আড়াই হাজার বছর আগে চীনা যুদ্ধবিদ্যা বিশারদ সান জু যুদ্ধ না করেই যুদ্ধ জেতা, শান্তির সময় যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং যুদ্ধের সময় শান্তির লক্ষ্য অর্জনের বিষয়গুলোর বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছিলেন। আড়াই হাজার বছর আগের সেই ওয়ার টেকনিক এখনো চীন অনুসরণ করে চলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও মৌলিক যুদ্ধবিদ্যার গ্রন্থ হিসেবে সান জু’র লেখা গ্রন্থটি ইংরেজীতে ‘আর্ট অব ওয়ার’ নামে বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত ও বিক্রিত যুদ্ধবিদ্যার গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। নতুন সহ¯্রাব্দের শুরুতে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ার এবং পেন্টাগন ওয়াশিংটনসহ বেশ কয়েকটি স্থানে একযোগে সন্ত্রাসী বিমান হামলার দায় কোনো তদন্ত ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে আল কায়দার উপর চাপিয়ে এবং আলকায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও নেটওর্য়াকের আশ্রয়দানের অভিযোগে প্রথমে আফগানিস্তান, অত:পর ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোজোট একতরফা নজিরবিহীন সমরাভিযান ও রাষ্ট্র দখলের রক্তাক্ত খেলায় মেতে ওঠে। সে সময় ন্যাটো এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী উভয়েই সান জু’র আর্ট অব ওয়ারের যুদ্ধ কৌশল অনুসরণ করছে বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছিল। জেনারেল সান জু যুদ্ধের কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করলেও এটি শুধু কামান-বন্দুক নিয়ে মাঠের লড়াইয়ের যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ নয়, তার এই যুদ্ধকৌশল রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধকৌশল পররাষ্ট্রনীতি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কর্মকাÐের ক্ষেত্রে চীন সরকারের গতিবিধি লক্ষ্য করলে সান জু’র নির্দেশনার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। সেখানে হার্ড পাওয়ারের চেয়ে সফ্ট পাওয়ারকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ওয়ার অন টেররিজমের শুরুতে পশ্চিমা সমরবিদরা সান জু’র যুদ্ধবিদ্যা অনুসরণের কথা বললেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের যুদ্ধ আয়োজনে সান জু’র নির্দেশনার বিপরীত চিত্রই দেখা গেছে। নিজেরা বাস্তবিক আক্রান্ত না হয়েও পরিকল্পনাহীন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যহীন ও অনৈতিক যুদ্ধযাত্রায় ব্যর্থতা ও পরাজয় এড়ানো অসম্ভব। আফগানিস্তান বা ইরাকে মার্কিনীদের লক্ষ্যহীন যুদ্ধ শুধুমাত্র ওয়ার কন্ট্রাক্টরদের স্বার্থ হাসিল করেছে। মার্কিন জনগণের কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে সঙ্কুচিত করে ট্রিলিয়ন ডলারের যুদ্ধব্যয় শুধুমাত্র মিলিটারি ইন্ডাসট্রিয়াল কমপ্লেক্সের মুনাফা বাড়িয়েছে। বিশ বছর ধরে নির্বিচারে বোমা ফেলে আফগানিস্তান ও ইরাকের সমৃদ্ধ জনপদ ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো মাটিতে মিশিয়ে দেয়া এবং লাখ লাখ আফগানের জীবন সংহারের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে হাজার হাজার মার্কিন সেনার মৃত্যু, আত্মহত্যা এবং পঙ্গুত্ব বরণের বিনিময়ে পশ্চিমাদের অর্জন শূন্য।

ভুলের উপর ভিত্তি করে যেমন যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল, একইভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরাজয় মেনে নিয়ে তালেবানদের সাথে সমঝোতা করে আফগানিস্তান ত্যাগ করার শেষ মুহূর্তেও মারাত্মক ভুলের পুনরাবৃত্তি করে পরাজয়ের শেষ দৃশ্যটাকেও তারা কলঙ্কিত করেছে। আইসিস নামে পরিচিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর পেছনের ইন্ধন ও মদদ দেয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ও ইসরাইলের ভূমিকা এখন সুবিদিত। আফগানিস্তান থেকে মার্কিনীরা সরে যাওয়ার শেষ সপ্তাহে ২৬ আগস্ট কাবুল যখন পুরোপুরি তালেবানদের দখলে, তখন ইসলামিক স্টেট খোরাসান শাখার পক্ষ থেকে পরিচালিত একটি সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনাসহ শতাধিক আফগান নাগরিক নিহত হয়। আহতের সংখ্যা এর দ্বিগুণের বেশি। শেষ মুহুর্তের এই আঘাতের প্রতিশোধ হিসেবে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড ২৯ আগস্ট আইসিস কে’র ঘাটিতে ড্রোন হামলার কথা বললেও আদতে তাদের ড্রোন হামলায় শিশু ও নারীসহ বেশকিছু আফগান বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়। শান্তিপূর্ণ বিদায় মুহূর্তে দুইদশক ধরে চলা একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল যুদ্ধ আয়োজনের শেষ প্রান্তে এসে মার্কিনীদের সামরিক পরাজয় চূড়ান্ত রূপে বর্বরতা ও নৈতিক পরাজয়ের পরাকাষ্ঠা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মার্কিন সেনাদের জীবনের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সেন্ট্রাল কমান্ড আফগানিস্তানে ড্রোন হামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। রিমোট কন্ট্রোল ড্রোন দিয়ে মানুষ হত্যার এই কৌশল একেবারে শেষ সময়েও শিশু হত্যার মত ঘৃণ্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এভাবেই আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধের স্বাক্ষর দেখল বিশ্ববাসী। মিলিটারি ইন্টিলিজেন্সের ভুল তথ্য ও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হওয়া যুদ্ধের শেষ দশ্যটিও ছিল ভুল টার্গেট ও মানবিক বিপর্যয়ের। একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধকে এভাবে বিভ্রান্ত করার মধ্য দিয়ে যে পরাজয়ের গøানী নিয়ে মার্কিনীরা ফিরে গেলো, তা অনৈতিক-পুঁজিবাদী মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের চূড়ান্ত পতনের দুয়ারকেই উন্মোচিত করেছে।

মার্কিনীরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। লিবারেল বা মুক্তবুদ্ধীর সাংবাদিক-অ্যাকাডেমিসিয়ানরা ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের চরম পরিনতির অনেক আগেই সেখান থেকে মার্কিন সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার দাবী ও যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামে চরম পরাজয়ের অনেক আগেই মার্কিন সাংবাদিক, অধ্যাপক হাওয়ার্ড জিন সেনা প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন। আরো অনেকেই এ দাবীর সপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। হাওয়ার্ড জিনের এ সংক্রান্ত লেখাগুলো লজিক অব উইথড্রয়াল নামে ১৯৬৭ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ শুরুর এক দশক পর ২০১০ সালে হাওয়ার্ড জিন মৃত্যুবরণ করেন। আফগান যুদ্ধেও ভিয়েতনামের পরিনতি ঘটতে পারে বলে তিনিও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে তা’ও সত্যে পরিনত হল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট মিডিয়াগুলোর সাথে এর পুঁজিবাদী লুন্ঠনের অর্থনীতি ও সা¤্রাজ্যবাদের গাঁটছড়া সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। এসব মিডিয়া অনবরত মিথ্যা গোয়েন্দা তথ্য, মতলবি গবেষণা রিপোর্ট ব্যবহার করে একের পর এক নতুন নতুন জুজু দেখিয়ে বিশ্বের সাধারণ নাগরিকদের মগজ ধোলাই করতে পারলেও এর বিপরীতে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই যুদ্ধবিরোধী নাগরিক আন্দোলন ক্রমেই যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষত যুদ্ধে ভেটারান ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে মার্কিন সমাজে যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে তার সাথে মার্কিন প্রশাসনের সাধারণ নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির কোনো সাজুয্য খুঁজে পাওয়া যায় না। মার্কিন জনমতকে কৃত্রিমভাবে একটি সুপরিকল্পিত প্রোপাগান্ডার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের এই প্রয়াস এখন মার্কিন গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তিকেই ধসিয়ে দিতে বসেছে। চীন-রাশিয়ার কৌশলগত ঐক্য ও ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাবে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ যতই টলায়মান হোক, এর বিপরীতে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক জায়নবাদী ইহুদী ব্যাংকারদের নিয়ন্ত্রিত একটি কর্পোরেট সংস্থা। এই সংস্থার উপর মার্কিন সরকার বা জনগণের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। ইরান, উত্তর কোরিয়ার মত দেশগুলোর কথা বাদ দিলে বিশ্ব অর্থনীতি ও তথা ব্যাংকিং সিস্টেমেরর মূল নিয়ন্ত্রণ এই গোষ্ঠীর হাতে। এর মানে দ্াঁড়াচ্ছে, বিশ্ব জনমত যেদিকেই থাক, এই কর্পোরেট অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ মূলত জায়নবাদী গোষ্ঠীর হাতেই থাকছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা দেশগুলোকে নানাবিধ তকমা দিয়ে অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা ও অব্যাহত হুমকির মধ্যে রাখার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কোনো স্বার্থ নেই। মার্কিন ডলার, ব্যাংকিং সিস্টেম ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিশ্বের অর্থব্যবস্থাকে মুক্ত করতে না পারলে বিশ্বের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি কখনো সম্ভব নয়।

সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে এক ধরনের অপরাধবোধে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে বলে কোনো সমাজতাত্তি¡ক মনে করেন। অর্থাৎ পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো ভেতর থেকে নৈতিকভাবে ধসে যেতে বসেছে। সেখানকার সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং অ্যাকাডেমিক ও গবেষণামূলক ডিবেটেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। টাইমস ম্যাগাজিনে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক বিগ্যার নাইজেলের একটি একটি নিবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘ডোন্ট ফিল গিল্টি অ্যাবাউট আওয়ার কলোনিয়াল হিস্টরি’। তবে খোদ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতেই এই অধ্যাপকের বিপরীত মতের অ্যাকাডেমিসিয়ানের সংখ্যাই বেশি। বিগ্যার নাইজেলের লেখাটিকে যেন সাধারণ মানুষ অক্সফোর্ড অধ্যাপকদের সমর্থনপুষ্ট মতামত মনে করে ভুল না করেন, এজন্য অক্সফোর্ডের একদল অধ্যাপক একটি যৌথ বিবৃতির মধ্য দিয়ে কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ‘এথিক্স অ্যান্ড এমপায়ার’ প্রজেক্ট বক্তব্যের যুক্তি খÐন করে একটি বিপরীত যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। সেখানে নতুন প্রজন্মকে অতীতের ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল-ভ্রান্তিগুলোকে নির্মোহভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে নতুন এক নৈতিক অবস্থান বিনির্মাণের কথা বলা হয়েছে। অ¤্রতিসর ম্যাসাকার ও তাসমানিয়ান জোনোসাইডের মত ঘটনাগুলোকে নিয়ে গিল্টি ফিল করার নৈতিক কারণ এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব বলে মনে করেন তারা। বৃটিশ কলোনিয়াল শাসকরা আইন করে দাসপ্রথা বন্ধ করলেও দাসদের শ্রমে গড়ে তোলার রেললাইন ও দক্ষিণ আমেরিকায় তুলা উৎপাদন ও আমদানি থেকে মুনাফা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে পরোক্ষভাবে দাসপ্রথার সুফল ঘরে তোলার প্রশ্ন তুলেছেন তারা। প্রায় শতবছর পেরিয়ে এসে উপনিবেশিক শোষণকে বৈধতা দেয়ার জায়নবাদী প্রজেক্ট ব্যর্থ হতে বাধ্য। প্রসঙ্গক্রমে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান ও ইরাক দখলের পর সেখানে স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র, সাদ্দাম বা তালেবান শাসনের চেয়ে ভাল নিরাপত্তা বা সুশাসন দিতে পারেনি পশ্চিমারা। অক্সফোর্ডের অর্ধশতাধিক অধ্যাপক-অ্যাকাডেমিসিয়ানের যৌথ স্বাক্ষরে ম্যাকডোনাল্ড সেন্টারের স্পন্সরে পরিচালিত এথিক্স অব অ্যামপায়ার প্রকল্পের ভুল পদ্ধতি, খারাপ উদ্দেশ্য ও অসারতা প্রমাণের ঘটনা পশ্চিমা ইন্টেলিজেন্সিয়ায় এক বড় পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।
মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও যুদ্ধবাদবিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রধান কণ্ঠম্বর এমআইটির এমিরেটাস প্রফেসর, বহু গ্রন্থের লেখক, নোয়াম চমস্কির একটি লেখা সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটির অনুবাদ গত তিনদিন ধরে দৈনিক ইনকিলাবে ছাপা হয়েছে। চমস্কি মার্কিন যুদ্ধংদেহী পররাষ্ট্রনীতির তুখোড় সমালোচক হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাকে কখনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপ বা হেনস্তার মুখে পড়তে হয়নি। এখানেই গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যদিও নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, হোম সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানাবিধ নির্বতন ও বৈষম্যমূলক আইনের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে একটি মুসলিম বিদ্বেষী ভাবধারা তথা ইসলামোফোবিয়ার জন্ম দিয়ে সেখানে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতার আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে তাদের সেসব প্রপাগান্ডা এবং যুদ্ধবাদী নীতি চরমভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ইরাক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মার্কিন প্রতিশ্রæতি পূরণে ব্যর্থতা এবং আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর চরম পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুদ্ধবাদী অর্থনীতি ও রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার ভেতরকার চেহারাটা বিশ্বের কাছে অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে গেছে। শতাব্দীর সাক্ষি ৯৩ বছর বয়েসী নোয়াম চমস্কি বিশ্বের জন্য ভয়াবহ পরিনতি বহনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। তার লেখা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গ্রন্থগুলোতে এ বিষয়ে তিনি বিশ্বমানবিক মানদÐে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সা¤্রাজ্যবাদী ক্রুড়তার বিরুদ্ধে যৌক্তিক ব্যাখ্যাসমূহ তুলে ধরেছেন। ইকোনমিস্টে প্রকাশিত লেখাটিকে তারই সংক্ষিপ্ত সারৎসার বলা চলে।

যুদ্ধ শুরু করার আগে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারনের উপর তাগিদ দিয়েছেন সান জু। যে যুদ্ধ তোমার বিশেষ কোনো স্বার্থ নেই সে যুদ্ধ না করার কথা বলা হয়েছে। প্রায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন হচ্ছে, সেখানে অনেক কিছু ফেলে রাতের আঁধারে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার নতুন ইতিহাস। অথচ ২০০১ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর দুই মাসের মাথায় আফগান তালেবানরা যুদ্ধবিরতী তথা আত্মসমর্পণের প্রস্তাব করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে চমস্কি তৎকালীন আফগান তালেবান বিরোধী শিবিরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আব্দুল হকের একটি উক্তির কথা তুলে ধরেছেন, আনাতোল লিভেনের নেয়া সাক্ষাৎকারে আব্দুল হক বলেছিলেন, মার্কিন আগ্রাসন শেকড় থেকে তালেবানদের মূলোৎপাটনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। পরে এসে তালেবানরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী এবং মার্কিনীরাই তালেবানের সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছে। আবারো প্রমানিত হলো, মার্কিন যুদ্ধবাদী পররাষ্ট্রনীতির সাথে মার্কিন জনগণের কোনো স্বার্থ নেই। যে যুদ্ধে ২০০১ সালেই আপাত বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল, সেই যুদ্ধের পেছনে ২০ বছরে আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করার পর চরম পরাজয় নিয়ে তালেবানদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে মার্কিনীদের ঘরে ফিরতে হল। মাঝখানে শত শত বিলিয়ন ডলারের মুনাফা হল মিলিটারি ইন্ডাসট্রিয়াল কমপ্লেক্স এবং ওয়ার কন্ট্রাক্টরদের। মূলত ওরাই মিথ্যা তথ্য ও প্রপাগান্ডা মেশিনারিজ কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অন্তহীন যুদ্ধে নামিয়েছিল। চমস্কি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের ভবিষ্যৎ চীন-মার্কিন সহযোগিতার উপর নির্ভর করছে। অথচ পেন্টাগনের নীতি নির্ধারকরা চীনকে শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত করে বছরে চীনের চেয়ে ৪ গুণ যুদ্ধব্যয় করছে। হার্ড পাওয়ার নির্ভর যুদ্ধের নীতি-কৌশলের দিন শেষ হয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্য ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সিস্টেমসহ আনুসঙ্গিক সবকিছুর উপর এখনো মার্কিন কর্পোরেট আধিপত্য থাকলেও নেপথ্যে থাকা জায়নবাদী ক্যাবালদের বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যাচার মার্কিন গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।
[email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews