বাস্তবজগতের ভার্চুয়াল সংস্করণ তৈরির কাজ চলছে বহু বছর ধরে। শুরুতে কিছু বিল্ডিং আর রাস্তা, ধীরে ধীরে শহরের অংশ, এরপর যানবাহন, জাহাজ, উড়োজাহাজ, আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জিনিসেরই একটি ভার্চুয়াল মডেল রয়েছে কোথাও না কোথাও। মডেলগুলোর সঙ্গে জিনিসটির প্রকৃতি ও কার্যকারিতা যুক্ত করে সেটাকে বাস্তব জিনিসটির ভার্চুয়াল যমজেও পরিণত করা হয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করে নানা ধরনের গবেষণাও চলছে, যেমন—উড়োজাহাজের মডেলের ওপর ঘূর্ণিঝড়ের মডেল বসিয়ে বাস্তব দুনিয়ায় সেটি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পড়লে টিকে থাকবে কি না, সেটা বের করা।

বিজ্ঞাপন

এ ধরনের মডেলগুলোকে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল টুইন’। বেশ কিছু কম্পানি, যেমন—ম্যাকলারেন তাদের গাড়িগুলোর ডিজিটাল টুইন তৈরি করে, যেসব রেসট্র্যাকে সেগুলো প্রতিযোগিতায় নামবে সেই ট্র্যাকেরও ডিজিটাল টুইনে রেস করে সে অনুযায়ী তাদের গাড়িগুলো আসল রেসের জন্য প্রস্তুত করে থাকে। আর যুদ্ধক্ষেত্রের ডিজিটাল সংস্করণ ব্যবহার করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে সেনাবাহিনী প্রধানরা।

তবে এবার মানুষের ডিজিটাল কপি তৈরি নিয়ে চলছে গবেষণা। প্রযুক্তি বিশ্লেষক রব এন্ডারলি বলেছেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ মানুষের ডিজিটাল টুইন তৈরি করার প্রযুক্তি প্রস্তুত হবে। এতে করে কোনো ব্যক্তি চাইলে তাঁর মনের পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল কপি তৈরি করে সেই কপিকে ডিজিটাল দুনিয়ায় ছেড়ে দিতে পারবেন। ’

প্রযুক্তিটির মূল ব্যবহার হবে মেটাভার্সের মতো ভার্চুয়াল জগতে। ব্যবহারকারীরা যখন মেটাভার্সে নিজে থাকবেন না, তখন চাইলে তাঁদের অ্যাকাউন্টের কাজকর্ম তাঁদের ডিজিটাল টুইন দিয়ে চালিয়ে নিতে পারবেন। কাজের ক্ষেত্রেও একই, চাইলে নিজের কাজ ডিজিটাল টুইনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে।

সমস্যার শুরুও এখানেই। কোনো ব্যক্তির ডিজিটাল টুইনের স্বত্ব কার? মূল ব্যক্তি কি সেটির মালিক, নাকি সেটি হবে আলাদা কোনো স্বত্বা? সে ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি কি চাইলেই তাঁর ডিজিটাল কপি ব্যবহার করে একাধিক কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে পারবেন? অথবা একটি কম্পানি কি চাইলেই তাদের সেরা কর্মকর্তাদের কপি তৈরি করে চিরকাল কাজে লাগাতে পারবে? এমন নানা ধরনের প্রশ্নের সূচনা হয়েছে প্রযুক্তিটি আবিষ্কারের আগেই।

তবে পুরো দেহের ডিজিটাল টুইন তৈরি করলে সেটা মেডিক্যাল ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যাবে বলছেন চিকিৎসকরা। ভার্চুয়ালভাবে রোগীর দেহে অপারেশন চালানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের থেরাপির প্রভাব বা সময়ের সঙ্গে কী কী রোগ দেহে দেখা দিতে পারে তার সিমুলেশন—সব কিছুই ভার্চুয়ালভাবে পরীক্ষা করে তারপর সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসাটিই দেওয়া সম্ভব হবে বলছেন তাঁরা।

ডিজিটাল টুইন তৈরি করলে সেটি ব্যবহারকারীর ভার্চুয়াল সত্তা হিসেবে সাইবার দুনিয়ায়ও বাস করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে বাস্তব দুনিয়ার সব কিছু জানার জন্য ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি ডিভাইস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে সেসব ভার্চুয়াল সত্তা। সে ক্ষেত্রে তাদের আর মূল ব্যক্তির কপি নয়, বরং সরাসরি যমজ ভাই বা বোনই বলা যেতে পারে, কেননা তখন তাদের চিন্তা-ভাবনা বা ব্যক্তিত্ব মূল মানুষটির ওপর আর নির্ভর করবে না।

মেটাভার্স ভর্তি ডিজিটাল টুইন প্রচুর ডিস্টোপিয়ান সায়েন্স ফিকশনের কথাই মনে করিয়ে দেয়, বলছেন দার্শনিকরা। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় বেশ কিছু টিভি সিরিজে প্রযুক্তিটির অত্যন্ত ক্রুর ব্যবহারই দেখানো হয়েছে, বাস্তবতাও হতে পারে তেমনই। তাই প্রযুক্তিটি তৈরির আগেই তার পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক শেষ করা উচিত বলেই মনে করছেন তাঁরা।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews