অ্যামাজনে টানা ১৭ বছর কাজ করার পর ছাঁটাইয়ের মুখে পড়লেন এক কর্মী। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি ব্লাইন্ড নামের প্ল্যাটফর্মে একটি গোপন পোস্ট শেয়ার করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পোস্টে তিনি লেখেন, ১৭ বছর ধরে অবিরাম পরিশ্রম করতে করতে তিনি জীবনের সাধারণ আনন্দগুলো ভুলে গিয়েছিলেন। নিজের পরিবার, সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো বা একসঙ্গে ডিনারে বসার মতো ছোট আনন্দগুলোও তার জীবনে অনুপস্থিত ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন—এই কঠোর পরিশ্রমই পরিবারের সুখ নিশ্চিত করবে। কিন্তু একদিন হঠাৎ অফিস থেকে পাওয়া একটি ছাঁটাইয়ের ইমেইল তার সব বিশ্বাস ভেঙে দেয়।
তিনি লিখেছেন, ‘মেইলটা পড়েই আমি ভেঙে পড়েছিলাম, কেঁদে ফেলেছিলাম। এক ঘণ্টা পর নিজেকে সামলে নিয়ে প্রথমবার স্ত্রীর সঙ্গে রান্না করতে সাহায্য করলাম, সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিলাম। তাদের মুখে হাঁসি দেখে মনে হলো—হয়তো এটাই আসল জীবন।’
কফির কাপে বসে স্ত্রীকে খবরটি জানানোর পর স্ত্রী তাকে সান্ত্বনা দেন এবং বলেন, ‘আমরা পরিবার হিসেবে একসঙ্গে এই পরিস্থিতি সামলাব।’ এতে আবারও আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি।
তার এই পোস্টে হাজারো ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন এবং ‘হাসল কালচার’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে—যেখানে মানুষ কর্মজীবনের চাপে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে বিসর্জন দেয়।
একজন মন্তব্য করেছেন, ‘তোমার কাজকে ভালোবাসো, কিন্তু কোম্পানিকে নয়। নতুন কিছু শেখো, শ্বাস নাও, আর দেখবে—সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার সঙ্গেও এমন হয়েছিল।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘হৃদয়বিদারক কিন্তু বাস্তবতা মেনে নেওয়ার মতো গল্প। ১৭ বছর ধরে পরিবারের জন্য ছুটেছেন, অথচ সত্যিকারভাবে তাদের খুঁজে পেয়েছেন চাকরি হারানোর পর। এটা মনে করিয়ে দেয়—চাকরি সাময়িক, কিন্তু পরিবারের হাঁসি চিরস্থায়ী।’
২০২৫ সাল জুড়েই প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের ছাঁটাইয়ের ঢেউ বইছে, যা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের শেষ দিকে। গুগল, মেটা, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটসহ বিশ্বের নামী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো হাজারো কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।
কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে—মহামারিকালে অতিরিক্ত নিয়োগ, রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও স্বয়ংক্রিয়তার দিকে ঝোঁক।
এই ছাঁটাইয়ের ফলে শুধু ইঞ্জিনিয়ার নয়, মানবসম্পদ, নিয়োগ, গ্রাহকসেবা—সব ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তি খাত এখন ‘কম লোক, বেশি দক্ষতা’-র নীতিতে এগোচ্ছে।
একজন মন্তব্য করেন, ‘১৭ বছর নিরন্তর পরিশ্রমের পর একজন মানুষ যদি জীবনের মানে খুঁজে পান চাকরি হারিয়ে, তবে হয়তো সেটাই প্রমাণ—আমরা কেবল কাজের জন্য না, বাঁচার জন্যই তৈরি।’
সূত্র: এনডিটিভি