মঙ্গলবার রাত পোহালেই ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। একটানা গত ১০ বছর ধরে দিল্লির ক্ষমতায় থাকা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি দিল্লির ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, নাকি দীর্ঘ ২৭ বছর পর আবার দিল্লির বিধানসভা বিজেপির দখলে যাবে– তারই ফয়সালা হবে বুধবারের (৫ ফেব্রুয়ারি) ভোটে। ভোট গণনার দিন হলো শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, দিল্লি থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশ এবারে ভারতের রাজধানী দিল্লির নির্বাচনি ন্যারেটিভে একটা বড় অংশ দখল করে আছে। যার একটা কারণ হলো ভারতে কথিত অবৈধ অনুপ্রবেশের ইস্যু, আর দ্বিতীয়টি ভারতে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা।







কথিত বাংলাদেশিদের ধরপাকড়

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের নানা অতিরঞ্জিত ও ভুয়া রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে গত কয়েকমাস ধরেই। এসব রিপোর্ট সত্য-মিথ্যা যাই হোক, এর ফলে সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে একটা বাংলাদেশবিরোধী সেন্টিমেন্ট কাজ করছে নিঃসন্দেহে। 

আর ঠিক এই পটভূমিতেই দিল্লিতে বাংলাদেশ থেকে তথাকথিত ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শহরে এসে বসত করার প্রশ্নটিকে এবার প্রবলভাবে সামনে নিয়ে এসেছে বিজেপি। আম আদমি পার্টির মদতেই ‘বাংলাদেশি নাগরিক’রা জাল আধার, প্যান বা ভোটার কার্ডের মতো ভারতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করে ভারতের মাটিতে জাঁকিয়ে বসছে– ভোটের আগে অহরহ এই প্রচার চালিয়েছেন বিজেপি নেতারা।

গত ডিসেম্বরেই দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বা ‘ঘুষপেটিয়া’ খুঁজতে সারা দিল্লিজুড়ে পুলিশকে অভিযান চালাতে হবে।

তার সেই হুকুম তামিল করতে দিল্লি পুলিশ শহরের বাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত গরিব বস্তিগুলোতে হানা দিতে শুরু করেছে এবং সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারলেই তাদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশের বিভিন্ন এলাকার ডেপুটি কমিশনাররা রীতিমতো একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘোষণা করেছেন, কাদের অভিযানে কতজন বাংলাদেশিকে ধরে ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে।

অবশ্য দিল্লি পুলিশ ‘আমরা ডিপোর্ট করেছি’ বলে দাবি করলেও এই আটক ব্যক্তিদের সত্যি-সত্যিই সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করেনি সরকারের কোনও সংস্থাই। তবে দিল্লি পুলিশ এদের এফআরআরও-র কাছে হস্তান্তর করার পর ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত নারী-পুরুষদের দিল্লিরই বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছিল– যাদের মোট সংখ্যা দুশোর কাছাকাছি।

আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিল্লির বুকে আশ্রয় দেওয়াটা যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিরাট ঝুঁকি– দিল্লিতে বিজেপির সব নেতাই প্রচারে সে কথাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনছেন। তারা আরও যুক্তি দিচ্ছেন, যেহেতু এই রোহিঙ্গারা আসলে মিয়ানমারের বাসিন্দা হলেও তারা বাংলাদেশ হয়েই ভারতে ঢুকেছেন– কাজেই ভারতের উচিত হবে তাদের বাংলাদেশেই ফেরত পাঠানো!

পুলিশি অভিযান





পুলিশি অভিযানের বৈধতা যাই হোক, বা বিজেপির প্রচারে সত্যতা যেটুকুই থাক, এসব পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যু দিল্লির ভোটারদের মধ্যে নতুন করে প্রবল চর্চায় এসেছে তাতে সন্দেহ নেই।

শেখ হাসিনাকে কেন আমরা আশ্রয় দেবো?

 গত আগস্টে ঢাকায় রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারত যখন সে দেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়, তখন মোটামুটি দেশের সব রাজনৈতিক দলই সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। পার্লামেন্টে সর্বদলীয় বৈঠকেও কংগ্রেস-সহ সব বড় দলেরই সমর্থন পেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন এআইএমআইএম দলের নেতা ও হায়দ্রাবাদের ডাকসাইটে এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।

তার যুক্তি ছিল, বাংলাদেশের প্রত্যাখ্যাত নেত্রীকে আশ্রয় দিয়ে ভারত কিন্তু সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকেই অযথা বিরাগভাজন করে তুলছে। শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে ভারত ছাড়তে বলা উচিত, এমনও যুক্তি দিয়েছিলেন তিনি।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি





সেই ওয়াইসির দল এআইএমআইএম এবার দিল্লির ভোটে অন্তত দু’টি মুসলিম-প্রধান আসনে প্রার্থীও দিয়েছে। যার একটি হলো মুস্তাফাবাদ ও অন্যটি ওখলা, যেখানে তাদের প্রার্থীরা হলেন— যথাক্রমে তাহির হুসেইন ও শিফা উর রহমান।

এই দুজনেই আবার পাঁচ বছর আগেকার দিল্লির ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অভিযুক্ত, যে কারণে তারা দুজনেই জেলে। ভোটে প্রচার করার জন্য তাহির হুসেইন পাঁচ দিনের প্যারোল পেলেও শিফা উর রহমানের সেটাও জোটেনি।

তো দলের এই দুই প্রার্থীর হয়ে প্রচারের ভার নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন ওয়াইসি। মুস্তাফাবাদ ও ওখলাতে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে তিনি বিশাল রোড শো করেছেন, জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন এবং সেখানেই টেনে এনেছেন শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ।

ওয়াইসি বলছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা যা-ই ঘটুক– তার জন্য এ দেশে কিন্তু দায়ী করা হচ্ছে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজকে। বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থার জন্য ভারতের মুসলিমদের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে, অথচ ভারত সরকারই সে দেশের অপসারিত নেত্রীকে আশ্রয় দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে!’

ফলে ভারতের মাটিতে শেখ হাসিনা অন্তরালে থেকেও দিল্লির নির্বাচনে একটি আলোচিত চরিত্র হয়ে উঠেছেন!



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews