রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মৃধাবাড়ী এলাকা থেকে ২৪ মে প্লাস্টিক ড্রামে ভরা অবস্থায় অজ্ঞাত পুরুষের খণ্ডিত পোড়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিন দিনেও ওই লাশ শনাক্ত হয়নি। তবে এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ হয়েছেন এমন অনেকের স্বজন ভিড় করছেন থানায়।





গত তিন দিনে অর্ধশতাধিক নিখোঁজের স্বজনরা থানায় এসেছেন। তারা সন্ধান চাচ্ছেন আপনজনদের। এদের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে পাঁচ নিখোঁজকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগ এবং যাত্রাবাড়ী থানার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে ডিসেম্বরে যাত্রাবাড়ীর ময়লার ভাগাড়ে পাওয়া যায় এক নারীর পোড়া ও অর্ধগলিত লাশ। পাঁচ মাসেও ওই লাশের পরিচয় মেলেনি। তবে ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ রহস্য উন্মোচন করেছে চট্টগ্রামের রাউজানের একটি ক্লুলেস নারী হত্যাকাণ্ডের।

জানতে চাইলে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ২৪ মে এবং ১৬ ডিসেম্বর উদ্ধার হওয়া লাশ দুটি বীভৎসভাবে পোড়ানো হয়েছে। এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছে যে, পরিচয় নিশ্চিতে আঙুলের ছাপও নেওয়া যায়নি। পরিচয় নিশ্চিতের জন্য ভরসা করতে হচ্ছে ডিএনএ এবং রাসায়নিক পরীক্ষার ওপর। এ জন্য আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। লাশ বিকৃত করতে কী ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে সেটিও জানার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তবে দুটি লাশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য কয়েক ঘটনার রহস্য ভেদ হয়েছে। আরও কয়েকটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দ্বারপ্রান্তে।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাযহারুল ইসলাম জানান, মৃধাবাড়ী এলাকা থেকে অজ্ঞাত পুরুষের লাশ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে যে পাঁচ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে, তারা হলেন-মিজানুর রহমান সুজন ওরফে পনির (৩৮), কামরুজ্জামান কালন মোল্লা (৫০), সগির হোসেন (৪০), মাসুদ রানা (৩৮) এবং আল আমিন। এদের মধ্যে পনিরের বাড়ি ডেমরার ডগাইর এলাকান পূর্বপাড়া বটতলায়। ১৮ মে থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার সময় তার কাছে দেড় লাখ টাকা ছিল। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। ২৪ মে অজ্ঞাত পুরুষের লাশ উদ্ধারের পর পনিরের স্বজনরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের আশঙ্কা ছিল ওই বিকৃত লাশটি পনিরের হতে পারে। তবে ওইদিনই তাকে খুলনা থেকে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, কালন মোল্লা ২২ মে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন কাওরান বাজার থেকে নিখোঁজ হন। তার স্বজনদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে ২৪ মে জানা যায়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা আছে।

সগির হোসেনের সন্ধানে স্বজনরা হয়ে পড়েছিলেন পাগলপ্রায়। তারাও লাশ উদ্ধারের খবরে যাত্রাবাড়ী থানায় এসে জিডি করেন। জিডির পরদিন ২৬ মে জানা যায়, ছগির উত্তরার একটি দোকানে চাকরি করছেন।

পুলিশ আরও জানায়, উদ্ধার হওয়া মাসুদ রানার বাড়ি চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলবের জোরখালীতে। ২২ মে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে গরু কিনতে বের হন তিনি। এরপর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ জানার চেষ্টা করে উদ্ধার হওয়া লাশটি মাসুদের কিনা। অল্প সময়েরই পুলিশ নিশ্চিত হয়, ওই লাশটি মাসুদের না। পরে মাসুদকে উদ্ধারে প্রযুক্তির সহয়তা নেয় থানা পুলিশ। ২৬ মে তাকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে উদ্ধার করা হয়।

প্লাস্টিকের ড্রামে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মুকিত হাসান যুগান্তরকে বলেন, ২৩ মে নিখোঁজ হন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আল আমিন। ২৪ মে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের পর তার স্বজনরা যাত্রাবাড়ী থানায় ছুটে আসেন। প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার জানা যায়, তার অবস্থান রাজধানীর পুরান ঢাকায়। জানা যায়, পরকীয়া করতে গিয়ে তিনি স্ত্রীর কাছে ধরা খান। এর জেরে তিনি নিজেই আত্মগোপনে চলে যান। এক প্রশ্নের উত্তরে এসআই মুকিত বলেন, ২৪ মে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা থানায় আসছেন। সবারই ধারণা করছিলেন, ওই লাশটি হয়তো তাদের স্বজনের। প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা যখন নিশ্চিত হচ্ছি যে, সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীর স্বজন জীবিত আছে, তখন আমরা সেটিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। আপাতত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্তে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ীর ময়লার ভাগাড়ে পাওয়া নারীর পোড়া ও অর্ধগলিত লাশের ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে চট্টগ্রামের রাউজানের একটি ক্লুলেস নারী হত্যাকাণ্ডের। ওই নারীর নাম আমেনা খাতুন। তার বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। আমেনা হঠাৎ নিখোঁজ হলে কক্সবাজার সদর থানায় জিডি করে তার পরিবার। এর প্রায় এক মাস পর যাত্রাবাড়ীতে উদ্ধার হওয়া লাশের হাতের চুড়ি ও শারীরিক চিহ্নে মিল খুঁজে পান আমেনার মা-বাবা। সেই সূত্রে শুরু হয় তদন্ত। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিন্ন কিছু। যাত্রাবাড়ী থেকে উদ্ধার হওয়া নারী আমেনা নন। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশের ওয়ারী বিভাগ শনাক্ত করে রাউজানে নিহত কক্সবাজারের আমেনা খাতুনকে। ওই ঘটনায় পুলিশ তিন ঘাতককে গ্রেফতার করে। পরে তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে আমেনা হত্যার আদ্যোপান্ত। তবে এখনো রহস্যঘেরা অবস্থায় আছে যাত্রাবাড়ী থেকে উদ্ধার হওয়া নারী ও পুরুষের লাশ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews