তখন অঞ্চলবাসীর সার্বিক উন্নয়নও ভয়াবহরূপে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ লইয়া পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি না করিয়া উক্ত অঞ্চলসমূহে বন্যা ও নদীভাঙনের তীব্রতা হ্রাসে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews