গ্রেটাদের জাহাজের নাম যেই নারীর নামে রাখা হয়েছে, এই হলেন তিনি। তার নাম মাদলিন কুল্লাব (مادلين كُلّاب)। একত্রিশ বছরের ফিলিস্তিনি নারী, চার সন্তানের মা, আর পঞ্চম সন্তানের আগমনের অপেক্ষায়। মাদলিন হলেন গাজার প্রথম নারী মৎস্যজীবী। 

সমুদ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তার পাঁচ বছর বয়সে। বাবার হাত ধরে তিনি প্রথম সমুদ্রে যান। তার বাবাও ছিলেন গাজার মৎস্যজীবী। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে তেরো বছরের মাদলিন পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেন এবং জাল আর নৌকা নিয়ে নেমে পড়েন সমুদ্রে। গাজার অবরুদ্ধ সমুদ্রে প্রতিদিনের লড়াইয়ে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলেন। তিনি বলেন, ‘একজন জেলের জীবনে সমুদ্রই হলো বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই ঢেউয়ের গতি, বাতাসের তীব্রতা আর মাছের খোঁজে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি।’

মাদলিন কুল্লাব

এবারের ইসরাইলি হামলায় গাজার অন্য সবার মতো মাদলিনের জীবনও এলোমেলো হয়ে গেছে। তার নৌকা ভেঙে গেছে, জাল ছিঁড়ে গেছে, বাবা ও স্বামীর সঙ্গে মিলে যে স্বপ্ন তিনি গড়েছিলেন, তা ধুলোয় মিশে গেছে। অবরোধের কারণে মাছ ধরার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব আগে তো ছিলই, এবারের যুদ্ধ বাকিটুকুও কেড়ে নিয়েছে। মাদলিন হাল ছাড়েননি। এখনও তিনি প্রতিদিন ভোরে সমুদ্রে যান—শুধু জীবিকার জন্য নয়, গাজার সমুদ্রে তার অধিকার আর মর্যাদার জন্য।

আন্তর্জাতিক সংহতি সংগঠন ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা‘ যখন গাজার নৌ অবরোধ ভাঙতে মানবিক সাহায্যবাহী জাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা জাহাজের নাম রাখেন মাদলিন (Madleen)। মাদলিনের সংগ্রামের গল্প শুনে সংগঠনের একজন সদস্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার সম্মতি আছে কি না তারা জানতে চান। তিনি রাজি হন, তবে তিনি অনুরোধ করেন যেন জাহাজের সদস্যরা কোনও ঝুঁকি না নেন।

‘ম্যাডলিন’ নামের ত্রাণ সহায়তা জাহাজ ও আলোচিত সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ

২০২৫ সালের ১ জুন ইতালির কাতানিয়া উপকূল ছাড়ে মাদলিন জাহাজ। সঙ্গে থাকেন সুইডেন, ফ্রান্স, ব্রাজিল, স্পেন ও তুরস্কের অসম সাহসী কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং আলজাজিরার একজন সাংবাদিক। তার পরের ইতিহাস সবার জানা।

মাদলিন আশা করেছিলেন, তার নাম খচিত জাহাজ একদিন গাজার বন্দরে পৌঁছাবে; যা শুধু খাদ্য আর ওষুধ নিয়ে আসবে না, বরং গাজার মানুষকে মনে করিয়ে দেবে যে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাদের পাশে আছে। তিনি বলেন, ‘এই জাহাজের আগমন যেন যুদ্ধের অবসানের সুসংবাদ নিয়ে আসে’।

লেখক: তরুণ আলেম ও অ্যাক্টিভিস্ট



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews