চার মাস অচল সিটি স্ক্যান মেশিন, রোগীর ভোগান্তি

জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতাল

পাঁচ বছরের ‘ওয়ারেন্টি’ শেষ। এর পরই বিকল সিটি স্ক্যান মেশিন। গত আগস্ট থেকে রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে হচ্ছে না সিটি স্ক্যান। রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের পুরোনো সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্টের পর ২০১৭ সালে ১৬০ স্লাইসের জাপানি মেশিন কেনা হয়। এটি সরবরাহ করে ইরবিস ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশ লিমিটেড। সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরের (সিএমএসডি) মাধ্যমে এটি ১১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকায় কেনা হয়। এর পর ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে স্থাপন করা হয়। পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি শেষ হয়েছে গত বছর জুনে। ডিসেম্বরে মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয়। তবে আগস্টে একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে। মেরামতে দিনের পর দিন চিঠি চালাচালি হলেও মিলছে না সুরাহা। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করছে ঠেলাঠেলি।

সূত্রের ভাষ্য, এক প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা মেশিন অন্যরা মেরামত করতে আগ্রহ দেখায় না। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ইরবিস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছর মেরামত সেবায় লাগবে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকার বেশি। কম্প্রেসিভ মেইনটেনেন্স কন্ট্রাক্ট (সিএমসি) গাইড অনুযায়ী, ইরবিসকে মোট খরচের ১০ শতাংশ পারফরম্যান্স সিকিউরিটি অগ্রিম জমা রাখতে হবে সরকারের কাছে। গত ১২ জুন ইরবিসকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এটি রাখতে রাজি নয় তারা, যা গাইডলাইন পরিপন্থি। ইরবিস বলছে, টাকাটা যেহেতু পাঁচ বছরে ভাগ করে সরকার তাদের দেবে, এ জন্য প্রতিবছর যে টাকা তারা পাবে, তার ১০ শতাংশ জমা রাখবে ইরবিস।

প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল আওয়াল সমকালকে বলেন, চুক্তির এক বছর পর আমরা বিল পাব। আগেই এক বছরের মোট টাকার ১০ শতাংশ আমরা জমা রাখতে রাজি আছি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ বছরের মোট টাকার ১০ শতাংশ জমা দিতে বলছে। এটি সম্ভব নয়। সরকারি এ কাজে লাভের সম্ভাবনা খুব কম। এর পরও আমরা কাজ করতে চাই এবং প্রতিবছর যে টাকা পাব, তার ১০ শতাংশ দিতে রাজি।

জানা যায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড) থেকে প্রায় ১২ বছরের পুরোনো একটি সিটি স্ক্যান (১৬ স্লাইস) মেশিন ২০১৮ সালে হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে স্থাপন করা হয়। সেটিতে দিনে দু-তিনটি সিটি স্ক্যান করা সম্ভব।

সূত্র জানায়, ক্যান্সার হাসপাতালে আসা রোগীর মধ্যে প্রতিদিন অন্তত ৫০ জনের সিটি স্ক্যান প্রয়োজন হয়। নতুন মেশিন বিকল হওয়ায় সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ রেডিও থেরাপি বিভাগের সিটি সিমোলেটর মেশিনে সিটি স্ক্যান পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। সিটি সিমোলেটর মেশিন তখন রেডিও থেরাপি বিভাগ ব্যবহার করত না। সেটিতেই বর্তমানে সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি এ হাসপাতালে সিটি স্ক্যানের খরচ ২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা। একই পরীক্ষা করাতে প্রাইভেট হাসপাতালে লাগে সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। সামর্থ্যবানরা অনেক ক্ষেত্রে বাইরে থেকে পরীক্ষাটি করান। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী ১০-১২ দিন দেরি হলেও ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান করান।

রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের এক কর্মচারী জানান, রেডিওলজি বিভাগে দিনে ১৮-২০ জনের বেশি সিটি স্ক্যান করানো সম্ভব নয়।

ফরিদপুরের নগরকান্দার ভাটপাড়ার কৃষক হিরু মাতবর চিকিৎসার জন্য গত বুধবার ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু হিরু মাতবর ক্যান্সার হাসপাতালে এটি করাতে পারেননি। রেডিওলজি বিভাগ তাঁকে ৪ ডিসেম্বর আসতে বলেছে। হিরুর চাচাতো ভাই কামরুল হাসান বলেন, ‘সিটি স্ক্যান রিপোর্ট ছাড়া চিকিৎসা দেবেন না বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. জাহাঙ্গীর কবীর সমকালকে বলেন, ‘সিটি স্ক্যান মেশিনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আলাপ করেছি। মেরামতের জন্য চেষ্টা চলছে।’ 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews