বারবার সিদ্ধান্ত বদল করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে পরক্ষণেই তা বাতিল করছে। একাধিক এমন ঘটনা প্রশাসনে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খানকে। তাঁকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু বিকেলেই তা বাতিল করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইলাহী দাদ খান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তাঁর ব্যাপারে খোঁজখবর না নিয়েই দুই বছরের জন্য খাদ্য সচিব পদে তাঁকে নিয়োগে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত সোমবার তা অনুমোদন হয়। এর পর গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী ইলাহী দাদ খানকে অন্য যে কোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যোগদানের তারিখ থেকে তাঁর এ নিয়োগ কার্যকর হবে।’
ইলাহী দাদ খান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত বছরের ২৬ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি নীতি শাখার চিঠিতে বলা হয়, ইলাহী দাদ খানের কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধির ৪১৮/৪২০//৪৭৭(ক) ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধযোগ্য। চিঠিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পর তিনি অবসরে যান।
সকালে সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে বিকেলে বাতিলের বিষয়ে ইলাহী দাদ খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত সোমবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে সোমবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে
বদলি করা হয়।
খাদ্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে দুই কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানান, খাদ্য সচিব পদে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তিনি দুদকের মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তাদের বক্তব্য, প্রশাসনে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা থাকলেও চুক্তিতে সচিব পদে দুদকের মামলার আসামিকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি আপত্তিকর। এ ছাড়া চুক্তিতে কাউকে সচিব পদে নিয়োগ দিলে তাঁর নিচের দিকের অন্তত চারজন কর্মকর্তা বঞ্চিত হন।
এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এ কে এম মতিউর রহমান। তিনি গত সরকারের সমর্থক হিসেবে প্রশাসনে পরিচিত এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার ঘনিষ্ঠ। কর ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে ২৯টি বই লিখেছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বদলি ও পদায়ন সংক্রান্ত আদেশ বাতিলের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত ১৪ আগস্ট জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব পদে মোকাব্বির হোসেনকে পদায়ন করে ১৭ আগস্ট তা বাতিল করা হয়।
২৪তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সুফিয়া আক্তার রুমির নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর। অথচ তাঁকে গত ১০ সেপ্টেম্বর সেখানকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এক দিন পরই তা আবার বাতিল করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অতিরিক্ত সচিব সমকালকে বলেন, আমরা মনে করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনে সৎ, যোগ্য ও মেধাবীরা পদোন্নতি ও পদায়ন পাবেন। অথচ হচ্ছে সম্পূর্ণ উল্টো। কারণ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কিছু আমলা ও জনপ্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা সব নিয়োগ ও বদলির কাজ করছেন। তারা আরও বলেন, এভাবে প্রশাসন চলতে থাকলে অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কে পড়বে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এসব নিয়োগ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।