নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ‘সার্চ কমিটি’ তথা উপযুক্ত ব্যক্তি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আইন অনুযায়ী, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নেতৃত্বে এই কমিটি কাজ করিবে।
বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতোমধ্যে কমিটির সম্ভাব্য সদস্যগণের নাম চূড়ান্ত হইয়াছে এবং শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন জারি হইবে। আমরা প্রত্যাশা করি, সার্চ কমিটি যথাযোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন প্রদান করিবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, এই প্রকার কমিটি পূর্বে একাধিকবার গঠিত হইলেও পরবর্তী অভিজ্ঞতা সুখকর নহে। এইরূপে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হইলেও ক্ষমতাসীন দলের পছন্দের ব্যক্তিবর্গই মনোনয়ন পাইয়াছেন।
আরও হতাশাজনক, ঐ সকল কমিশন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে ব্যর্থ হইয়াছে। রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন সত্ত্বেও কমিশন ভোটারদের আমানত রক্ষা করিতে ব্যর্থ হইয়াছে। এই সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকিবার কারণে উপযুক্ত ব্যক্তিদের লইয়া নির্বাচন কমিশন গঠন করা অসম্ভব হইবে না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। অবশ্য বৃক্ষের পরিচয় আমরা ফলেই পাইতে চাহি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যথার্থ বলিয়াছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হইয়া গিয়াছে। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যথাযথ সংস্কার সম্পন্ন করিয়াই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হইতে হইবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলিয়াছেন, সংস্কার কমিটির সুপারিশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হইবে এবং নূতন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় সংস্কার কমিটির কর্মে ব্যাঘাত ঘটিবে না। কারণ ঐ সকল সুপারিশের কিছু বাস্তবায়ন করিবে সরকার, কিছু বাস্তবায়ন করিবে নির্বাচন কমিশন।
সরকারের এখন উচিত হইবে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করিয়া ভোটার তালিকা প্রণয়নে নজর দেওয়া। কারণ ভোটার তালিকা প্রণয়ন সময়সাপেক্ষ। যথায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করিয়াছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপ হইবে যথাযথ ভোটার তালিকা প্রণয়ন। ইহার জন্য ১০ মাস সময় লাগিতে পারে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতন হইবার পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা হইলেও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ জরুরি। ইহা স্বস্তির বিষয়, সেই পথে সরকার ইতিবাচকভাবেই হাঁটিতেছে। ইতোমধ্যে দুই দফায় অন্তর্বর্তী সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলির সহিত সংলাপ করিয়াছে।
আমরা মনে করি, টেকসই গণতান্ত্রিক উত্তরণে বর্তমান সরকারের করণীয় কম নহে। আমরা দেখিয়াছি, বিগত তিনটি নির্বাচনে দেশের নাগরিকের ভোটাধিকার হরণের আয়োজন করা হইয়াছিল। যাহার ফলে নির্বাচন ব্যবস্থা হইতে নাগরিকদের আস্থা প্রায় উঠিয়া গিয়াছে। তজ্জন্য ভোটারদের মধ্যে আস্থা ফিরাইয়া আনাও অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাহার অংশ হিসাবেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভাঙিয়া পড়িবার কারণে সরকার যেই সংস্কার কমিটি গঠন করিয়াছে, তাহাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা জরুরি।
স্মরণে রাখিতে হইবে, বিভিন্ন কারণেই দেশের আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যথায় দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করিতে হইবে। দেশে যাহাতে পুনরায় ফ্যাসিবাদী সরকার কায়েম না হইতে পারে, তজ্জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারেও সরকার উদ্যোগী হইয়াছে। সেইভাবে সংবিধান সংশোধনসহ যেই সকল দাবি উঠিয়াছে, সেইগুলিকে আমলে লইতে হইবে।
স্বাভাবিক কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র-জনতার প্রত্যাশার অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হইবে না। তজ্জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সরকারই ক্ষমতায় আসিবে, উহারা সেইগুলি বাস্তবায়নে উদ্যোগ লইবে। আপাতত জরুরি কর্ম হইল উপযুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সেই লক্ষ্যে সার্চ কমিটির প্রত্যাশিত পদক্ষেপ গ্রহণের অপেক্ষায় জাতি।