আর মাত্র তিনদিন বাদেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত পোল রিপোর্ট অনুযায়ী একে অপরের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। জনপ্রিয়তার বিচারে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না কাউকেই। একদিকে আরেকবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ধারক হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন ট্রাম্প, অন্যদিকে কমলার সামনে প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। তবে, যিনিই নির্বাচিত হোন না কেন, তার ওপর শুধু মার্কিনীদেরই নয়, নির্ভর করছে গোটা বিশ্বের রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ভাগ্য। কারণ, এই একটি নির্বাচনের বিস্তর প্রভাব পড়ে বিশ্বজুড়ে।
বিশেষ করে যখন মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েলের আগ্রাসনে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিরাজ করছে অস্থিরতা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে অস্থিরতার দ্বারপ্রান্তে ইউরোপ এবং চীন-তাইওয়ান সংঘাত, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যস্ত এশিয়া, তখন এবারের মার্কিন নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল আফ্রিকার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। বাইডেন প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায়, তবে দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য হুমকি বলে মনে করেন অনেকে। কানাডা ও মেক্সিকোর ওপরও প্রভাব ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল।
ট্রাম্প নির্বাচিত হলে মার্কিন প্রশাসনের এই নীতি অনেকটাই বদলে যেতে পারে। কানাডা সঙ্গে কঠোর নীতি গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে মেক্সিকোর ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করা হবে বলেও ধারণা করা হয়।
এদিকে বর্তমানে চীনে বেড়ে চলেছে অর্থনৈতিক সংকট। বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি হ্রাস পাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ। এটাকে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য এক বড় সুযোগ হিসেবে। অন্যদিকে আবার জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা জোট শক্তিশালী করছে মার্কিন সরকার। দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য প্রতি বছর বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এই চাপ কমানোর জন্য ট্রাম্প নির্বাচিত হলে দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রতিরক্ষা খরচ বাড়ানোর চাপ দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে সামরিক সহযোগিতা জোরদার করতে পারেন কমলা। তবে দুজনেই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকি মোকাবিলায় সতর্কতার প্রতি গুরুত্ব দেবেন, এটা নিশ্চিত।
ট্রাম্প বিজয়ী হলে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হতে পারে বলে ধারণা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের। থাকবে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাও। কিন্তু কমলা হ্যারিস চাইবেন সম্পর্ক উন্নত করতে। বিশেষ করে ন্যাটোতে মার্কিন তৎপরতা কমলে পুরো ইউরোপই নিরাপত্তা সংকটে পড়বে বলে মনে করে ডেমোক্র্যাটিক শিবির।
অন্যদিকে নির্বাচনের ফলাফল ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থানকে প্রভাবিত করবে বহুলাংশে। কমলা হ্যারিস ইউক্রেনের প্রতি নিশ্চিতভাবেই সমর্থন বাড়াবেন, তবে ট্রাম্পের নীতি কী হবে তা অনিশ্চিত। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কও নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গাজা যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। ইরানকে নিয়ে ট্রাম্প ও কমলার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টতই আলাদা। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা মনে করেন, মার্কিন নেতৃত্বে যিনিই আসুন, তাকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত মুসলিম বিশ্ব। এ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়তে হতে পারে নতুন প্রেসিডেন্টকে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক গত চার বছরে অনেকটা দৃঢ় হয়েছে বটে, তবে সমঝোতার ক্ষেত্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে অগ্রগতির পরিমাণ আশানুরূপ নয়। নতুন প্রশাসনকে এই দিকে মনোযোগ দিতে হবে, সেইসঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ এশিয়াকে স্থিতিশীল করতে দুই দেশের সরকারকেই বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে বলেও মনে করেন তারা। অবশ্য কদিন আগেই ট্রাম্প স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার পরম বন্ধু নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৃহত্তর অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করবেন; যা প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও।
আরটিভি/এসএইচএম