ছবির উৎস, BBC/MUKIMUL AHSAN
ছবির ক্যাপশান,
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা (ফাইল ছবি)
১৩ মিনিট আগে
নির্বাচনে পরাজিত ঘোষণার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে ঘোষণা করেছে আদালত। একই সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।
ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর শাহাদাত হোসেন দ্রুত এই রায়ের ভিত্তিতে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
মি. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মামলার পর সাড়ে তিন বছর ধরে লড়েছি। এতদিন পর আদালত যে রায় দিয়েছে সেটি একটি ঐতিহাসিক রায়। আমি আশা করবো দ্রুত যেন এই রায়টি বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন”।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিম্ন আদালতের রায়ের পরই কি দায়িত্বে বসতে পারবেন এই বিএনপি নেতা?
জবাবে নির্বাচন কমিশন বলছে, রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ না দেখে এখনই তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
ইসি সচিব শফিউল আজিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''ইসির লিগ্যাল উইংয়ের সাথে কথা বলেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। এখন নির্বাচন কমিশন নেই। যে কারণে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না”।
মি. হোসেনকে যখন মেয়র ঘোষণা করে রায় দেয়া হয়েছে তখন এই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করলেও এখনই তিনি চেয়ারে বসতে পারবেন কী না তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ট্রাইব্যুনাল ভোটের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর রায় দিয়েছে। এখন এই রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন যদি উচ্চ আদালতে আপিল করে তখন এই সিদ্ধান্ত তো আটকে যাবে। কবে নাগাদ পূর্নাঙ্গ রায় আসবে সেটা কেউ জানে না”।
ছবির উৎস, BBC/MUKIMUL AHSAN
ছবির ক্যাপশান,
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ (ফাইল ছবি)
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২১ সালের ২১শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এই ভোটে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এই ভোটে রেজাউল করিম চৌধুরী পেয়েছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট, আর বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
ভোটের এক মাস পর ২৪শে ফেব্রুয়ারি মি. হোসেন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের ফলাফল বাতিল চেয়ে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় তিনি নির্বাচনে ফল জালিয়াতি, ইভিএম’এ কারচুপি ও ভোটের হারের নানা অসঙ্গতির অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলায় বিবাদি করা হয়েছিল রেজাউল করিম চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিবসহ আরও বেশ কয়েকজনকে।
কিন্তু এতদিন ওই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী।
ছবির উৎস, BBC/MUKIMUL AHSAN
ছবির ক্যাপশান,
ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন
গত ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ই অগাস্ট দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংসদ ভেঙে দেয়ার হয় গত ৬ই অগাস্ট।
দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৯শে অগাস্ট সারাদেশের ১২টি সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হয়। সে সব পদে বসানো হয় প্রশাসক।
তখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রামের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা ওই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবারের শুনানিতে বিবাদিদের পক্ষে আদালতে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। পরে আদালত শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন আদালত।
এতদিন পর এই রায় ঘোষণাকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি ধাপ মনে করছেন এই বিএনপি নেতা।
বিবিসি বাংলাকে শাহাদাত হোসেন বলেন, “এই মামলা করার অপারাধে আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত লড়েছি। এই রায়ের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের আইনের শাসনের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে”।
“অবিলম্বে আদালতের রায় কার্যকর করতে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই”, বলছিলেন মি. হোসেন।
ছবির উৎস, BBC/MUKIMUL AHSAN
ছবির ক্যাপশান,
সব কেন্দ্রে ভোট হয় ইভিএম পদ্ধতিতে (ফাইল ছবি)
সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ পাঁচ বছর। নির্বাচন ও শপথ নেয়ার পর এখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়াদ আছে এক বছর ৪ মাস।
মঙ্গলবার আদালত যে রায় দিয়েছে সেখানে বলেছে আগামী দশ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে হবে এই রায়ের আলোকে।
এই রায়ের পর নির্বাচন কমিশন সচিব মি. আজিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের আদেশ। পুরো রায়টা আমরা হাতে পেলে বুঝতে পারবো আমাদের লিগ্যাল বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবো। সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে কী না এখনই বলা যাচ্ছে না”।
আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে সময় থাকে ৩০দিন। এই সময় পর্যন্ত ইসি কোন গেজেট প্রকাশ করতে পারবে না। কেননা আপিলের সময় পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে অপেক্ষা করতে হবে।
অন্যদিকে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করতে নিয়ম অনুযায়ী ফুল কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিগত কমিশন পদত্যাগ করায় এ নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “একটি রায় আসলো সাড়ে তিন বছরে। এখন নির্বাচন কমিশন আপিল করার পর তার শুনানি শেষ হতে হতে যদি আরেকটি ভোট এসে গেলে তখন ওই রায় কোন কাজে লাগবে?”
এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেক্ষেত্রে রায়ের পাশাপাশি তাতে পর্যালোচনা ও পূর্ণাঙ্গ আদেশ কী আছে সেটি দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে ইসি সচিবালয়।
তবে শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ১০ দিনের মধ্যে গেজেট দিতে বলা হয়েছে। আমি চাইবো ইসি যেন আদালতের আদেশ মেনেই পদক্ষেপ নেয়।