সুলভ মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি দেশজুড়ে যে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করছে তা অনেক পরিবারেই স্বস্তি এনেছে। শুক্রবার সমকালের প্রতিবেদনে প্রকাশ, করোনা দুর্যোগের এ সময়ে 'টিসিবি-ওএমএসের লাইনে মধ্যবিত্তরা'। কিন্তু অস্বস্তির বিষয় হলো, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেককে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। টিসিবির বরাদ্দ কম থাকার কারণে যেভাবে কাঙ্ক্ষিত মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, সেটি কারও জন্যই সুখকর নয়। টিসিবির পণ্য ও খোলাবাজারে ওএমএসের চাল প্রধানত নিম্নবিত্তের জন্য হলেও সেখানে মধ্যবিত্তের দাঁড়ানোর বিষয়টি বোধগম্য। চলমান লকডাউনই নয় বরং গত বছর থেকে করোনা অতিমারির প্রভাবে মধ্যবিত্তের অনেকেই যে সংকেটে পড়েছেন, তা স্পষ্ট। অনেকেই চাকরি হারিয়েছে এবং অধিকাংশ পরিবারের আয় কমার চিত্র বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফলে সংকটে পড়া মধ্যবিত্ত উপায়ান্তর না দেখে ভিড় করছে টিসিবি-ওএমএসের পণ্যে। আমরা মনে করি, যারাই এ পণ্যের জন্য দাঁড়াচ্ছে তাদের জন্য তা নিশ্চিত করা জরুরি।
বলাবাহুল্য, এখানে অন্যান্য অব্যবস্থাপনাও স্পষ্ট। টিসিবির ট্রাক যথাসময়ে না আসার কারণেও অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন। সমকালে প্রতিবেদন অনুসারে, সকাল ১০টা থেকে পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও দুপুর পর্যন্ত অনেক জায়গায় ট্রাকের দেখা মেলে না। এমনিতেই এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অধিকসংখ্যক মানুষ পণ্যের জন্য ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়ায়। তার ওপর যদি ট্রাক আসতে কিংবা পণ্য প্রদানে দেরি হয় তা অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সম্প্রতি বস্তা পরিবর্তন করে টিসিবির পণ্য অন্য জায়গায় বিক্রির অভিযোগে সম্প্রতি তিনজনকে আটক করে র্যাব। অসাধু ডিলারদের কারণেই এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। যেখানে সাধারণ মানুষই ঠিকমতো পণ্য পাচ্ছে না সেখানে এরা অন্যত্র বিক্রি করছে! টিসিবি কীভাবে এদের ডিলার বানাচ্ছে? টিসিবি কিংবা ওএমএসের বাজার মূল্যের চেয়েও কম মূল্যে পণ্যের জন্য মানুষ ভিড় করলেও সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকছে। করোনা ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের এ সময়ে বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। এর সমাধান হতে পারে অধিকসংখ্যক স্থানে টিসিবি পণ্য বিক্রি। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বরাদ্দও বাড়ানো জরুরি। অন্তত লকডাউনের এ সময়ে মানুষকে যাতে খালি হাতে ফেরত যেতে না হয় সেজন্যও অতিরিক্ত সরবরাহ প্রয়োজন।
কেবল রাজধানীতেই নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও টিসিবির কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। আমরা জানি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষত অতিমারির এ সময়ে সরকারের সহায়তা পাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বড় উদ্যোক্তাদের সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে উঠে দাঁড়ানোর পথ রয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার, যারা হঠাৎ করে সংকটে পড়েছে তাদের জন্য সরকারি সাহায্য পৌঁছানোর সরাসরি পথ নেই বললেই চলে। এ দুঃসময়ে মধ্যবিত্তের সহায়তার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে টিসিবি ও ওএমএসের কার্যক্রম। তাই এখন মধ্যবিত্তের স্বার্থেই এ কার্যক্রমগুলো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। বলার অপেক্ষা রাখে না, টিসিবির কার্যক্রম কেবল ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, তেল, আটা তথা নিত্যপ্রয়োজনীয় বিক্রি করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই নয়, বরং পণ্যের দামে ভারসাম্য রাখাও সংস্থাটির বলা চলে প্রধানতম কাজ।
যদিও বাজার স্থিতিশীল রাখতে সংস্থাটি বারবার ব্যর্থ হয়েছে। মূলত দুর্নীতি, দক্ষ জনবল ও মূলধনের অভাবসহ নানা কারণেই টিসিবি তার কাজ যথাযথভাবে করতে পারছে না। পণ্য কেনায় টিসিবির হাতে যথেষ্ট তহবিল না থাকা ও সরাসরি পণ্য আমদানি ও ক্রয়ে আইনি বাধা থাকার কারণে সংস্থাটি এ সংকটকালেও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মানুষকে পণ্য দিতে পারছে না। দৃশ্যত টিসিবিকে আরও শক্তিশালী করলে অধিক ট্রাক সেলের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত যেমন উপকৃত হবে তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মধ্যবিত্তও লাভবান হবে।
ঈদের পর ২৬ জুলাই থেকে দেশব্যাপী টিসিবির কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যা ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চলার ঘোষণা রয়েছে। আমরা মনে করি, সারা বছর নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে টিসিবি ও ওএমএসের পণ্য ক্রয়ের সুযোগ থাকা উচিত। বিশেষ করে দুর্যোগের এ সময়ে হঠাৎ করে বন্ধ করলে তা অনেক পরিবারের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।