দেশ ছেড়েছিলেন দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে। বিদেশের মাটিতে উপার্জন করে হাসি ফোটাবেন বাবা-মা ও ভাইবোনের মুখে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। উল্টো পরবাসে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন কাটছে প্রায় ২০০ বাংলাদেশির। সেসঙ্গে আছে প্রাণঘাতী রোগে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি।

গত মঙ্গলবার জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব অংশের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসের দক্ষিণাঞ্চলে এসব বাংলাদেশি পৌরনারা রিসেপশন সেন্টার নামের ওই শরণার্থী শিবিরে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। রাজধানী নিকোসিয়ার পাশেই এ শিবিরে পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। শৌচাগার ও পানির ব্যবস্থা সেখানে ভালো নয়। যে সংখ্যক লোককে আশ্রয় দেওয়ার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি শরণার্থীর বাস সেখানে। এসব শরণার্থীর সিংহভাগই আফ্রিকার। মূলত এদের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ছে নানা প্রাণঘাতী রোগ। এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে খোদ সাইপ্রাস সরকারের ভেতরেই।

সাইপ্রাসের (দক্ষিণ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সাইপ্রাস মেইল অনলাইন জানায়, পৌরনারা শিবিরে গত দুই বছরে ১ হাজার ৭৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর দেহে প্রাণঘাতী কয়েকটি রোগ শনাক্ত হয়েছে।

এর মধ্যে ১৮৫ জনের দেহে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পাওয়া গেছে ৬৯০ জনের দেহে, ৮৮ জনের হেপাটাইটিস সি-সিফিলিস আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ জন এবং ৩১ জনের যক্ষ্ণা শনাক্ত হয়েছে। পৌরনারার এসব তথ্য সাইপ্রাস পার্লামেন্টের অ্যাডহক কমিটির কাছে পাঠান দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে যাওয়া শরণার্থীদের ঠিকানা হয় পৌরনামা আশ্রয়শিবিরে। সম্প্রতি এ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন দক্ষিণ সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস অ্যানেস্তাসিয়াদেস। তিনি এ পরিস্থিতিকে 'ট্র্যাজিক' বা বিয়োগান্তক বলে বর্ণনা করেছেন। পৌরনারা সাইপ্রাসের সবচেয়ে বড় শরণার্থী আশ্রয়শিবির।

আশ্রয়শিবিরে যেসব বাংলাদেশির জায়গা হয়েছে তাঁদের প্রায় সবাই মানব পাচারের শিকার। পৌরনারার ফটকে ২৪ বছরের বাংলাদেশি সেলিম হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'আমাদের পাসপোর্ট নেই। দক্ষিণ সাইপ্রাসে পাঠানোর আগে উত্তর সাইপ্রাসেই এক বাংলাদেশি মানব পাচারকারী তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো ছিনিয়ে নিয়েছে।' এ বাংলাদেশিদের সাইপ্রাসের উত্তরাঞ্চলে কাজ করার কথা ছিল।

সেলিমের সঙ্গে ছিলেন আরেক বাংলাদেশি এনামুল হক। গত ৬ জুন তাঁরা রাজধানী ঢাকা থেকে রওনা করেন। স্থানীয় পাচারকারীদেরই ৭ হাজার ৩৬০ ডলার করে দিয়েছিলেন তাঁরা। এসব পাচারকারীর যোগাযোগ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে থাকা তাঁদের সদস্যদের সঙ্গে। কীভাবে সাইপ্রাসে পৌঁছেছেন- এ প্রসঙ্গে সেলিম হোসেন বলেন, পাচারকারীদের সংশ্নিষ্টতায় তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে পর্যটন ভিসায় দুবাইয়ে গেছেন। সেখানে তাঁরা দুই রাত অবস্থান করেন। পরে পাচারকারীরা তাদের তুরস্ক হয়ে উত্তর সাইপ্রাসে পাঠায়। তিনি বলেন, তাঁরা তিনবার ফ্লাইট পরিবর্তন করেছেন। প্রত্যেক পর্যায়েই কয়েকজন বাংলাদেশি পাচারচক্রের সদস্য তাঁদের সহায়তা করেন। উত্তর সাইপ্রাসে তাঁদের এরকান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংস্কার কাজে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

সাইপ্রাস দ্বীপ ১৯৭৪ সালে বিভক্ত হয়। একটি অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে তুরস্ক এর উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সাইপ্রাসের উত্তরাঞ্চলের টার্কিস সাইপ্রিয়ট সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া একমাত্র দেশ তুরস্ক। দুই অংশের মাঝখানে ১৮০ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews