প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৪৫ : অপরাহ্ণ
ব্যাংক মালিকদের সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আমদানি ও রপ্তানিতে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি (আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং) দেখিয়ে অর্থপাচার ঠেকাতে হবে। কোনোভাবেই নির্ধারিত দরের তুলনায় বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করা যাবে না। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক হয়। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে অর্থপাচার, ডলার কারসাজি, ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়।এতে বিএবি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান অংশগ্রহণ করেন।এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, ঘোষণার অতিরিক্ত মূল্যে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে। ফলে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমছে না। নির্বাচনের আগে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের সংস্থা এসব বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এর সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এতে দেশের আর্থসামাজিক সংকট তৈরি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে টাকা ছাপানোর মাধ্যমে অতিরিক্ত ঋণ না নিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছে। সেটা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে তারা। তবে নষ্ট ও পুরোনো সরিয়ে নতুন নোট ছাপানো অব্যাহত রাখতে বলেছে।
গভর্নর আরও বলেন, কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে আছে। কিছু গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে সময় নিচ্ছে। তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকের এমডিদের আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সুদের হারের সীমা তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক যেকোনও সুদে আমানত নিতে পারে।
সেসময় কিছু ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী পরিচালকদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, কিছু ব্যাংকে চেয়ারম্যান-পরিচালকদের ‘পার্সেন্টেজ’ না দিলে ঋণ মওকুফ হয় না। এমনকি ব্যাংকের কেনাকাটা, কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতিতে হস্তক্ষেপ করেন তারা। এসব বন্ধ করতে হবে।
অল্প দিনের ব্যবধানে কয়েকটি ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, প্রত্যেক এমডির কাছে পদত্যাগের কারণ জেনেছি। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নানা আর্থিক অনিয়মের ফিরিস্তি দিয়েছেন তারা। অনিয়ম বন্ধে তাদের বিরত করতে না পেরে নিজেরা পদত্যাগ করেছেন।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যানদের ব্যাখ্যা জানতে ডাকা হয়েছিল। এরপর সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এবং ন্যাশনাল ব্যাংক এমডিদের স্বপদে বহাল করেছে। কিন্তু ব্যাংক এশিয়া করেনি।
এসময় বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজমুদার বিষয়টি সুরাহার জন্য ২ দিন চান। তবে গভর্নর ৭ দিন দিয়ে বলেন, এর মধ্যে সুরাহা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমন্ত্রণে বিএবির প্রতিনিধি দল গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার, আমদানি-রপ্তানি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করায় বেসরকারি ১০ ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে তিনি জানান, অধিক দরে ডলার বিক্রির জন্য এসব ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সূত্র: চ্যানেল ২৪