গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের উচ্চ আদালত এক রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানোর ক্ষেত্রে নীতিমালা করতে উচ্চপর্যায়ে কমিটি গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না।





বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। রুলে জানাজায় হাজির করার সময় ডান্ডাবেড়ি পরানো কেন অবৈধ ঘোষণা ও তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, কারা মহাপরিদর্শক, গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার ওসি এবং শরীয়তপুর থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি আলী আজমের মা বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।

শেষবার মায়ের মরদেহ দেখতে এবং জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেতে আলী আজম জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে তাকে ২০ ডিসেম্বর তিন ঘণ্টার জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। প্যারোলের পুরোটা সময় তাকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়। এমনকি জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করলেও পুলিশ তা খুলে দেয়নি। হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থাতেই জানাজা পড়তে তাকে বাধ্য করা হয়। পরদিন দেশের গণমাধ্যমে সেই ছবি ছাপা হলে চারদিকে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে।

একই ঘটনা ঘটেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজার সঙ্গে। ১৫ জানুয়ারি সকালে সেলিম রেজার মা শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িতে মারা গেলে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে জানাজায় অংশ নিতে গ্রামের বাড়িতে যান এবং জানাজায় অংশ নেন। জানাজা ও দাফনের পুরো সময়ে সেলিম রেজাকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখে পুলিশ। সেলিম রেজার বেলায়ও হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করা হলে পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেনি। খবরের কাগজে বেরিয়েছে, এ সময়ের মধ্যেই একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ঢাকায় আদালতে আনা হয়।

এছাড়া নিকট অতীতে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশুকে হাতকড়া পরানোর ঘটনা গণমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো নিয়ে গণমাধ্যমে কম লেখালেখি হয়নি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালত রুল জারি করায় মনে হলো নতুন করে এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার দরকার আছে।

উচ্চ আদালত প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আদালতে ডান্ডাবেড়ি পরানো সংক্রান্ত শুনানি শেষে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় হাজির করার ঘটনার শুনানিকালে আদালত উষ্মা প্রকাশ করে এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জনমনে ভীতি সঞ্চার করার জন্য আলী আজম ও সেলিম রেজাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় হাজির করানো হয়। সম্পূর্ণ অন্যায় ও আইনবহির্ভূতভাবে এটি করা হয়েছে। এটি অমানবিক, আমাদের সংবিধান এটি সমর্থন করে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না; কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না। সংবিধানে এমন বিস্তৃত অধিকারের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ নাগরিককে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া শুধু অমানবিকই নয়, বরং তা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি।

তবে জেল সুপারের বক্তব্য শুনে আশ্চর্য হয়েছি। গাজীপুর জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার বলেছেন, জেলকোড অনুযায়ী প্যারোলে মুক্তি পাওয়া আলী আজমকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে। কারণ, জানাজার নামাজ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি উধাও হয়ে গেলে দায়দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তাতো। এটি বিবেচনা করে তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন। গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব একেবারে অস্বীকার করেন। তার বক্তব্য আরও পরিষ্কার। তিনি বলেন, পুলিশ শুধু নিরাপত্তা প্রহরায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগার থেকে বাড়িতে নিয়ে এবং জানাজা শেষে ফেরত দিয়ে গেছে। ডান্ডাবেড়ি বা হাতকড়া লাগানো না লাগানো জেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। এজন্য পুলিশের কোনো দায় নেই।

পুলিশ সুপারের বক্তব্য কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কারণ, জেল সুপার খবরের কাগজের সাংবাদিককে বলেছেন, প্যারোলে মুক্তির আদেশের আবেদনপত্রের পাশে পুলিশ স্কর্টের দায়িত্বরত এসআই কামাল হোসেন ‘ডান্ডাবেড়ি প্রয়োজন’ উল্লেখ করে আবেদন করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কার বক্তব্য সঠিক বলে ধরে নেব? তাদের উভয়ের বক্তব্যই সর্বক্ষেত্রে সঠিক নয় বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে তারা উদাসীনতা দেখান, আবার কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা ও কারাবিধির নামে অধিক উৎসাহ দেখান। নিকট অতীতে দেখা গেছে, জেলা পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি ও দাগি আসামিরা পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনতাই হয়ে গেছে। গত বছর ২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত পাড়ার এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে দিনদুপুরে সবার সামনে পুলিশকে মারধর করে দুজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় জঙ্গি দুজনের হাতে হাতকড়া পরা ছিল। জঙ্গিদের সঙ্গী-সাথীরা চাবি দিয়ে হাতকড়া খুলে মোটরসাইকেলযোগে আসামিদের নিয়ে পালিয়ে যায়। জঙ্গি দুজনের কারও পায়ে ডান্ডাবেড়ি ছিল না। অনেকেই মনে করেন, ডান্ডাবেড়ি পরা থাকলে জঙ্গিরা হয়তো এত সহজে পালিয়ে যেতে পারত না। আগে অবশ্য দাগি আসামি আনা-নেওয়ার সময় ডান্ডাবেড়ি পরানো হতো। তবে তিন বছর আগে দেওয়া উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী কোনো আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হয় না।

গাজীপুর ও শরীয়তপুরের ঘটনা দুটো খুবই বেদনাদায়ক। প্রচলিত আইন, সংবিধান-সবকিছুর লঙ্ঘন করা হয়েছে এ দুটি ঘটনায়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিচারের আগেই কেন তাদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হলো? তারা কেউ সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন না। মায়ের মৃত্যুতে এমনিতেই তারা শোকগ্রস্ত ছিলেন, তার ওপর ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজা পরতে বাধ্য করার মতো অমানবিক কাজ আর হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, মানবতা যখন ডান্ডাবেড়িতে বন্দি হয়, মানবিক মর্যাদা তখন ধুলোয় মিশে যায়।

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উদাহরণ। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিচার চেয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবার। বিচার চেয়ে মামলা করার পর এসব পরিবার সর্বক্ষণ বিভিন্ন হুমকি-ধমকির মধ্যে থাকে। এ কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। বিভিন্ন পরিসংখানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে কারা হেফাজতে ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৩ সালে হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যুনিবারণ আইন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় আসামিদের শাস্তি হয়েছে। ১৪টি মামলায় মামলা ত্রুটিপূর্ণ বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ হেফাজতে সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে ২১ জানুয়ারি। অনলাইনে জুয়া ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস পেয়ারাবাগান এলাকার সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামসহ চারজনকে ধরে নিয়ে যায় বাসন থানার পুলিশ। টাকা দিয়ে অন্য তিনজন ছাড়া পেলেও টাকা না দেওয়ায় রবিউলকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। পুলিশ বলছে, রাতে রবিউলকে ছেড়ে দিলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। পুলিশ যদি তাকে ছেড়েই দেবে, তাহলে যখন পরিবারের সদস্যরা থানায় দেখা করতে গেলেন, তখন ছেড়ে দিল না কেন-এ প্রশ্নের জবাব কী? এরও আগে গত বছরের ১৯ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় সুমন শেখ নামে এক যুবক পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। সুমনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পুলিশ দাবি করে, সুমন থানা হাজতে আত্মহত্যা করেছে। স্বজনদের দাবি-সুমন আত্মহত্যা করতে পারে না। মামলা করতে গেলে থানা মামলাও নেয়নি। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক সুমন আত্মহত্যা করেছে। তারপরও পুলিশ তাদের দায় এড়াতে পারে কি? থানা হাজতে কোনো আটক ব্যক্তিকে রাখা হলে সর্বক্ষণ তাকে পুলিশি পাহারায় রাখতে হয়। হাজত যদি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকে, তাহলেও কোনো না কোনো পুলিশ সদস্যের সর্বক্ষণ মনিটর করার কথা। বলা হয়েছে, সুমন লকআপের গেট বেয়ে উপরে উঠেছে বলে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে; তাহলে পুলিশ তখন সতর্ক হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিল না কেন? দেশের প্রচলিত আইনে হেফাজতে যে কোনো ধরনের মৃত্যু ও নির্যাতন অপরাধ। এজন্য প্রথমেই মামলা নিতে হবে। মামলা না নেওয়াও একটি অপরাধ। আইনে মামলা না নেওয়ার কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি দেশের কোনো পরিস্থিতিই এ আইন প্রয়োগে বাধার কারণ হতে পারে না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে গুম ও ক্রসফায়ার কমলেও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা কমেনি।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, শাস্তির অভাবেই পুলিশের ভেতর মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়ছে। নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের কারণে পুলিশে পেশাদারত্ব যেমন হওয়ার কথা ছিল, তা হতে পারছে না। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পুলিশকে ব্যবহারের কারণেও পুলিশ সার্ভিসে পেশাদারত্বের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে না। গুরুতর কোনো অপরাধ করলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়ার কারণেও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেড়ে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু পুলিশ সদস্যরাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন না, দেশের ক্ষমতাধর অনেকেই এ ধরনের অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েছেন। সামাজিক অবক্ষয় ও সুশাসনের অভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানবতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরও উল্লেখযোগ্য কিছু অপরাধ হলো, নারী-শিশু ও মানব পাচার, অপহরণ, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমাতে হলে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সচেতন নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে নিজের স্বাধীনতা, অধিকার ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মানুষ যেন বোঝে মানবাধিকার হলো প্রতিদিনের চিন্তা, ভোগ ও সুরক্ষার বিষয়।

মানবাধিকার রক্ষা করার দায় সরকারেরই বেশি। উপরে বর্ণিত ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, সুশাসনের অভাবেই আমাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে। নাগরিকের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। মানবতা যেন ডান্ডাবেড়িতে বন্দি না হয়, তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সেই গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়-‘মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’-প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে মানবাধিকার এমনিতেই প্রতিষ্ঠিত হবে।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews