বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যেতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হলেও কখনোই কোনো সরকারের উদ্যোগ ছিল না। এ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে ১৭ বার। কিন্তু ১৯৭২-এর মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোনো চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, 'ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি এবং দলের রাজনৈতিক স্বার্থই' ছিল সংবিধানের অধিকাংশ সংশোধনীর মূল লক্ষ্য। তবে বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যেতে এখনও আশাবাদী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। তাঁর বিশ্বাস, পঞ্চদশ সংশোধনীতে অনেকাংশই ফিরে এসেছে। বাকিটাও একদিন সম্ভব হবে।
মুক্তিযুদ্ধে জাতি যেসব আদর্শে উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তা বিধৃত হয়েছিল ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে। সেখানেই রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সন্নিবেশিত হয়। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটার পরে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান সামরিক আদেশে ওই সংবিধানের পরিবর্তন ঘটিয়ে মুখ্যত ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে ফেলার সূচনা করেন। পরে ১৯৮৮ সালে আরেক সামরিক শাসক এরশাদ সামরিক ফরমানবলে 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' সন্নিবেশিত করেন। দুটি পরিবর্তনই জনগণের ইচ্ছায় নয়, হয়েছে সামরিক আদেশে।

একাদশ তথা বর্তমান জাতীয় সংসদের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি সংসদেই এক বা একাধিক সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হয়। শুধু সপ্তম সংসদে (১৯৯৬-২০০১) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সংবিধানের কোনো সংশোধন হয়নি। ওই সংসদই স্বাধীনতার পরে প্রথম পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিল। সংবিধানে সর্বশেষ বড় পরিবর্তন আসে ২০১১ সালে; আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ এ সংশোধনীতে বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম 'ধর্মনিরপেক্ষতা' ফিরিয়ে আনা হয়। 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম'ও বহাল থাকে। বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ থাকলেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে সে বিধান ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ জোটের শরিকরাও সংবিধানের এ পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেছে। তার পরও রাজনৈতিক বাস্তবতার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা হয়েছে।

পঞ্চদশ সংশোধনীর চার বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনতে এই বিল আনা হলেও আগের সংশোধনীতে তা ছিল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণেই তড়িঘড়ি করে ষোড়শ সংশোধনী বিল আনা হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির অন্যতম সদস্য রাশেদ খান মেনন তখন আপত্তি তুলেছিলেন এই বলে, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে 'কোনো বিশেষ ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দেওয়া যাবে না'- এটা বহাল রেখে 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' রাখা সাংঘর্ষিক। ওই কমিটি সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন পেশাজীবীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মতামত নিলেও পরে সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি।

বিদ্যমান সংবিধানে কেন এ অবস্থা বহাল থাকল- এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন সমকালকে বলেন, তখন বলা হয়েছিল, এটা বাদ দিলে দেশে হৈ চৈ শুরু হবে। এজন্য কমিটিতে তাঁরা অনেক বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের মত বা বিকল্প প্রস্তাব- কোনোটাই গ্রহণ করা হয়নি। এজন্য তিনি পঞ্চদশ সংশোধনীর কমিটি এবং বিল পাসের সময় 'নোট অব ডিসেন্ট' (আপত্তি) দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সংবিধানের অধিকাংশ সংশোধনীতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বেশি কাজ করেছে। বাহাত্তরের মূল সংবিধানেও প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষমতা নির্ধারণে বঙ্গবন্ধুর হাতে বেশি ক্ষমতা দেওয়ার প্রবণতা ছিল। দ্বাদশ সংশোধনীতে যখন সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরা হলো, তখন বিএনপি তাদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার হাতে বেশি ক্ষমতা দিতে উদগ্রীব ছিল এবং শেষ পর্যন্ত তারা তাই করেছে। ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে সরকারের মতবিরোধের ফল- এ অভিযোগও অস্বীকার করেননি রাশেদ খান মেনন।

পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে নবম সংসদে (২০০৯-১৪) গঠিত বিশেষ কমিটির চেয়ারপারসন ছিলেন সৈয়দা সাজেদ চৌধুরী। কো-চেয়ারপারসন ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট রহমত আলী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, রাশেদ খান মেনন, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, হাসানুল হক ইনু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ড. হাছান মাহমুদ ও ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এই কমিটির চেয়ারপারসন, কো-চেয়ারপারসনসহ ছয়জন মারা গেছেন। ওই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই কমিটির কোনো বৈঠকে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে কমিটির পক্ষ থেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, সাবেক প্রধান বিচারপতি, শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী, জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ অনেকের মতামত গ্রহণ করা হয়।

এই কমিটি ২৭টি বৈঠক করে। শুরুতে কমিটির অধিকাংশ সদস্য বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ব্যাপক সোচ্চার থাকলেও কমিটির প্রতিবেদনে এর প্রতিফলন খুব একটা দেখা যায়নি। এই কমিটির কার্যকালের মধ্যেই সংবিধানের তিনটি সংশোধনীকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।

এই বিশেষ কমিটির সচিব ও সংসদের তৎকালীন যুগ্ম সচিব (আইন প্রণয়ন) এ. কে. মোহাম্মদ হোসেন সমকালকে জানান, সংবিধানের একাধিক সংশোধনীর সঙ্গে তিনি যুক্ত থেকেছেন। কোনোকালেই বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি মূলত রাজনীতিবিদদের মাঠের বক্তব্যেই শোনা যায়। তাঁর মতে, বিশেষ কমিটির বৈঠকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে রাষ্ট্রধর্ম এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকবে কিনা।

বিশেষ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন আমির হোসেন আমু। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরতে তাঁর তৎপরতা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি সমকালকে জানান, পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রের চার মূলনীতিসহ অনেক বিষয়ই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্ভব হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। চার মূলনীতি ফিরে এসেছে। সুতরাং বাকি বিষয়গুলোতেও ফিরে যাওয়া সম্ভব। তবে কতদিনের মধ্যে সে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে, তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু আশাবাদী হওয়ার মতো যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বিশেষ কমিটির কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, কমিটির সদস্য প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান করেছিলেন, সেটি পৃথিবীর একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। আজকে আমাদের সুযোগ এসেছে এবং এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সকলে মিলেই এ সংবিধানকে যুগোপযোগী করতে হবে।'
কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম', 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' ও 'ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল'- এ তিনটি ইস্যুকে খুবই স্পর্শকাতর আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে ক্যামেরা বৈঠকের প্রস্তাব দেন।

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। কিছু ভিন্নমতও ছিল। সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রয়াত মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, 'বাহাত্তরের সংবিধান ছিল একটি এক্সপোর্ট মডেল কনস্টিটিউশন। যদি কোনো নতুন দেশ স্বাধীনতা চায় এবং স্বাধীনতা পায়, তাহলে শুধু দেশের নামটা পরিবর্তন করে বাকি সব তারা কপি করতে পারে।'

সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা প্রসঙ্গে এই বিচারপতি বলেছিলেন, 'কোনো রাষ্ট্রকেই ইজমের মধ্যে আনা উচিত না। যেমন- সোশ্যালিজম, সেক্যুলারিজম, ইসলামিজম ও কমিউনিজম। কোনো ইজমের মধ্যে শাসনতন্ত্রটাকে বেঁধে রাখা উচিত নয়। শাসনতন্ত্র হচ্ছে একটি ওয়ার্কিং ডকুমেন্ট। দেশে কী পদ্ধতির সরকার হবে- রাষ্ট্রপতি শাসিত, না সংসদীয়? রাষ্ট্রপতিকে কতখানি শক্তিশালী করা হবে, প্রধানমন্ত্রী কতখানি শক্তিশালী হবেন, সংসদকে কতখানি কার্যকর করা হবে এবং ক্ষমতার সুষম বণ্টন কীভাবে হবে- এগুলো একটি ভালো সংবিধানের লক্ষণ।' তিনি আরও বলেন, কেউ লিখে সেক্যুলারিজম আনতে পারেন না। এটা হচ্ছে কতগুলো অনুভূতির প্রকাশ।

১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শুরু হয় ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। গণপরিষদে সংবিধান বিল গৃহীত হয়েছিল ৪ নভেম্বর। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে কার্যকর হয়েছিল সংবিধান। প্রথম সংসদেই সংবিধান সংশোধন হয়েছে চারবার। সংবিধান প্রণয়নের জন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণপরিষদের সদস্য এবং রাজনীতিকদের নিয়ে ৩৪ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল। আট মাসের মধ্যেই কমিটি সংবিধানের খসড়া তৈরি করে।

সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক
প্রথম সংশোধনী :জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান কার্যকরের সাত মাসের মধ্যেই প্রথম সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীর মূল কারণ ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করা। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আইন তৈরি এবং তা কার্যকরের বিষয় আনা হয় এই সংশোধনীতে। পরে এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ আইন করা হয়।

দ্বিতীয় সংশোধনী :বাহাত্তরের মূল সংবিধানে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান ছিল না। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারির সময়ে মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিত করার বিধানও আনা হয়। ওই সংশোধনীতে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা বহিরাক্রমণে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত হলে তখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যাবে।

তৃতীয় সংশোধনী :বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্ত চুক্তিতে ছিটমহল এবং অপদখলীয় জমি বিনিময়ের কথা ছিল এই সংশোধনীতে।

চতুর্থ সংশোধনী :এই সংশোধনীর মাধ্যমে শাসনব্যবস্থাকে আমূল বদলে ফেলে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। বহুদলীয় সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে চালু করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। এই সংশোধনীকালে আওয়ামী লীগদলীয় সদস্য হলেও অধিবেশন বর্জন করেছিলেন এমএজি ওসমানী এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৯৪ জন সংসদ সদস্য।

পঞ্চম সংশোধনী :বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে জারি করা সামরিক শাসনকে বৈধতা দিতে এই সংশোধনী বিল পাস হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক শাসনের সব কর্মকাণ্ডকে এই সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়। সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম যুক্ত করা হয়। ২০১০ সালে এই সংশোধনীটি আদালত অবৈধ ঘোষণা করেন।

ষষ্ঠ সংশোধনী :বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথ নিশ্চিত করা হয়েছিল।

সপ্তম সংশোধনী :বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে এইচ এম এরশাদের জারি করা সামরিক শাসনকে বৈধতা দিতে এই সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীকেও উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে ২০১০ সালে।

অষ্টম সংশোধনী :এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষতাকে পাল্টে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী বামপন্থি দলগুলো ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিও ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার ওই সংশোধনীর বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছিল।

নবম সংশোধনী :১৯৯০ সালের ১১ জুলাই সরকারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনের মধ্যেই একজন কতবার রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন, এই বিধান যুক্ত করে এই সংশোধনী পাস হয়। এর ফলে রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না।

দশম সংশোধনী :এরশাদের শাসনের শেষ দিকে ১৯৯০ সালের ১২ জুন সংশোধনীটি পাস হয়। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান আনা হয় এর মাধ্যমে।

একাদশ সংশোধনী :এরশাদের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তিন মাসের অন্তর্বর্তীকালীন বা অস্থায়ী সরকারকে বৈধতা দিয়ে এই সংশোধনী আনা হয়।

দ্বাদশ সংশোধনী :এই সংশোধনীর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৬ বছর পর রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পাল্টে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফেরে দেশের শাসনব্যবস্থা। এই সংশোধনী সরকারি দল বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাস হয়েছিল।

ত্রয়োদশ সংশোধনী :এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের মেয়াদ শেষে ৯০ দিনের জন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনীও আদালত অবৈধ ঘোষণা করেন।

চতুর্দশ সংশোধনী : সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ও মেয়াদ বাড়াতে এই সংশোধনী আনা হয়। একই সঙ্গে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানো হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনী :এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যদিও ২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। তবে এই ব্যবস্থার অধীনে আরও দুটি নির্বাচন হতে পারে বলে আদালত মন্তব্য করেন।

ষোড়শ সংশোধনী :এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে উচ্চ আদালত এই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন।

সপ্তদশ সংশোধনী :এই সংশোধনীর মাধ্যমে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর বহাল রাখার বিধান যুক্ত করা হয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews