ফিরল পরিবেশবান্ধব ব্যাগ

সুপারশপে অন্যরকম দিন

পাটের সেই সোনালি দিন ফেরার আশা

রাজধানীর শ্যামলীর প্রিন্স বাজার সুপারশপ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সবজি, মাছ, মাংস ও ফল কেনেন গৃহিণী লায়লা বেগম। প্রতিটি পণ্য আলাদা করে তাঁকে কাগজের ঠোঙায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাছ-মাংসের কাগজের ঠোঙার ভেতরে মোমের প্রলেপ। বাজার শেষ করার পর বিল দেওয়ার সময় ক্রেতা লায়লা বেগম পলিথিন ব্যাগে সব পণ্য দিতে বলেন। তখন ক্যাশ কাউন্টার থেকে তাঁকে জানানো হয়, আজ থেকে সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধ। স্বল্প মূল্যে পাটের ব্যাগ নেওয়া যাবে। পরে ওই ক্রেতা ৮ টাকার পাটের ব্যাগে ভরে বাজার নেন। এমন বদলে যাওয়া দেখে ক্রেতাও বেশ খুশি। পলিথিন বন্ধ চেয়ে লায়লা বলেন, ৮ টাকা দিয়ে যে ব্যাগ কিনলাম, তা অনেক দিন ব্যবহার করা যাবে। এতে পরিবেশ-প্রাণ-প্রকৃতি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।

শুধু প্রিন্স বাজার নয়; গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি সুপারশপে দেখা গেছে, থরে থরে সাজানো পরিবেশবান্ধব নানা রকম ব্যাগ। পলিথিনের জায়গা দখল করেছে কাগজের ঠোঙা। পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শপের ভেতরে সাইন্ডবক্স থেকে আসছে সচেতনতামূলক নানা বার্তা। ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে লিফলেট। তবে গতকাল অধিকাংশ ক্রেতা ব্যাগ ছাড়াই বাজার করতে এসেছেন। ৮ থেকে ১৯ টাকায় ছোট-বড় পাট ও কাপড়ের ব্যাগ মিলছে সুপারশপগুলোতে। খুশি মনেই এসব ব্যাগ কিনে নেন তারা। 

২০০২ সালে দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হলেও ২২ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিন ব্যবহার বন্ধে জোরালো অবস্থান নেন। পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল থেকে দেশের কোনো সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ রাখা যাবে না। এর বদলে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার ১০টি কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম শুরু হবে।

গতকাল ধানমন্ডির ঝিগাতলার আগোরা সুপারশপ থেকে কেনাকাটা করেছেন মাহমুদা আক্তার। কয়েকটি পাটের বস্তায় সদাই নিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মাহমুদা বলেন, আজ পাটের ব্যাগে বাজার করে সেই ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ছে। আগে বাবা-দাদারা বাজারে যেতেন পাটের ব্যাগ বা ছালা নিয়ে। সবাই সচেতন হলে কৃষকের পাটের সেই সোনালি সময় আবার ফিরবে।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে মীনাবাজারে কথা হয় রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এ ব্যবস্থা চলতে থাকলে প্রতিদিন রান্নাঘরে যে পরিমাণ পলিথিন জমা হতো, তা থেকে রেহাই মিলবে। একই সুপারশপে কথা হয় রুবিনা হক নামে আরেক গৃহিণীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে সুপারশপে বাজারের সঙ্গে একটি বড় ১০-১৫ টাকার ব্যাগ বিনামূল্যে দেওয়া হতো। এখন প্রতিটি ব্যাগের জন্য আলাদা টাকা রাখা হচ্ছে। সুপারশপগুলোর উচিত ব্যাগগুলো বিনামূল্যে দেওয়া।

মীনাবাজারে বিক্রয়কর্মী মহিব উল্যাহ পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, প্রথম দিন হওয়ায় অনেকেই ব্যাগ নিয়ে আসতে ভুলে গেছেন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পলিথিনে বাজার নিয়েই মানুষ অভ্যস্ত। 

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রাজধানীর ধানমন্ডিতে আগোরা ও মীনাবাজার সুপারশপ ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি বলেন, সুপারশপের মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা খুব খুশিমনে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে রাজি হয়েছেন। কারণ পলিথিনের বিপদটা তারা বোঝেন।

পরিবেশবান্ধব ব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিত না করে পলিথিনবিরোধী অভিযান কতটা কার্যকর হবে– এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সুপারশপ দিয়ে শুরু করেছি। ১৫ দিন পর আবার সুপারশপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করব। কাঁচাবাজারে কাজ শুরু হবে ১ নভেম্বর থেকে। আমরা একই সঙ্গে পলিথিনের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছি, আবার বিকল্প পণ্যের সরবরাহও বাড়াচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব পলিথিন ব্যাগ আমরা দেশ থেকে সরিয়ে দিতে চাই।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে ইউনিমার্ট সুপারশপে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সুপারশপে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী উদ্যোগ। 

পাটের ব্যাগ সরবরাহ বিষয়ে পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরা বলেন, চাহিদার আলোকে সরবরাহ হয়। পাটের চাহিদা বাড়লে কৃষকরা উৎপাদন বাড়িয়ে দেবেন। এ মূহূর্তে আমরা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাটের ব্যাগ বাজারজাত করতে সক্ষম।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews